২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ম্যান্ডেলার লড়াইকে কি পূর্ণতা দিতে পারবে ফিলিস্তিনিরা

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা প্রয়াত নেলসন ম্যান্ডেলা স্বাধিকার আন্দোলনের লড়াইয়ে সব সময় ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দিয়ে গেছেন। ইসরায়েলের অস্তিত্বকে তিনি অস্বীকার করেননি। কিন্তু আবার তাদের আরব ভূখণ্ড দখলের বিরোধিতা করেছেন। ফিলিস্তিনের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ৫ ডিসেম্বর আল–জাজিরায় লিখেছেন নিক ডাল। তিনি লিজেন্ডস: পিপল হু চেঞ্জড সাউথ আফ্রিকা ফর দ্য বেটার বইয়ের সহলেখক।

১৯৯০ সালে জাম্বিয়ার লুসাকা বিমানবন্দরে নেলসন ম্যান্ডেলাকে এভাবে আলিঙ্গন করেন ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলনের নেতা প্রয়াত ইয়াসির আরাফাতফাইল ছবি: রয়টার্স

১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার কারাগার থেকে মুক্তির ১৬ দিন পর নেলসন ম্যান্ডেলা জাম্বিয়ার রাজধানী লুসাকায় যান। তখন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) নির্বাসিত নেতৃত্ব সেখানে ছিলেন। জাম্বিয়ার কেনেথ কাউয়ান্দা থেকে জিম্বাবুয়ের রবার্ট মুগাবে—এএনসির প্রতি সহানুভূতিশীল নেতারা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতাকে বিমানবন্দরে অভিবাদন জানান, করমর্দন করেন।

কিন্তু এসব বরেণ্য নেতার ভিড়ে সবচেয়ে আবেগময় দৃশ্য ছিল, যখন কেফিয়াহ পরা ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলনের (পিএলও) নেতা ইয়াসির আরাফাত তাঁকে আলিঙ্গন করলেন। ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি লম্বা ম্যান্ডেলা মুখটা তাঁর দিকে নিচু করে দিলেন। তাঁর গালে চুমু খেলেন আরাফাত।

আরাফাতের এই ভালোবাসার জবাব দিতে দেরি করেননি ম্যান্ডেলা। তিন মাস পর আলজিয়ার্সে এক সম্মেলনে ফিলিস্তিনের বিখ্যাত কেফিয়াহ পরে হাজির হয়েছিলেন তিনি। তখন এটা ঠিক পরিষ্কার ছিল না, তিনি এটি কোথায় পেয়েছিলেন? অথবা ওই দিন কেন তিনি এটি পরলেন? ম্যান্ডেলা এমনি এমনি এটি পরবেন, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। কারণ, পোশাক পরিধানের ব্যাপারে তিনি খুব সচেতন ছিলেন।

ম্যান্ডেলার ঘোস্টরাইটার (নেপথ্যলেখক) রিচার্ড স্টেনজেল বলেছিলেন, ‘ম্যান্ডেলা তাঁর ভাবমূর্তির বিষয়ে সব সময় সচেতন ছিলেন। বোধশক্তির দিক থেকে সহকর্মী ও শত্রুদের চেয়ে তিনি অনেক বেশি আধুনিক ছিলেন।’

১৯৬২ সালে ম্যান্ডেলা অবৈধভাবে দেশত্যাগের মামলায় স্মার্ট শুট, ঝকঝকে জুতা, দৃষ্টিনন্দন নেকলেস এবং বাহুতে ব্রেসলেট পরে আদালতে হাজির হয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী উইনিও ঐতিহ্যবাহী জোশা পোশাক পরে তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন। ম্যান্ডেলা জানতেন, তিনি কী করছেন।

গণতান্ত্রিকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৫ সালে ম্যান্ডেলা স্প্রিংবক রাগবি জার্সি পরেন। অনেকের কাছে এটি বর্ণবাদবিরোধী প্রতীক। রাগবি বিশ্বকাপে শ্বেতাঙ্গ তুখোড় খেলোয়াড় ফ্রানকয়েস পিয়েনারের জন্যই তিনি ওই পোশাক পরেছিলেন। কারণ, তিনি দেশ থেকে সব বিভক্তি–বৈষম্য দূর করতে চেয়েছেন।

ম্যান্ডেলা ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক অনুভব করতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ১৯৯৭ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘এএনসির সংগ্রাম চলছে। আমরা এ–ও ভালো করে জানি, ফিলিস্তিনের মানুষের স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের স্বাধীনতাও অসম্পন্ন রয়ে যাবে।’

২০০৪ সালে আরাফাতের মৃত্যুর পর পিএলওর নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘সত্যিকার অর্থে তিনি ছিলেন আইকন। তিনি শুধু আরব জনগণের মুক্তি নিয়ে চিন্তা করতেন না, বরং বিশ্বের নিপীড়িত সব মানুষের জন্য তাঁর চিন্তা ছিল। যাঁরা নিপীড়িত মানুষের জন্য সংগ্রাম করছেন, তাঁর মতো মানুষকে হারানো তাঁদের জন্য বিরাট ক্ষতি।’

২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ম্যান্ডেলার মৃত্যুর তিন বছর পর ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের রামাল্লায় তাঁর বিশাল ভাস্কর্য বানিয়ে ফিলিস্তিনের জনগণও তাঁর প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছে।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর ইহুদি রাষ্ট্রটি যেভাবে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করেছে, তখনো দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি ম্যান্ডেলার মতো সেই উষ্ণ ভালোবাসা দেখিয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েছিলেন। কিন্তু ইসরায়েল যখন গাজায় নির্বিচার বোমা মেরে নিরীহ মানুষকে হত্যা শুরু করে, তখন তিনি কালো–সাদা কেফিয়াহ পরে আর ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে ক্যামেরার সামনে হাজির হন।

রামাফোসা বলেন, ‘তারা (ফিলিস্তিনি জনগণ) ৭৫ বছর ধরে দখলদারত্বের মধ্যে আছে।...তারা এমন এক নিপীড়ক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, যারা তাদের ভূমি দখল করে আছে।’

বন্ধনের জন্ম যেভাবে

ঐতিহাসিক থুলা সিম্পসন বলেন, নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯৬৩ সালে তাঁর কারাজীবনের আগে ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রামের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন—এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। মূলত তিনি যখন এএনসির সামরিক শাখা উমখোন্তো উই সিজওয়ে (এমকে) গড়ে তোলেন, তখন তাঁর প্রেরণা ছিল ইসরায়েল।

আর্থার গোল্ডরিচ হচ্ছেন এএনসির গুটিকয় নেতার একজন, যাঁর যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেমনটা ম্যান্ডেলা তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘১৯৪০–এর দশকে আর্থার জুইশ ন্যাশনাল মুভমেন্টের সামরিক শাখা পালমাচের হয়ে ফিলিস্তিনে যুদ্ধ করেছেন। গেরিলা লড়াইয়ে তাঁর বেশ জ্ঞান ছিল। তাঁর কাছ থেকে আমি অনেক শিখেছি।’

পল এস ল্যান্ডাউ তাঁর সাম্প্রতিক বই স্পিয়ার: ম্যান্ডেলা অ্যান্ড দ্য রেভল্যুশনারিজ–এ লিখেছেন, ম্যান্ডেলা যখন এমকের সঙ্গে বসতেন, তখন তিনি ফিলিস্তিনের আরেক জায়নবাদী আধা সামরিক বাহিনী মেনাচেম বেগিনসের দ্য রিভোল্ট স্টোরি অব দ্য ইরগুন পড়তেন।

ল্যান্ডাউ লিখেছেন, ইরগুন এমনকি পালমাচের চেয়ে অনেক বেশি উগ্র ছিল। ম্যান্ডেলার হাতে লেখা নোট থেকে দেখা যায়, তিনি ইরগুনের রণকৌশলে প্রভাবিত হতেন।

ল্যান্ডাউ আরও লিখেছেন, ইরগুন ম্যান্ডেলাকে রাষ্ট্রবিরোধী (ব্রিটিশবিরোধী) গেরিলা মডেল দিয়েছিল। ইরগুনের ধ্যানধারণা থেকে তিনি গেরিলাযুদ্ধে ‘দীর্ঘ লড়াইয়ের’ চিন্তাভাবনা করেন।

সিম্পসন বলেন, কোন কোন দেশ, আফ্রো–এশিয়ার কারা এএনসির প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা দিচ্ছে, ২৭ বছরের কারাভোগের সময় ম্যান্ডেলা সেটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন। পিএলওর সংগ্রাম তখন তাঁকে নাড়া দিয়েছিল। কিন্তু তখন আফ্রিকার পরিস্থিতির কারণে ফিলিস্তিনে কী ঘটছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ ছিল খুব কম।

১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তির পর ম্যান্ডেলা এএনসির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাড়ানোর দিকে মন দেন। তখন তিনি তাঁর বিদেশনীতি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার চার বছর আগে ১৯৯০ সালের জুনে তাঁকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ আমন্ত্রণ জানান। সেখানে ফিদেল কাস্ত্রো, মুয়াম্মার গাদ্দাফি ও ইয়াসির আরাফাতকে সমর্থনের কারণে তিনি প্রশ্নের মুখে পড়েন।

কোনো ইতস্তত না করে ম্যান্ডেলা জবাব দিয়েছিলেন, ‘কিছু কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক একটা বড় ভুল চিন্তা করেন যে তাঁদের শত্রুরা আমাদেরও শত্রু হওয়া উচিত।’

আমেরিকান জুইশ কংগ্রেসের হেনরি সিগম্যানের এক প্রশ্নের জবাবে ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘নিজেদের মুক্তিসংগ্রামে এএনসি এতটাই জড়িত ছিল যে অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় দেখার সময় আমাদের ছিল না।’ ইয়াসির আরাফাত এবং পিএলও নিয়ে যখন কথা উঠল, তখন তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন, ‘আমরা পিএলওকে স্বীকৃতি দিই। কারণ, আমাদের মতো তারাও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।’

ম্যান্ডেলা আরও বলেছিলেন, ‘ইয়াসির আরাফাতের সংগ্রামের প্রতি সমর্থনের অর্থ এই নয় যে এএনসি বৈধভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বের অধিকার নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে। আমরা নিরাপদ সীমান্তের মধ্যে রাষ্ট্রের অস্তিত্বের অধিকারের প্রতি খোলাখুলি এবং দৃঢ় সমর্থন জানাই। আবার আমরা এটাও বোঝাচ্ছি না যে আরব বিশ্ব, বিশেষ করে গাজা উপত্যকা, গোলান মালভূমি ও পশ্চিম তীর থেকে ইসরায়েল যে ভূমি দখল করেছে, সেটা তারা দখল করে রাখবে। আমরা এটার সঙ্গে একমত নই। দখল করা ওই সব ভূমি আরব জনগণকে ফেরত দিতে হবে।’

ঐতিহাসিক ম্যাথিউ গ্রাহাম বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিদেশনীতি হচ্ছে এএনসির ইতিহাস থেকে নেওয়া। তাঁদের মূল সমর্থন ছিলে পূর্বাঞ্চলীয় ব্লকের। বর্ণবাদ–উত্তর যুগে এএনসি এই ব্লকের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও ঘনিষ্ঠ করেছে।

উদাহরণ দিতে গিয়ে গ্রাহাম বলেন, ১৯৯৪ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যান্ডেলার অভিষেক অনুষ্ঠানে আরাফাত ও কাস্ত্রোকে তৎকালীন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর ও ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটন থেকে দূরে বসতে দেখা যায়। তখন ওয়াশিংটন পিএলও এবং কিউবার কমিউনিস্ট সরকারকে তাদের বিরোধী ব্লকের ভাবত।

গ্রাহাম বলেন, ৩০ বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার শাসনক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও এএনসি এখনো নিজেদের মুক্তি আন্দোলনের শক্তি হিসেবে দেখে থাকে। তারা ভাবে, তাদের আন্দোলন অসম্পন্ন রয়ে গেছে। তিনি বলেন, তারা দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটছে। দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতিকে মজবুত রাখতে তাদের পশ্চিমা সহায়তা দরকার। আবার তারা উগ্র মুক্তি আন্দোলনের পক্ষে কথা বলে। এতে বোঝা যায়, তাদের ইতিহাস মেনে তারা ‘সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে।’

ইসরায়েল ফ্যাক্টর

এএনসির সঙ্গে ফিলিস্তিনের সম্পর্ক অবশ্য তাদের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক গড়তে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।

সাশা পোলাকাউ–সুরানস্কি লিখেছেন, ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে ইসরায়েলি নেতারা আদর্শিকভাবে বর্ণবাদবিরোধী অবস্থানে ছিল। ১৯৬৩ সালে গোল্ডা মিয়ার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বলেছিলেন, ইসরায়েলিরা সাধারণত বর্ণবাদী নীতি, উপনিবেশবাদ, বর্ণবাদ ও ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে সেটা যেখানেই থাকুক না কেন।

তবে অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর। মাত্র ছয় দিনের যুদ্ধে তারা প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর বিশাল ভূখণ্ড দখল করে নেয়। তাদের দেশের আয়তন ছয় দিন আগের তুলনায় তিন গুণ বেড়ে যায়।

পোলাকাউ–সুরানস্কি লেখেন, ওই যুদ্ধের পর নতুন করে দখল করা পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকাজুড়ে বসতি স্থাপন প্রকল্প চালু করা হয়। এরপর থেকেই ইসরায়েল দখলদারত্ব আর ঔপনিবেশিক মনমানসিকতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

১৯৭৩ সালে মিসর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে হয়তো ইয়ম কিপুর যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েল এই যুদ্ধে লড়াইয়ে ফিরে এসে আরও আরব ভূখণ্ড দখল করে নিপীড়ক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে হাজির হয়।

পোলাকাউ–সুরানস্কি লেখেন, ইয়ম কিপুর যুদ্ধের পর মাত্র কয়েকটি আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এর কিছুটা সময় আগে ইসরায়েল আর্জেন্টিনার কুখ্যাত সামরিক একনায়ক, চিলির পিনোশে এবং বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়।

১৯৯৩ সালে ম্যান্ডেলা বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারের সঙ্গে ইসরায়েলের সহযোগিতার সম্পর্কে এএনসি ‘চরম হতাশ’। এএনসির জ্যেষ্ঠ নেতারা ভুলে যাননি, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার তাঁদের নেতা–কর্মীদের হত্যা করতে ইসরায়েল থেকে অস্ত্র কিনেছিল। এমনও জানা যায়, ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারকে পারমাণবিক ওয়ারহেড দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিল।

সহিংসতা নয়, শান্তি

উপনিবেশ ও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে নৃশংসভাবে ব্যবহার করেছিল।

এরপরও এএনসি তাদের অহিংস নীতিতে অটল ছিল। ১৯৫০–এর দশকে বর্ণবাদী সরকার যখন বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল, তখনো এএনসি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভে বিশ্বাসী ছিল।

১৯৬১ সালে শারপিভিলে ৬৯ জন নিরীহ কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে হত্যার পর ম্যান্ডেলা নিজেই এএনসিকে তাদের অহিংস নীতি বাদ দেওয়ার আহ্বান জানান। এ জন্য অনেক দেনদরবার করতে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত দলের নেতৃত্ব সামরিক শাখা এমকে গঠনে সম্মত হন।

১৯৯৯ সালে ম্যান্ডেলার ফিলিস্তিন সফরের সময় তাঁর কিছু মন্তব্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘যুদ্ধের বদলে শান্তিকে বেছে নিন। কেবল আমরা যখন আর পারি না, আমরা যখন আর এগোতে পারি না অথবা আমরা যখন আর সামনে এগিয়ে যেতে পারি না, তখন একমাত্র বিকল্প হচ্ছে সহিংসতা, আমরা তখন সহিংসতার ব্যবহার করব।’

এই সহিংসতা এমন একটি বিকল্প, যা ম্যান্ডেলা খুব কম ব্যবহার করেছেন। ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে এমকে কেবল রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো এবং সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল।

ম্যান্ডেলার পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার এক দশক পর ইসরায়েল গাজায় নির্বিচার বোমা মেরে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করছে। ছয় হাজারের বেশি শিশুসহ ১৭ হাজার ১৭৭ ফিলিস্তিনি ইতিমধ্যে নিহত হয়েছেন। নিশ্চিতভাবে ম্যান্ডেলা এ পরিস্থিতিতে চরমভাবে ব্যথিত হতেন। ১৯৯৯ সালের গাজা সফরের সময় যেমনটা তিনি বলেছিলেন, তাঁর মনে হচ্ছে, তিনি নিজ দেশের মানুষের সঙ্গেই আছেন।