স্বামী মারবেন, ৩০ শতাংশ নারীর কাছে এটা স্বাভাবিক

ভারতের ১৪টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৩০ শতাংশের বেশি নারী স্বামীর হাতে মার খাওয়াকে বৈধতা দেনছবি: সংগৃহীত

ভারতের ৩০ শতাংশের বেশি নারী স্বামীর হাতে মার খাওয়াকে বৈধতা দিয়ে থাকেন। এই নারীরা দেশটির ১৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের। সম্প্রতি ভারতের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভের (এনএইচএফএস) জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ভারতের গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, এনএইচএফএস-৫-এর তথ্য অনুসারে, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র প্রদেশ ও কর্ণাটকের ৭৫ শতাংশের বেশি নারী স্বামীর মারধরকে যুক্তিসংগত বলে মনে করেন। এই নারীদের হার তিন রাজ্যে যথাক্রমে ৮৪, ৮৪ ও ৭৭। এ সংখ্যা যথাক্রমে মনিপুরে ৬৬, কেরালায় ৫২, জম্মু ও কাশ্মীরে ৪৯, মহারাষ্ট্রে ৪৪ এবং পশ্চিমবঙ্গে ৪২ শতাংশ। এ ছাড়া অন্য রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোতে বড়সংখ্যক নারীই স্বামীর মারধরের পক্ষে। জরিপে নারীদের কাছে এনএইচএফএসের প্রশ্ন ছিল, ‘স্বামীর মারধরকে কি আপনি সমর্থন করেন?’

কোন কোন ক্ষেত্রে স্বামীর মারধরকে নারীরা সমর্থন করেন, এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেখানে জবাব এসেছে, স্ত্রীকে অবিশ্বাস করলে, শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে, স্বামীর মুখে মুখে কথা বললে, শারীরিক সংসর্গে সম্মত না হলে, স্বামীকে না জানিয়ে বাইরে গেলে, সংসার ও সন্তানদের প্রতি যত্নের ঘাটতি এবং রান্না ভালো না হওয়া।

জরিপে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ নারী শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে খারাপ আচরণ এবং সংসার ও সন্তানদের ঠিকঠাকভাবে দেখভাল না করাকে স্বামীর মারধরের উপযুক্ত কারণ বলে মনে করেছেন। দেশটির ১৮টি রাজ্যের মধ্যে হিমাচল প্রদেশ, কেরালা, মনিপুর, গুজরাট, নাগাল্যান্ড, গোয়া, বিহার, কর্ণাটক, আসাম, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের নারীরা ‘শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে খারাপ আচরণ’কে স্বামীর মারধরের প্রধান কারণ বলে মনে করেন।

তবে স্বামীর মারধরকে সবচেয়ে কম সমর্থন দিয়েছেন হিমাচল প্রদেশের নারীরা। তাঁদের সংখ্যা ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। পুরুষদেরও একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। কর্ণাটকে ৮১ দশমিক ৯ শতাংশ পুরুষ স্ত্রীকে মারধরের পক্ষে। তবে হিমাচল প্রদেশে এমন পুরুষের সংখ্যা ১৫ শতাংশের কম (১৪.২ শতাংশ)।

হায়দরাবাদভিত্তিক একটি বেসরকারি সংস্থা ‘রশ্নি’র পরিচালক উষাশ্রী বলেন, করোনা মহামারির সময় তাঁরা যৌন নির্যাতন ও পারিবারিক সহিংসতা অনেক বেড়ে যেতে দেখেছেন। সংস্থাটি মানসিক সমস্যা নিয়ে কাজ করে। উষাশ্রী বলেন, ‘করোনার সময় অনেক পুরুষের আয় কমেছে। এই হতাশার বহিঃপ্রকাশ নারী নির্যাতন। করোনার সময় ২৪ ঘণ্টা ঘরবন্দী হয়ে থাকার ফলে পরিবারের লোকজনের মধ্যে ঝগড়াবিবাদ বেড়ে গেছে। আমরা এ সময় ফোনে অসংখ্য অভিযোগ পেয়েছি।’

এদিকে তেলেঙ্গানার রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় নারীদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নে অনেকগুলো প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সাক্ষী ওয়ান–স্টপ সেন্টার, ওমেন হেল্পলাইন-১৮১, সোয়াধার গ্রেহ ও উজালা হোমস, স্কিম ফর অ্যাডোলিসেন্ট গার্লস (এসএজি), মহিলা শক্তি কেন্দ্র। এরপরও এই রাজ্যে ৮৪ শতাংশ নারী স্বামীর মারধরের পক্ষে।

অক্সফাম ইন্ডিয়ার জেন্ডার জাস্টিস–বিষয়ক প্রধান বিশেষজ্ঞ অমিতা পিতরে বলেন, সংস্থাটি পাঁচটি রাজ্যে কাজ করে। তারা দেখেছে, সমাজে নারী-পুরুষের মধ্য বিরাজমান যে বৈষম্য, তা নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতাকে সমর্থন জোগায়।
পিতৃতান্ত্রিক এই সমাজে মেয়েদের কড়া শাসনের মধ্যে রেখে সমাজের তথাকথিত নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করা হয়। একসময় এসব নিয়ম এই নারীদের মননে-মস্তিষ্কে ঢুকে যায়। এসব কারণে নারী স্বামীর মারধরকে যথোপযুক্ত বলে মনে করেন। নারী যদি ঘরদোর বা সন্তানের দেখভালে গাফিলতি করেন, তিনি যদি শারীরিক সংসর্গে রাজি না হন, তিনি যদি ভালো করে রান্না না করেন—এগুলো নির্ধারণ করে দেয় সমাজে নারীকে কীভাবে চলতে হবে, তাঁর দায়িত্ব কী হবে। নারীর প্রতি লিঙ্গভিত্তিক এ সহিংসতা বন্ধ করতে হলে নারীদের এ ধরনের চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।