একা একা ভ্রমণ নতুন করে জনপ্রিয় হচ্ছে। এটা ভিন্ন একধরনের ভ্রমণ–অভিজ্ঞতা। কিন্তু বিশ্বের সব দেশের সব জায়গা একা ভ্রমণের জন্য নিরাপদ নয়। তবে এমন কিছু জায়গা রয়েছে, যা নিরাপত্তা, সৃজনশীল পরিবেশ ও স্বাচ্ছন্দ্যের কারণে একা ভ্রমণের জন্য সুপরিচিত। বিশ্বের এমন ১০টি স্থান একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
স্লোভেনিয়ার জুলিয়ান আল্পস শান্ত ও মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। পাহাড়ি সরু পথগুলো কেবল পর্বতারোহীদের জন্য নয়, সাধারণ পর্যটককেও আকর্ষণ করে। হাইকিং ও সাইক্লিংয়ের জন্য এখানে অসংখ্য রাস্তা আছে, যা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়।
ছোট গ্রামগুলোয় স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা চমৎকার, যা একা ভ্রমণকারীদের চমৎকার অভিজ্ঞা দেয়। বরফঢাকা পাহাড়, ঝরনা ও সবুজ উপত্যকার সংমিশ্রণ একধরনের মানসিক প্রশান্তিও দেয়। এখানকার শীতকালীন ভূপ্রাকৃতিক দৃশ্য ও তুষারাবৃত সরু পথের ছবি তোলার হাতছানি উপেক্ষা কারা প্রায় অসম্ভব।
দক্ষিণ আমেরিকার ছোট এই দেশ আন্দিস পর্বতমালার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। হাইকিংপ্রেমীদের জন্য এখানে অসংখ্য পথ আছে, বিশেষ করে কোটোপাক্সি জাতীয় উদ্যান ও আমাজন উপত্যকার ভ্রমণকারীদের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্য।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার এবং তাঁদের সংস্কৃতি একা ভ্রমণকারীদের জন্য বেশ অনুকূল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চ পাহাড় পর্যন্ত বৈচিত্র্যময় ল্যান্ডস্কেপ একা অভিযাত্রীদের জন্য আকর্ষণীয়। এ ছাড়া কুইটো ও গুয়ায়াকুইল শহরের নিরাপত্তা, পরিষ্কার রাস্তাঘাট ও পর্যটক–সহায়ক পরিবেশ একা ভ্রমণকারীদের জন্য সুবিধাজনক।
টোকিও বিশ্বের নিরাপদতম বড় বড় শহরে অন্যতম। গণপরিবহন অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য। বেশির ভাগ মানুষ ইংরেজি ভাষা বোঝেন, তাই বিদেশিদের জন্য পথ চলাচল সহজ। একা ভ্রমণকারী এখানে শিনজুকু, শিবুয়া ও আসাকুসার মতো বিখ্যাত এলাকা অনায়াসে ঘুরে বেড়াতে পারেন।
টোকিও নগরের কফি শপ, মিউজিয়াম ও পার্ক একা সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত। জাপানে তৈরি অ্যানিমেটেড ছবি বা সিরিজ ‘অ্যানিমে’ ও স্থানীয় খাবারের বৈচিত্র্য একা ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে।
জেনেভা রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হলেও শহরটি একা ভ্রমণকারীদের কাছে খুব জনপ্রিয়। সাংস্কৃতিকভাবে অত্যন্ত সমৃদ্ধ এ শহরে জাদুঘর, আর্ট গ্যালারি ও লেক লিমাট পার্ক ভ্রমণকারীরা অনায়াসে ঘুরে দেখতে পারেন। শহরের শান্তিপূর্ণ রাস্তা এবং কম ভিড়ের পরিবেশ একা ভ্রমণকারীদের স্বাচ্ছন্দ্য দেয়।
কফি শপে বসে আল্পসের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখা যায়। জেনেভা বহুসংস্কৃতির শহর। এখানকার রাস্তাঘাট, গণপরিবহন বা রেস্তোরাঁয় বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার মানুষদের সহজে চোখে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে ফরাসি ও ইংরেজির পাশাপাশি জার্মান ভাষাও কথা বলতে পারেন।
মাউন ওকাভাঙ্গো ডেল্টার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের দেশ বতসোয়ানার শহর মাউন শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশের জন্য একা ভ্রমণকারীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়। আফ্রিকার অন্যান্য পর্যটন শহরের তুলনায় এখানে সাফারি পার্কের ভিড় কম।
ছোট্ট শহরটিতে বড় ধরনের অপরাধের তেমন কোনো নজির নেই। একা নারী ভ্রমণকারীদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। কম খরচে এখানে নৌকাভ্রমণ ও নৈসর্গিক পরিবেশ উপভোগ করা যায়। ছোট শহর হওয়ায় স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মিশে লোকজ সংস্কৃতি ও জীবনধারার অভিজ্ঞতা নেওয়া সহজ।
আবুধাবি আধুনিক, সুসংগঠিত ও নিরাপদ শহর হিসেবে সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। একা পর্যটকেরা এখানে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াতে পারেন। পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী এ শহর থেকে দেশটির শারজাহ, আল–আয়েনসহ কাছাকাছি স্থানে ঝামেলা ছাড়া ঘুরে আসা যায়।
গ্র্যান্ড মসজিদ, আধুনিক আর্ট ও সংস্কৃতি জাদুঘর ল্যুভর ও মরুভূমির অভিজ্ঞতা একা ভ্রমণকারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় করেছে আবুধাবিকে। শহরের গণপরিবহন ও ট্যাক্সি পরিষেবা নির্ভরযোগ্য। একা নারী পর্যটকদের জন্যও শহরটি নিরাপদ। তবে শহরটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল।
পর্তুগালের লিসবন হেঁটে ঘুরে দেখার জন্য চমৎকার। গোছানো শহর, সুন্দর রাস্তাঘাট ও স্থানীয় মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের কারণে একা ভ্রমণ করা নিরাপদ। ঐতিহ্যবাহী খাবার, কফি শপ ও পুরোনো স্থাপত্য ভ্রমণকারীদের দারুণ অভিজ্ঞা দেয়।
এই নগরে গণপরিবহনের কয়েকটি মাধ্যম আছে। তাই ইচ্ছা ও প্রয়োজনমতো ঘোরা যায়। বেলম টাওয়ার, জেরোনিমোস মোনাস্ট্রি এবং আলফামা অঞ্চলের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য একা ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে।
ভারতের হিমাচল প্রদেশের স্পিতি উপত্যকা হিমালয়ের নাটকীয় দৃশ্যের জন্য পরিচিত। একা ভ্রমণকারীরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও শান্তির মধ্যে হারিয়ে যেতে পারেন।
লেহ-মানালির রাস্তা দিয়ে স্পিতিতে পৌঁছানো যায়। ঠান্ডা মরুভূমির আবহাওয়া, মনোহর ভূপ্রাকৃতি দৃশ্য ও বিহারসমৃদ্ধ গ্রামের জীবনধারা পর্যটকের সহজে মন জয় করে। স্থানীয় লোকজন অতিথিপরায়ণ।
মধ্য আমেরিকার দেশ কোস্টারিকার সৈকত, জঙ্গল ও বন্য প্রাণী পর্যটকদের মনে ভ্রমণের প্রলোভন জাগায়। একা নারী ভ্রমণকারীদের জন্যও নিরাপদ।
মধ্য আমেরিকার এই দেশে সার্ফিং, হাইকিং ও বন্য প্রাণী পর্যবেক্ষণ জনপ্রিয়। স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা ও কম ভিড়ের পরিবেশ একা ভ্রমণকারীর জন্য সুবিধাজনক। তাপমাত্রা, স্থানীয় খাবার ও পরিবেশ একা ভ্রমণকারীদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করে।
প্রাগের ঐতিহাসিক স্থাপনা, চওড়া রাস্তাঘাট ও গণপরিবহন একা ভ্রমণকারীর জন্য সহায়ক। চারপাশের স্থাপত্য ও ক্যাফে একা ভ্রমণকারীদের জন্য একধরনের আরামদায়ক আবহ তৈরি করে।
প্রাগ ক্যাসল, চার্লস ব্রিজ ও ওল্ড টাউন স্কয়ার একা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। শহরের নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো।
তথ্যসূত্র: ভারতের সংবাদমাধ্যম মিন্ট অবলম্বনে