থামল দ্রুজ-সেনাবাহিনী সংঘাত, সিরিয়াকে বিভক্তের চেষ্টার অভিযোগ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে

সুয়েইদা থেকে সিরীয় বাহিনী প্রত্যাহারের পর বৃহস্পতিবার উচ্ছ্বসিত দ্রুজ যোদ্ধারাছবি: এএফপি

ইসরায়েল সিরিয়াকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইসরায়েলের ব্যাপক হামলার পর এ অভিযোগ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু দ্রুজ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আল-শারা।

সম্প্রতি সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুয়েইদা প্রদেশে দ্রুজ যোদ্ধাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে দুই পক্ষের বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার দামেস্কে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। সুয়েইদা প্রদেশ থেকে সিরীয় বাহিনীর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ইসরায়েল সরকার বলেছে, দ্রুজদের রক্ষার লক্ষ্যে কাজ করছে তারা।

ইসরায়েলের হামলার পর আজ বৃহস্পতিবার জনগণের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আল-শারা বলেন, সিরীয়দের ঐক্য ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে ইসরায়েল। তারা সিরিয়ার স্থিতিশীলতাকে ক্রমাগত লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে এবং বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে সিরীয়দের মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছে। দ্রুজ জনগোষ্ঠীর মানুষদের রক্ষা করা সিরিয়া সরকারের অগ্রাধিকার।

আল-শারা একসময় আল-কায়েদার একটি শাখার নেতৃত্বে ছিলেন। ২০১৬ সালে সশস্ত্র সংগঠনটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন তিনি। গত বছর তাঁর নেতৃত্বে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন হয়। এর পর থেকে তিনি সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আজ আল-শারা বলেন, দ্রুজদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনবেন তিনি।

দ্রুজ একটি ক্ষুদ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী। ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে তারা ইসলামের একটি শাখা হিসেবে বিবেচিত। লেবানন ও ইসরায়েলেও প্রভাবশালী এই গোষ্ঠীর অনুসারী রয়েছে। সম্প্রতি দ্রুজদের সঙ্গে বেদুইন গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষ থামাতে গত সোমবার সুয়েইদা প্রদেশে হস্তক্ষেপ করে সিরীয় বাহিনী। তবে শেষ পর্যন্ত দ্রুজ যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সামরিক বাহিনী।

চার দিনে নিহত ৩৫০

সোমবার থেকে চার দিন ধরে চলা সেনাবাহিনী ও দ্রুজ যোদ্ধাদের সংঘর্ষে অন্তত ৩৫০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। তাঁদের মধ্যে ইসরায়েলের হামলায় নিহত এবং দ্রুজ-সামরিক বাহিনী সংঘর্ষে নিহতরা রয়েছেন। বেসামরিক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসাকর্মী, নারী ও শিশুরা।

এরই মধ্যে বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ‘ভয়াবহ এই পরিস্থিতি’ থামাতে ঐকমত্য হয়েছে। এরপর সংঘাত থামান সিরীয় সেনা ও দ্রুজ যোদ্ধারা। বুধবার রাতে সেনারা সুয়েইদা ছেড়ে যান। রেয়ান মারুফ নামে স্থানীয় একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, গতকাল সকালে সুয়েইদার সড়কে ৬০টির বেশি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন তিনি।

এদিকে রয়টার্সের এক সাংবাদিক বলেছেন, চার দিন ধরে চলা সংঘাতে সরকারি সেনাদের সুয়েইদায় ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিতে এবং লুটপাট করতে দেখেছেন তিনি। এমনকি বুধবার রাতে সেনাসদস্যদের প্রত্যাহারের সময়ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। দ্রুজ সদস্যদের গোঁফও কেটে দিয়েছেন সেনাসদস্যরা। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে দ্রুজ জনগোষ্ঠীর লোকজন গোঁফ রাখেন।

দামেস্কে ইসরায়েলের হামলা

বুধবার দামেস্কে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে হামলা চালায় ইসরায়েল। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছেও হামলা হয়। রয়টার্সের সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, এদিন বিকেলে আকাশে বেশ নিচে নেমে আসে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানগুলো। তারপর ধারাবাহিকভাবে হামলা চালায়। এতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। হামলায় সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর পাঁচজন নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ ইয়াল জামির বলেছেন, ‘আমরা দক্ষিণ সিরিয়াকে সন্ত্রাসের ঘাঁটি হতে দেব না।’ দামেস্কে হামলার কথা স্বীকার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, দ্রুজ জনগণের বিরুদ্ধে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করছে ইসরায়েল। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েল প্রস্তুত।

সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সময়েও প্রায়ই হামলা চালাত ইসরায়েল। তাঁর পতনের পর হামলা বাড়ায় ইসরায়েলি বাহিনী। অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আল-শারাকে ‘জিহাদি’ বলে উল্লেখ করেছে তারা। তবে এমন সময় ইসরায়েলি বাহিনী দামেস্কে হামলা চালাল, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সিরিয়ার নতুন সরকারের। ইসরায়েলের সঙ্গেও নিরাপত্তা যোগাযোগ বাড়ছে।