গাজায় হাসপাতালে একের পর এক মৃত্যু

বিদ্যুৎহীন গাজার হাসপাতাল। সবচেয়ে বড় হাসপাতালে ৩৪ রোগীর মৃত্যু। তাদের মধ্যে সাত নবজাতকও রয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন এবং গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিতে দেশে দেশে বিক্ষোভ চলছেই। একই দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রেও হচ্ছে বিক্ষোভ। গত রোববার দেশটির টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের রাজধানী অস্টিনে
ছবি: এএফপি

ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা ও জ্বালানিসংকটের কারণে ফিলিস্তিনের গাজার উত্তরাঞ্চলের সব হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। জ্বালানিসংকটে জেনারেটর বন্ধ থাকায় সেখানকার সবচেয়ে বড় হাসপাতালের ৩৪ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে সাত নবজাতকও রয়েছে।

এদিকে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এবং যোগাযোগের ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় গাজায় হতাহতের হালনাগাদ তথ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত শনিবার পর্যন্ত দেওয়া তথ্যে গাজায় ১১ হাজারের বেশি নিহতের কথা জানানো হয়। তাঁদের মধ্যে আট হাজারই নারী ও শিশু।

গতকাল সোমবার হামাস সরকারের উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউসেফ আবু রিশ এএফপিকে বলেন, গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের সব হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে জ্বালানিসংকটের কারণে বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শনিবার থেকে গাজার আল-শিফা হাসপাতালের ৩৪ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আবু রিশ বলেন, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকা ২৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক আর ৭ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুন

‘অস্ত্রোপচারের দরকার হলেই মৃত্যু’

গাজার আল–শিফা হাসপাতালে জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়ায় নেই অক্সিজেন সরবরাহ। সে কারণে ইনকিউবেটর থেকে নবজাতকদের বের করে আনা হয়েছে
ছবি: রয়টার্স

বিদ্যুতের অভাবে আল-শিফা হাসপাতালের কোনো অস্ত্রোপচারকক্ষই এখন আর সচল নেই। ফলে কারও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলেই তাঁকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হচ্ছে।

আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মুহাম্মদ আবু সালমিয়া আল-আরাবি টেলিভিশনকে বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের কক্ষগুলো পুরোপুরি বন্ধ। এখন আমাদের কাছে আহত কেউ এলে প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া আমরা কোনো সেবা দিতে পারছি না।’

আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘যাঁরই অস্ত্রোপচার দরকার হচ্ছে, তিনি মারা যাচ্ছেন। আমরা তাঁর জন্য কিছুই করতে পারছি না।’

এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় আল-শিফা হাসপাতালের তিন নার্স নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন

জাতিসংঘের পতাকা অর্ধনমিত

গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক জাতিসংঘ সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) ১০১ কর্মী নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের জেনেভা দপ্তরের মহাপরিচালক তাতিয়ানা ভালোভাইয়া বলেন, ‘এত স্বল্প সময়ে আমাদের সংগঠনের এতসংখ্যক মানবিক সহায়তাকর্মীর প্রাণহানি ইতিহাসে সর্বোচ্চ।’

নিহত মানবিক সহায়তাকর্মীদের সম্মানে গতকাল ‘বৈশ্বিক শোক’ পালন করে জাতিসংঘ। এর অংশ হিসেবে নিজস্ব দপ্তরগুলোয় জাতিসংঘের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এ ছাড়া তাঁদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এদিকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় আহমদ ফাতিমা নামের এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) গত রোববার জানায়, এ পর্যন্ত ৪০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তাঁদের ৩৫ জন ফিলিস্তিনি, ৪ জন ইসরায়েলি আর ১ জন লেবাননের।

৪৪ ইসরায়েলি সেনা নিহত

ফিলিস্তিনের গাজায় আরও দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়।

গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে নিহত ইসরায়েলি সেনার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ জন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।