বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন যেসব রাষ্ট্রনায়ক

বিমান দুর্ঘটনাপ্রতীকী ছবি

যেকোনো দুর্ঘটনাই মর্মান্তিক। কিন্তু কোনো বিশ্বনেতার বিমান বা হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যু সংশ্লিষ্ট দেশ তো বটেই, সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। নিহত নেতার স্থান পূরণ করবেন কে, দেশের ভবিষ্যৎ কোন পথে, এমন নানা বিষয় আলোচনায় আসে।

গত রোববার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ বেশ কিছু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিহত হন। শুধু তাঁরা নন, বিমান ও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় অতীতে আরও অনেক রাষ্ট্রনায়ক নিহত হয়েছেন।

আরভিড লিন্ডম্যান

স্যালোমন আরভিড আচেটস লিন্ডম্যান একজন সুইডিশ রিয়ার অ্যাডমিরাল ও দুইবারের প্রধানমন্ত্রী। প্রভাবশালী রক্ষণশীল এই রাজনীতিবিদ ১৯৩৬ সালের ৯ ডিসেম্বর এক বিমান দুর্ঘটনায় যুক্তরাজ্যের ক্রয়ডন বিমানবন্দরে নিহত হন। উড্ডয়নের অল্প সময় পরই তাঁকে বহনকারী উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল ঘন কুয়াশা।

র‍্যামন ম্যাগসাইসাই

ফিলিপাইনের সপ্তম প্রেসিডেন্ট র‍্যামন ম্যাগসাইসাই ১৯৫৭ সালের ১৭ মার্চ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। এদিন ২৫ যাত্রী নিয়ে তাঁকে বহনকারী উড়োজাহাজটি দেশটির শেবু শহরের মাউন্ট মানুংগালে বিধ্বস্ত হয়। একজন ছাড়া বাকি সব আরোহী নিহত হন। ম্যাগসাইসাই দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কারণে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর স্মরণে র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার দেওয়া হয়।

নেরেউ রামোস

নেরেউ রামোস অল্প সময়ের জন্য ব্রাজিলের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৫৮ সালের ১৬ জুন দেশটির পারানা রাজ্যের কুরিতিবা আফোনসো পেনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে তাঁকে বহনকারী উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়।

আবদুল সালাম আরিফ

ইরাকের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট আবদুল সালাম আরিফ। ১৯৬৬ সালের ১৩ এপ্রিল বসরা শহরের অদূরে তাঁকে বহনকারী বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হলে তিনি নিহত হন। ১৯৫৮ সালে দেশটির রাজতন্ত্র উচ্ছেদের বিপ্লবে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

ক্যাস্তেলো ব্র্যাঙ্কো

ব্রাজিলের ২৬তম প্রেসিডেন্ট হামবের্তু দে এলেন্সার ক্যাস্তেলো ব্র্যাঙ্কো ১৯৬৭ সালের ১৮ জুলাই মাঝ–আকাশে দুই উড়োজাহাজের সংঘর্ষে নিহত হন। সাবেক এই সামরিক শাসকের মৃত্যুর ঘটনা কেবল দুর্ঘটনা নাকি ষড়যন্ত্র, তা নিয়ে মতবিরোধ আছে।

লিওন এমবা

আফ্রিকার দেশ গ্যাবনের প্রথম প্রেসিডেন্ট লিওন এমবা ১৯৬৭ সালের ২৮ নভেম্বর বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। কেন্দ্রীয় আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূলে তাঁকে বহনকারী উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়।

সামোরা মাচেল

আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট সামোরা মাচেল ১৯৮৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা সীমান্তে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাঁর মৃত্যুর জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে দায়ী করে মোজাম্বিক।

রশিদ কারামি

লেবাননের সবচেয়ে বেশিবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী রশিদ কারামি ১৯৮৭ সালের ১ জুন হেলিকপ্টারে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন। বৈরুতে যাওয়ার পথে তাঁর হেলিকপ্টারে একটি বোমা বিস্ফোরণ হয়। এতে তিনিসহ অন্য আরোহীরা নিহত হন। লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় কারামি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছিলেন।

জিয়া-উল-হক

পাকিস্তানের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট জেনারেল মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক ১৯৮৮ সালের ১৭ আগস্ট সামরিক বাহিনীর এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত বিমানটি বাহাওয়ালপুর থেকে উড্ডয়নের অল্প সময়ের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়। এই বিমান দুর্ঘটনার রহস্য এখনো সুরাহা হয়নি। যান্ত্রিক ক্রটিকে কারণ বলা হলেও এ দুর্ঘটনা নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বেশ জনপ্রিয়।

হাফিজ আল-আসাদ

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল-আসাদ দামেস্কের কাছে ২০০০ সালে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন। রহস্যজনক এক পরিস্থিতিতে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। তবে আসাদ নিজে বিমান চালনার সময় হৃদ্‌যন্ত্রের অসুস্থতায় মারা গেছেন বলে সরকারি ভাষ্যে জানানো হয়েছিল।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস ও ফার্স্টপোস্ট