৮০০ বছর পর নালন্দায় ক্লাস শুরু

৮০০ বছর আগের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসস্তূপ। ছবি: সংগৃহীত
৮০০ বছর আগের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসস্তূপ। ছবি: সংগৃহীত

আটশ বছরেরও বেশি সময় পর আবারও শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হলো ভারতের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বিহার রাজ্যের রাজধানী পাটনা থেকে ১০০ কিলোমিটার দুরের একটি কনফারেন্স সেন্টারে আজ সোমবার থেকে প্রাচীন এই বিদ্যাপিঠের ক্লাস শুরু হয়েছে। ১৫ জন শিক্ষার্থী ও ১১ জন শিক্ষককে নিয়ে যাত্রা শুরু হলো বিশ্বের প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টির।

এক হাজারের বেশি আবেদনকারীর মধ্যে থেকে মাত্র ১৫ শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হয়। তাঁরা ইতিহাস বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিজ্ঞান এই দুই বিষয়ে আপাতত পড়াশোনা করবেন।

তিন বছর পরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে পাটনার রাজগীরে। ৮০০ বছর আগে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেখান থেকে রাজগীরের দুরত্ব মাত্র ১২ কিলোমিটার।

৪১৩ খ্রীস্টপূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চলেছে। পুরো এশিয়াতেই এককালে সুপরিচিত ছিল এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু দ্বাদশ শতাব্দীতে তুর্কী সেনাবাহিনীর আক্রমণে এটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
নালন্দার নতুন উপাচার্য গোপা সাবরওয়াল বলছিলেন, ‘আসলে একটা শিক্ষামূলক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে গবেষণামূলক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ধরনটাই আলাদা হয়। নালন্দা একটা গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়, এখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটাই সম্পূর্ণ আলাদা।’

তবে ছোটখাটো নানা সমস্যা সত্ত্বেও শত শত বছর বাদে এই বিশ্ববিদ্যালয়টা যে আবার চালু করা যাচ্ছে, সেটাই বিরাট অর্জন হিসেবে দেখছেন নালন্দার পরিচালকরা। পরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। পুরো আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তৈরি হবে ২০২০ সালে।

নালন্দার পুর্নজন্ম

পাটনা থেকে ১০০ কিলোমিটার দুরের এই কনফারেন্স সেন্টারেই  বিশ্বের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হলো আবার। ছবি: সংগৃহীত
পাটনা থেকে ১০০ কিলোমিটার দুরের এই কনফারেন্স সেন্টারেই বিশ্বের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হলো আবার। ছবি: সংগৃহীত

বিবিসি জানায়, বিশ্বের প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় এটি, আর ইতালির বোলোনিয়াতে যখন ইউরোপের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, নালন্দার বয়স তখন সাড়ে ছশো বছর।
কিন্তু গত আটশো বছরেরও বেশি সময় ধরে নালন্দা ছিল শুধুই ধ্বংসস্তূপ। ২০০৬ সালে নালন্দাকে আবার পুনর্জন্ম দেওয়ার প্রস্তাব তুলে ধরেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম। এর চার বছর পর ভারতীয় পার্লামেন্টে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস হয়। ওই বিলে প্রস্তাব রাখা হয়েছিল নতুন আকারে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তাতে পড়ানো হবে ভাষাতত্ত্ব, ইতিহাস, পররাষ্ট্রনীতি, পরিবেশবিদ্যা বা বৌদ্ধ দর্শনের মত নির্বাচিত কয়েকটি বিষয়। প্রতিটি বিষয়ে মাত্র ২০জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে।
২০০৬ সালে পুণরায় নালন্দা বিশ্ববিদালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালাম।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় যাতে প্রথম থেকেই একটি জ্ঞানচর্চার পীঠস্থান হয়ে উঠতে পারে, তার জন্য দেশ-বিদেশের পন্ডিতদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় ‘নালন্দা মেন্টর গ্রুপ’। এই গ্রুপের নেতৃত্ব দেন অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।