ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায় ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে কমে রোগবালাই। এ কথা বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই বলে আসছেন। এবার সেই তথ্য আরও প্রতিষ্ঠিত হলো। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অন্তত ৩৫ শতাংশ কমে। ডিমেনশিয়া হলো একধরনের স্নায়বিক সমস্যা, যাতে মানুষের স্মৃতিশক্তি, চিন্তাশক্তি ও কাজকর্ম করার ক্ষমতা ক্রমেই কমে আসে।
গতকাল সোমবার বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচার-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষণায় ৫ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষের জীবনযাপন ৩৪ বছর ধরে অনুসরণ করা হয়েছে। এ থেকে জানা গেছে ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাসের সুফল।
ভূমধ্যসাগর ঘিরে থাকা এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কিছু দেশ মিলে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল। এ অঞ্চলের মানুষ মদ্যপান করেন কম। খান অল্প লাল মাংস। খাবারের তালিকায় বেশি থাকে সবজি, ফল, বাদাম, শস্য, মাছ ও অলিভ অয়েল।
গবেষণাকাজে অংশ নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে অবস্থিত ব্রিগহ্যাম অ্যান্ড ওমেন্স হাসপাতাল এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষক ইউজি লিউ। তিনি বলেন, মানুষের শরীরে আলঝেইমারের ঝুঁকি সৃষ্টিকারী অন্যতম দুটি এপিওই৪ জিন থাকলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তবে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাসে এমন জিন থাকা মানুষের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এ খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে ঝুঁকি আরও কমতে পারে।
এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন এই গবেষক। তিনি বলেন, শরীরের পরিপাক-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো খাবারের বিভিন্ন ভিটামিন, এনজাইম, অ্যামিনো অ্যাসিড, শর্করা ও স্নেহজাতীয় উপাদানের ওপর নির্ভর করে। যাঁদের শরীরে দুটি এপিওই-৪ জিন রয়েছে, তাঁদের পরিপাকপ্রক্রিয়া ভিন্ন ধরনের হয়। ভূমধ্যসাগরীয় খাবারের স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদানগুলো এমন ব্যক্তিদের শরীরে তা নাটকীয়ভাবে সাড়া দেয়।
নতুন এ গবেষণা পুরোনো অনেক ধারণা বদলে দেবে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ইনস্টিটিউট ফর নিউরোডিজেনেরেটিভ ডিজিজের গবেষণা বিভাগের পরিচালক রিচার্ড আইজ্যাকসন। এই পুষ্টিবিদ বলেন, শরীরে দুটি এপিওই-৪ জিন থাকলেই ডিমেনশিয়া অবধারিত—প্রচলিত এমন বিশ্বাসকে এ গবেষণা বদলে দেবে বলে আশা করা যায়।
রিচার্ড আইজ্যাকসন নেচার–এ প্রকাশিত এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি বলেন, ‘জিন আর মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না। যদি শুধু নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস মেনে চলে মানুষের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়, তাহলে চিন্তা করুন ব্যায়াম, ঘুম, মানসিক চাপ এবং এ ধরনের শারীরিক পরিবর্তন–সহায়ক বিষয়গুলো নিয়ে যদি কাজ করা যায়, তাহলে কী হতে পারে।’
ডিমেনশিয়ার ঝুঁকির সঙ্গে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাবারের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে এটিই প্রথম গবেষণা নয়। এর আগে ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে ৬০ হাজারের বেশি মানুষের ওপর একটি গবেষণা চালানো হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, যাঁরা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাস ঘনিষ্ঠভাবে মেনে চলেন, তাঁদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি যাঁরা মেনে চলেন না, তাঁদের চেয়ে ২৩ শতাংশ পর্যন্ত কম।
২০২৩ সালেই করা আরেকটি গবেষণায় একই ধরনের ফল পাওয়া গিয়েছিল। ওই গবেষণায় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের উদ্ভিদভিত্তিক খাবার এবং মস্তিষ্কের উন্নতির জন্য নির্দিষ্ট খাবার গ্রহণ করা ব্যক্তিদের মৃত্যুর পর মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, ওই ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে ডিমেনশিয়ায় প্রধান চিহ্নগুলো ৪০ শতাংশ কম।