গাজায় ত্রাণ সংগ্রহে জড়ো হওয়া মানুষের ওপর হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দা

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ত্রাণ নিতে জড়ো হওয়া মানুষের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের গুলি চালানোর ঘটনায় ১১২ জন নিহত হয়েছে, ২৯ ফেব্রুয়ারিছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনের গাজার উত্তরাঞ্চলে গতকাল বৃহস্পতিবার ত্রাণ নিতে জড়ো হওয়া মানুষের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের গুলি চালানোর ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ওই হামলায় ১১২ জন নিহত হয়েছে। আহত ৭৫০ জনের বেশি। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, তুরস্ক, ইতালি, কলম্বিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ ও জাতিসংঘ নিন্দা জানিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এ ঘটনা হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির আলোচনা জটিল করে তুলবে। আর এ ধরনের ঘটনাকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছে হোয়াইট হাউস।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার সাংবাদিকদের বলেছেন, ঠিক কী ঘটেছে, তা নিয়ে জরুরিভিত্তিতে আরও বিস্তারিত তথ্য চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনার তদন্তের ওপর নিবিড় নজর রাখবে ওয়াশিংটন।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, খাবার সংগ্রহে যাওয়া বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের গুলি চালানোর ঘটনাটি মেনে নেওয়া যায় না। বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ত্রাণ সরবরাহের ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখতে এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্র ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চালানো ‘গণহত্যার’ নিন্দা জানিয়েছেন। ইসরায়েল থেকে অস্ত্র না কেনার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। কলম্বিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ ইসরায়েল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) দেওয়া পোস্টে গুস্তাভো পেত্র লিখেছেন, ‘খাবার সংগ্রহ করতে যাওয়া ১০০-এর বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছেন নেতানিয়াহু (ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু)। এটা গণহত্যা, যা হলোকাস্টের কথা মনে করিয়ে দেয়। বিশ্বের উচিত নেতানিয়াহুকে বর্জন করা।’

এক্সে দেওয়া পোস্টে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এ হত্যাকাণ্ডের কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ইসরায়েলি সেনারা বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করেছেন।’

তুরস্ক বলছে, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল আরেকটি মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে।

স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস এক্সে দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘গাজায় যা ঘটেছে তা অগ্রহণযোগ্য। খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে বেশ কিছু ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন। এতে বোঝা যায়, যুদ্ধবিরতি কতটা জরুরি।’

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এ ঘটনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও হতাশা জানিয়েছেন। এ ছাড়া দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি গাজায় জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠান আহ্বান জানান। ফিলিস্তিনি জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যও ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গাজায় ত্রাণ নিতে জড়ো হওয়া মানুষের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁর মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ‘গাজার অবরুদ্ধ উত্তরাঞ্চলে এক সপ্তাহের বেশি সময় জাতিসংঘ ত্রাণ সরবরাহ করতে পারছে না। সেখানকার মানুষসহ পুরো গাজার অসহায় বেসামরিক নাগরিকদের জন্য জরুরিভিত্তিতে সহায়তা প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল এ ঘটনাকে ‘একেবারে অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কঠোর ভাষায় এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এটিকে ইসরায়েলি বাহিনীর ‘জঘন্য’ কর্মকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও হামলার নিন্দা জানিয়েছে। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার গুরুত্বের ওপর আবারও জোর দিয়েছে তারা।