‘এটা আপনার জন্য নয়’: ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় আশ্রয়কেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের ঢুকতে বাধা

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় লোকজন তেল আবিবের একটি ভূগর্ভস্থ পার্কিং লটে আশ্রয় নিয়েছেন। ১৭ জুন ২০২৫ছবি: এএফপি

সামার আল-রাশেদের বয়স ২৯ বছর। পাঁচ বছরের মেয়েকে একাই বড় করছেন তিনি। থাকেন ইসরায়েলের একর এলাকার কাছে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে। তাঁর প্রতিবেশীদের অধিকাংশই ইহুদি।

গত শুক্রবার ইরানের সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা হিসেবে যখন তীব্র শব্দে সাইরেন বাজছিল, তখন বাড়িতেই ছিলেন সামার ও তাঁর মেয়ে জিহান।

সাইরেন বাজা শুরু হলে আতঙ্কিত সামার মেয়ের হাত ধরে ভবনের আশ্রয়কেন্দ্রের (বাংকার) দিকে দৌড়াতে শুরু করেন। অন্য বাসিন্দারাও সেদিকে ছুটছিলেন তখন।

ওই সময়ের কথা মনে করে সামার বলেন, ‘আমি কিছু গুছিয়ে নেওয়ার সময় পাইনি। শুধু পানি, আমাদের ফোন ও মেয়ের হাত ধরে ছুটতে থাকি।’

আরও পড়ুন

আতঙ্কিত সামার নিজের ভয় লুকিয়ে রেখে মেয়েকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন। নরম গলায় আরবি ভাষায় মেয়েকে ধৈর্য ধরতে বলছিলেন, যেন তাঁরা একসঙ্গে দ্রুতপায়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে এগোতে পারেন—ঠিক যেভাবে প্রতিবেশীরাও সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল।

আতঙ্কিত সামার নিজের ভয় লুকিয়ে রেখে মেয়েকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন। নরম গলায় আরবি ভাষায় মেয়েকে ধৈর্য ধরতে বলছিলেন, যেন তাঁরা একসঙ্গে দ্রুতপায়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেন—ঠিক যেভাবে অন্য প্রতিবেশীরা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলেন।
ইসরায়েলের আকাশ সুরক্ষাব্যবস্থা ইরানের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবের আকাশেই ধ্বংস করছে। আকাশজুড়ে সেসব বিস্ফোরণের আলোক ঝলকানি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রের দরজার সামনে সেখানকার এক ইসরায়েলি বাসিন্দা এই মা-মেয়ের পথ আটকে দাঁড়ান। সামার বলেন, ওই ব্যক্তি তাঁকে আরবিতে কথা বলতে শুনে ফেলেছিলেন। আশ্রয়কেন্দ্রের দরজা দিয়ে ঢোকার আগেই ওই ব্যক্তি তাঁদের পথ আটকান এবং মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেন।

আরও পড়ুন

ঘটনার আকস্মিকতায় সে মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন সামার। বলেন, ‘আমি হিব্রু খুব ভালো বলতে পারি। তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তিনি ঘৃণাভরে আমার দিকে তাকিয়ে শুধু বললেন, “এটা আপনার জন্য নয়।”’

আমি হিব্রু খুব ভালো বলতে পারি। তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তিনি ঘৃণাভরে আমার দিকে তাকিয়ে শুধু বললেন, ‘এটা আপনার জন্য নয়’।
সামার আল-রাশেদ, তেল আবিবে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি নারী

সামার বললেন, ঠিক তখনই ইসরায়েলি সমাজের গভীর বিভাজনরেখাগুলো যেন উন্মোচিত হয়ে পড়েছিল।

গভীর হতাশা নিয়ে মেয়ের হাত ধরে সামার নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে আসেন। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে উঠতে আকাশে বিস্ফোরণের আলো দেখতে পেলেন—দূরে ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যাচ্ছে, কখনো আকাশেই বিস্ফোরিত হচ্ছে, দু–একটা মাটিতে আছড়ে পড়ছে। এ দৃশ্য যেমন তাঁকে আতঙ্কিত করছিল, তেমন প্রতিবেশীদের আচরণও ভয় ধরিয়ে দিচ্ছিল।

আরও পড়ুন

আশ্রয়কেন্দ্রে গাদাগাদি

ইসরায়েলজুড়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় এখন প্রচণ্ড ভিড়। সেখানে পুরোনো বাড়িগুলোয় কোনো বাংকার নেই। ফলে পুরোনো বাড়ির বাসিন্দারা এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় আশ্রয় নেন।

তেল আবিব ও পশ্চিম জেরুজালেমে ভবনের সিঁড়িঘরগুলো এখন বাসিন্দাদের অস্থায়ী শোবারঘরে পরিণত হয়েছে।

গভীর হতাশা নিয়ে মেয়ের হাত ধরে সামার নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে আসেন। তিনি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে আকাশজুড়ে বিস্ফোরণের আলো দেখতে পেলেন—দূরে ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যাচ্ছে, কখনো আকাশেই বিস্ফোরিত হচ্ছে, দু–একটি মাটিতে আছড়ে পড়ছে। এই দৃশ্য যেমন তাঁকে আতঙ্কিত করছিল, তেমনি প্রতিবেশীদের আচরণও তাঁকে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছিল।

পশ্চিম জেরুজালেমের অবসরপ্রাপ্ত সমাজকর্মী ইয়াকোভ শেমেশ বলেন, ইরানের হামলা শুরুর পর থেকে তাঁর স্ত্রী তাঁদের অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের সিঁড়িঘরেই ঘুমাচ্ছেন।

শেমেশের বয়স ৭৪ বছর। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভবনে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। রোববার রাতে আমি ছাদে গিয়েছিলাম কী হচ্ছে দেখতে। আকাশে আলোর ঝলকানি দেখলাম, তারপরই বিস্ফোরণের শব্দ। কিন্তু খবরে এ নিয়ে কোনো তথ্য পেলাম না। হয়তো তারা (রাষ্ট্র) আমাদের জানাতে চায় না এটা কতটা কাছাকাছি এসেছিল।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন