দিনে ১০ হাজারবার ঝিমায় কারা

চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইন দিনে ১০ হাজারবারেরও বেশি সময় ঘুমিয়ে নেয়
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

রাতে এক দফায় মাত্র ৪ সেকেন্ড ঘুমিয়ে উঠতে পারবেন? এ রীতিমতো অত্যাচার মনে হতে পারে। কিন্তু জানেন কি, চিনস্ট্র্যাপ প্রজাতির পেঙ্গুইন রাতে এক দফায় মাত্র ৪ সেকেন্ড করেই ঘুমিয়ে নেয়। আর এক দিনে এ রকম করে প্রায় ১০ হাজারবার ঘুমায় তারা। নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে।

গবেষকেরা দেখেছেন, অ্যান্টার্কটিকার কিং জর্জ দ্বীপের চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইন দিনে ১০ হাজারবারেরও বেশি সময় ঘুমিয়ে নেয়। এতে তারা তাদের বাসার দিকেও অবিচ্ছিন্ন নজর রাখতে পারে। বাসায় থাকা ডিম ও ছানাদের শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এই পাখি দিনে মোট ১১ ঘণ্টা ঝিমিয়ে নেয়, কখনো নিরবচ্ছিন্ন ঘুমায় না।

চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইন সাধারণত সাউথ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জ, অ্যান্টার্কটিকা, সাউথ ওর্কনিস দ্বীপপুঞ্জ, সাউথ সেথল্যান্ড, সাউথ জর্জিয়া, বৌভেট দ্বীপপুঞ্জ, ব্যালিনি দ্বীপপুঞ্জে দেখা যায়।

লিয়ন নিউরোসায়েন্স রিসার্চ সেন্টারের প্রধান গবেষক পল-অ্যান্টোইন লিবোরেল বলেন, ‘মানুষ এ রকম পারে না, কিন্তু পেঙ্গুইনরা পারে। আমরা বেশির ভাগ পাঠ্যপুস্তকে যা পড়ি, তার চেয়েও ঘুম অনেক বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ ও জটিল।’

১৯৮০-এর দশকে পেঙ্গুইনের ঘুম পর্যবেক্ষণ করেছিলেন গবেষকেরা। সে সময় পেঙ্গুইন ধরে একটি নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। গবেষকেরা কিছু সময়ের জন্য পেঙ্গুইনদের ঝিমানোর কথা জানিয়েছিলেন। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, সারা দিন ধরেই পেঙ্গুইনরা এভাবে ঝিমায়। কখনো গভীর ঘুমে ঢলে পড়ে না।

‘সায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে গবেষকেরা লিখেছেন, এমন ঝিমানো পেঙ্গুইনদের সঞ্জীবনী শক্তি হিসেবে কাজ করে। পেঙ্গুইনরা দাঁড়িয়ে বা শুয়ে ঘুমাতে পারে।

এই পাখি দিনে মোট ১১ ঘণ্টা ঝিমিয়ে নেয়, কখনো নিরবচ্ছিন্ন ঘুমায় না
ফাইল ছবি: এএফপি

গবেষক লিবোরেল বলেছেন, ‘প্রাণীর আচরণের মূলে আছে ঘুম। বেশির ভাগ ঘুমের গবেষণা ইঁদুর ও মানুষের মধ্যে পরিচালিত হয়। তবে অন্যান্য প্রাণীর ওপর গবেষণা করলে দেখা যায়, পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে তাদের ঘুম বিভিন্ন পর্যায়ে প্রভাবিত হয়।’

গবেষকেরা ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাম (ইইজি) পর্যবেক্ষণ এবং ক্রমাগত ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে এই বুনো চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইন নিয়ে গবেষণা করেছেন।

চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইনের মা বা বাবা বাসা পাহারায় বেশ কয়েক দিন একা থাকে। এ সময় তার সঙ্গী খাবারের খোঁজে দূরে চলে যায়। এ সময়ে তাদের অতিরিক্ত ঘুম ডিম বা ছানাদের বাদামি স্কুয়া পাখি বা অন্য পেঙ্গুইনের শিকারের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

গবেষকেরা ২ হাজার ৭০০টিরও বেশি প্রজনন সঙ্গীর ওপর গবেষণা করেছেন। এর মধ্যে ১৪টি পেঙ্গুইন ডিম ফুটিয়েছে। গবেষকেরা লিখেছেন, এই পাখিরা মাত্র ৪ সেকেন্ড করে কয়েক হাজারবার ঘুমিয়ে থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু প্রজাতির প্রাণী নিয়মিতভাবে খুব কম ঘুমায়। আফ্রিকান বুশ প্রজাতির হাতি দিনে গড়ে ২ ঘণ্টা ঘুমায় এবং বেশির ভাগ সময় দাঁড়িয়ে ঘুমায় তারা। কখনো কখনো ঘুম ছাড়াই ৪৮ ঘণ্টা কাটায় এই প্রজাতির হাতি।

আবার কিছু প্রজাতির প্রাণী ও পতঙ্গের ঘুমে লিঙ্গগত পার্থক্যও আছে। যেমন মেল ফ্রুট প্রজাতির মাছির দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়। আর এই প্রজাতির নারী মাছিরা ৪ ঘণ্টা ঘুমায়। এমনকি ১৫ মিনিটেরও কম ঘুমে বেঁচে থাকতে পারে।