ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত: ৫০ বছর পর আরেক ‘ইয়ম কিপুর’ যুদ্ধ

১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর ‘ইয়ম কিপুর’–এর দিন ইসরায়েলে হামলা চালায় মিসর ও সিরিয়া। এবার ৭ অক্টোবর ভোরে হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। তাই অনেকে এবারের হামলাকে সেই ইয়ম কিপুর যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করছেন। ইসরায়েলি সরকারের আগ্রাসী নীতিই বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে অনেকে মনে করছেন।

ইসরায়েলি হামলায় নিহত এক ফিলিস্তিনি শিশুর মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ১০ অক্টোবর গাজার খান ইউনিসে
ছবি: রয়টার্স

হিব্রু বর্ষপঞ্জি অনুসারে নতুন বছরের প্রথম দিনটি ‘রোশ হাশানাহ’ নামে পরিচিত। হিব্রু বর্ষের প্রথম মাস ‘তিশরেই’। ইহুদি ধর্মবিশ্বাসমতে, এদিন মহাপ্রভু পরবর্তী এক বছরের ভাগ্যলিখনের খাতা খোলেন।

তাই এদিন থেকে ইহুদিরা বিশেষ প্রার্থনা করে। তিশরেই মাসের দশম দিনের মাথায় পালিত হয় পাপমুক্তির দিন ‘ইয়ম কিপুর’। এই দিন শেষে প্রভু ইহুদিদের ভাগ্যলিখন শেষে খাতা বন্ধ করেন। রোশ হাশানাহ থেকে ইয়ম কিপুরের মধ্যবর্তী দিনগুলোকে বলা হয় ইয়ামিম নোরায়িম বা অনুতাপের দিন।

ইয়ম কিপুরের দিনটি ইহুদিরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সমষ্টিগতভাবে নিবিড় প্রার্থনা, অনুশোচনা, উপবাস ও সংযমের মাধ্যমে পালন করে থাকেন। ইহুদিধর্মমতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান এই দিনটি ইসরায়েলে সরকারিভাবে ছুটি থাকে। অত্যাবশ্যকীয় সীমিত কিছু সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকে।

৫০ বছর আগে

১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর ইসরায়েলে যথারীতি ইয়ম কিপুর পালিত হচ্ছিল। আর এই দিনেই ইসরায়েলে হামলা চালায় মিসর ও সিরিয়া। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ ও হারানো ভূমি ফেরত পেতে তারা এই হামলা চালায়। আকস্মিক এই হামলায় প্রথমে ইসরায়েল স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। দেশটির নেতারা ভাবতেই পারেননি, মাত্র ছয় বছর আগে শোচনীয়ভাবে পরাজয়ের পর কোনো আরব রাষ্ট্র ইসরায়েলে হামলার মতো অত বড় ঝুঁকি নেবে।

ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার ভেবেছিলেন, মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত সংঘাতে জড়ানোর মতো অযৌক্তিক পদক্ষেপ নেবেন না। ইসরায়েলি উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা দম্ভভরে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কোনো রকম সংঘাত হলে ইসরায়েলের জন্য ‘সৈন্য প্রত্যাহারের সীমারেখা হবে কায়রো।’ আর আরবরা হামলা করলে এমন পাল্টা জবাব দেওয়া হবে যে তাদের কাছে ‘১৯৬৭ সালের পরাজয়ের স্মৃতিটাই বরং সুখকর মনে হবে।’

৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় বা রাতে আক্রমণ হতে পারে বলে আগেই আভাস দিয়েছিলেন ইসরায়েলি গোয়েন্দা ও গুপ্তচরেরা। তবে ৬ অক্টোবর দুপুরে (দিনটা হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে ছিল ১০ রমজান) যখন মিসরীয় সেনাবাহিনী সুয়েজ খাল পেরিয়ে অধিকৃত সিনাই উপদ্বীপে ঢুকে পড়ে, তখন ইসরায়েলি বাহিনী ছিল অনেকটাই অপ্রস্তুত। অপর সীমান্ত গোলান মালভূমিতে সিরিয়ার সেনারাও হামলা চালায়। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে মিসরের কাছ থেকে সিনাই ও সিরিয়ার কাছ থেকে গোলান দখলে নিয়েছিল ইসরায়েল। মিসর ও সিরিয়ার আক্রমণ শুরুর পর ৬ অক্টোবর রাতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে দায়ানকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। তিনি বলেছিলেন, আরবরা এবার ‘ইহুদিদের শেষ করার জন্য ইসরায়েল দখল করে নিতে চাচ্ছে।’

হারেৎজ–এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়, পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিনিদের জাতীয় আন্দোলনকে দমন, পশ্চিম তীর দখল, হেবরন ও জর্ডান উপত্যকায় জাতিগত নিধন অভিযান, আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে টেম্পল মাউন্ট এলাকায় ইহুদি বসতি ও উপস্থিতি জোরদার করার পাশাপাশি সৌদি আরবের সঙ্গে এমন চুক্তি করা যেখানে ফিলিস্তিনিরা কিছুই পাবে না—নেতানিয়াহুর এসব নীতি ফিলিস্তিনদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এসবের কারণেই ইসরায়েল আজ এই হামলার শিকার হয়েছে।

অবশ্য মিসর–সিরিয়ার হামলার প্রাথমিক ধকল কাটিয়ে উঠতে ইসরায়েলের বেশি দিন লাগেনি। ১০ অক্টোবর সিরীয় বাহিনীকে গোলান থেকে হটিয়ে দিয়ে তারা সিরিয়ার অভ্যন্তরে পাল্টা হামলা চালায়। তবে মিসরীয় বাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠতে বেশ বেগ পেতে হয় ইসরায়েলের। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ইসরায়েলকে সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে থাকেন। অন্যদিকে সিরিয়া ও মিসর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে কিছু যুদ্ধসামগ্রীর জোগান পেয়েছিল। ১৫ অক্টোবর ইসরায়েলের প্রবল পাল্টা আক্রমণে মিসরীয় বাহিনী পিছু হটতে থাকে। এদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ২৪ অক্টোবর যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করে, যদিও ২৬ অক্টোবর মিসর সীমান্তে সংঘাত থেমে যায়।

ইয়ম কিপুর যুদ্ধের সময় তেল উৎপাদনকারী আরব দেশগুলো একযোগে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ৭০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছিল। ইসরায়েলকে সহযোগিতা করায় তারা যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডসে তেল সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্বজুড়ে এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। তবে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে তা শেষ পর্যন্ত বড় নিয়ামক হয়ে উঠতে পারেনি।

১৯৭৩ সালের যুদ্ধ শেষে হিসাব-নিকাশে ইসরায়েল জয়ী হলেও দেশটির ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ছিল ১৯৬৭ সালের তুলনায় অনেক বেশি। তিন হাজার ইসরায়েলি সেনা প্রাণ হারিয়েছিল। জনসাধারণ মনস্তাত্ত্বিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছিল। তাঁদের প্রচণ্ড ক্ষোভ জন্মেছিল সরকার ও প্রতিরক্ষাবাহিনীর ওপর। ফলে গোল্ডা মেয়ারকে যুদ্ধ শেষের আট মাসের মধ্যে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।

আরও পড়ুন

ইসরায়েল অজেয় এবং কেউ তাকে আক্রমণের সাহস পাবে না—১৯৬৭ সালের পর এই বয়ানটা ইহুদি রাষ্ট্রে এমন একটা ধারণা ছড়িয়ে পড়েছিল। ছয় বছরের মাথায় তা আংশিক হলেও মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

সেই যন্ত্রণাদায়ক ও তিক্ত স্মৃতি এখনো বয়ে চলেছে ইসরায়েল। এই যুদ্ধের মাধ্যমে মিসর যা চেয়েছিল, পাঁচ বছরের মাথায় ক্যাম্প ডেভিড শান্তিচুক্তির মাধ্যমে তাদের সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়। ইসরায়েল দখলকৃত সিনাই উপদ্বীপ মিসরকে ফিরিয়ে দেয়।

প্রকৃতই ওই সময় মিসর ও সিরিয়ার আক্রমণ ইসরায়েলের কাছে এক বিস্ময় হয়ে এসেছিল। তবে ইসরায়েলি বিশ্লেষক ও তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিশেল মিলশেটেইনের মতে, এই বিস্ময় যতটা না হঠাৎ যুদ্ধ শুরুর, তার চেয়ে অনেক বেশি যেভাবে আরব রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধ করেছে, সে জন্য। আরবদের সাহস ও দৃঢ়তা, বিচিত্র যুদ্ধ কৌশল এবং ইসরায়েলি ভাবনার ধরন বুঝে ফেলার দক্ষতা ইসরায়েলের জন্য বিব্রতকর ও হতাশাজনক হয়ে উঠেছিল।

হামাসের হামলা হঠাৎ হলেও বিস্ময়কর নয়

৫০ বছর পর গত শনিবার ১৯৭৩ সালের চেয়েও বিরাট এক বিস্ময়ের মুখোমুখি হয়েছে ইসরায়েল। অধিকৃত গাজা উপত্যকা থেকে হামাসের যোদ্ধারা মাত্র ২০ মিনিটে  ইসরায়েলের অভ্যন্তরে কয়েক হাজার রকেট নিক্ষেপ করে, যা রাজধানী তেল আবিবেও আঘাত হানে। রকেট হামলা হামাসের একটি নিয়মিত কাজ, যা ঠেকাতে ইসরায়েল আয়রন ডোম প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে।

কিন্তু রকেট হামলার পাশাপাশি এদিন সকালেই হামাসের যোদ্ধারা গাজা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। আলকেশন, এরেজ, সেদ্রোতসহ বিভিন্ন শহরে হামাস যোদ্ধারা হামলা চালায়। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত হামলায় ৯০০ জনের বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ভিনদেশিও আছেন। হামাস অন্তত ১০০ জনকে আটকে রেখেছে, যাঁদের মধ্যে সাধারণ ইসরায়েলি নাগরিক, পুলিশ, সেনা সদস্য ও কয়েকজন ভিনদেশি নাগরিক আছেন।

হামাসের এই হামলায় নিজ দেশে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে নেতানিয়াহু সরকার। ইসরায়েলের শত বছরের পুরোনো দৈনিক হারেৎজ–এর বিশ্লেষক অ্যালন পিনকাস মন্তব্য করেছেন, হামাসের শনিবারের হামলা ইসরায়েলের জন্য এক মহাবিপর্যয়, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকার ও  প্রতিরক্ষাবাহিনী নাগরিকদের রক্ষায় শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। পিনকাসের মতে, ইসরায়েলের সুদক্ষ গুপ্তচর এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাংকেতিক ও ইলেকট্রনিক গোয়েন্দাব্যবস্থা থাকলেও তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

আরও পড়ুন

হামাস এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’। তাদের দাবি, জেরুজালেমে মুসলমানদের পবিত্র স্থান আল–আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ইহুদিদের দখলদারি এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের নির্যাতন প্রতিরোধে এই অভিযান।

প্রকৃতপক্ষে বছরের পর বছর অবৈধভাবে আরোপিত অবরোধ থেকে মুক্তির এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য এই অভিযান। এটা বুঝতে একটু পেছনের কথা জানা দরকার। গাজা উপত্যকা একসময়ে মিসরের অংশ  ছিল। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে জোরপূর্বক ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় জাতিসংঘের পরিকল্পনায় এই ভূখণ্ডকে ফিলিস্তিনের অংশ করা হয়।

তবে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর ৩৬০ বর্গকিলোমিটারের এই ছোট্ট ভূখণ্ডটি ইসরায়েলের দখলে চলে যায়। ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির পর গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সীমিত শাসন মেনে নেয় ইসরায়েল। আর ২০০৫ সালে গাজা থেকে ইহুদি বসতি পুরোপুরি গুটিয়ে নেয় ইসরায়েল।

কিন্তু ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের নির্বাচনে হামাস জয়ী হলে তারা গাজা থেকে ফাতাহ ও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে হটিয়ে দেয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’–এর তকমা দিয়ে হামাসের জয় মেনে নিতে চায়নি। হামাসও ইসরায়েলকে ‘মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার’ নীতিতে অটুট থাকে। এরপরই পুব দিকে ইসরায়েল ও দক্ষিণ দিকে মিসর গাজার সীমান্ত বন্ধ করে দেয়।

২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েল গাজার ওপর নৌ-স্থল-আকাশ অবরোধ আরোপ করে। এর ফলে খোলা আকাশের নিচে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগারে রূপান্তরিত হয় গাজা। এখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা দিনের কিছু সময় সীমান্ত পেরিয়ে কাজের জন্য ইসরায়েলে ঢুকতে পারেন। জাতিসংঘ গাজার জন্য যে মানবিক ত্রাণ ও ওষুধপথ্য দেয়, তা নিতে হয় ইসরায়েলের মর্জি অনুসারে।

ভূমধ্যসাগরের উপকূলঘেঁষা হলেও সেখানে গাজার মানুষের মাছ ধরা বা নৌকা চালানোয় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে ইসরায়েল। ১৬ বছর ধরে এই অবরোধের মধ্যে দুঃসহ ও অমানবিক জীবন যাপন করছে গাজাবাসী। মাঝখানে কিছুদিন মিসরের রাফা সীমান্ত দিয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যাতায়াতের ব্যয়বহুল পথ খোলা থাকলেও সেনানায়ক সিসি ক্ষমতায় আসার পর কায়রো সেটাও বন্ধ করে দেয়।

এই ১৬ বছরে হামাসের সঙ্গে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে ইসরায়েলি বাহিনীর। হামাসের রকটে হামলার বিপরীতে নির্বিচার ইসরায়েলি বিমান হামলায় কয়েক হাজার গাজাবাসীর মৃত্যু হয়েছে। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে, শত শত ঘরবাড়ি ধুলায় মিশে গেছে, বিধ্বস্ত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল। ইসরায়েল বিনাশ করে দিয়েছে গাজাবাসীর সুপেয় পানির উৎস।

সুতরাং, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া গাজাবাসী ধুঁকে ধুঁকে মরার চেয়ে শত্রুর কিছু ক্ষতিসাধন করে প্রাণ বিসর্জনের দিকে গেলে তাতে বিস্মিত হওয়ারই–বা কী আছে? রকসাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সোমদীপ সেন আল–জাজিরায় তাঁর কলামে লিখেছেন, হামাসের অভিযানে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। ইসরায়েলি আগ্রাসন ও দখলদারিই ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’কে উসকে দিয়েছে।

সোমদীপ সেন লিখেছেন, কয়েক দশকের মধ্যে ইসরায়েলি দখলদারি-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে বড় সামরিক জবাব হচ্ছে আসলে এক অনিবার্য প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধের লড়াই। এটি হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রামেরই অংশ। স্বভূমি থেকে উৎখাত ও দখলদারির শিকার ফিলিস্তিনিরা আল-নাকবার ৭৫ বছর পালন করেছে চলতি বছর মে মাসে। একই সঙ্গে স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদ্‌যাপন করেছে ইসরায়েল।

আরও পড়ুন

বিপর্যস্ত ও অপমানিত ইসরায়েল এখন বিমান হামলা চালিয়ে গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার ভয়ংকর পথ বেছে নিয়েছে। পাশাপাশি স্থল অভিযান শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র তার জন্য সমরাস্ত্র পাঠাতে শুরু করেছে। গতকাল পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৭০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ঘরবাড়ি হারিয়েছেন হাজার হাজার গাজাবাসী।

ইসরায়েলের প্রভাবশালী দৈনিক হারেৎজ–এর সম্পাদকীয়তে পুরো পরিস্থিতির জন্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দায়ী করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে—যিনি ব্যাপক রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও নিরাপত্তা বিষয়ে বিকল্পহীন জ্ঞানের অধিকারী হিসেবে গর্ব করে থাকেন, সেই তিনি এটা বুঝতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন যে, কীভাবে তিনি ইসরায়েলকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

হারেৎজ–এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়, পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিনিদের জাতীয় আন্দোলনকে দমন, পশ্চিম তীর দখল, হেবরন ও জর্ডান উপত্যকায় জাতিগত নিধন অভিযান, আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে টেম্পল মাউন্ট এলাকায় ইহুদি বসতি ও উপস্থিতি জোরদার করার পাশাপাশি সৌদি আরবের সঙ্গে এমন চুক্তি করা যেখানে ফিলিস্তিনিরা কিছুই পাবে না—নেতানিয়াহুর এসব নীতি ফিলিস্তিনদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এসবের কারণেই ইসরায়েল আজ এই হামলার শিকার হয়েছে।

  • আসজাদুল কিবরিয়া, লেখক ও সাংবাদিক।

  • [email protected]

আরও পড়ুন