ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘাত বন্ধে একটি বিস্তৃত চুক্তি করতে প্রস্তুত হামাস। এই চুক্তি অনুযায়ী, উপত্যকাটিতে বন্দী থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে তারা। বিনিময়ে সমঝোতার ভিত্তিতে ইসরায়েলের কারাগার থেকে নির্দিষ্টসংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে। তবে হামাসের এমন প্রস্তাব মানতে রাজি নয় ইসরায়েল সরকার। গাজায় যুদ্ধ বন্ধে উল্টো পাঁচটি শর্ত দিয়েছে তারা।
গত বুধবার হামাস ওই চুক্তির কথা জানায়। কয়েক দিন আগে গাজায় বন্দী থাকা জীবিত ২০ জিম্মির সবাইকে মুক্তি দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানের পর চুক্তির বিষয়টি সামনে আনল তারা। এর আগে গত মাসে গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল হামাস। এ সময় অর্ধেক জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছিল তারা। তবে ওই প্রস্তাব নিয়ে এখনো কিছু জানায়নি ইসরায়েল।
বুধবার হামাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত মাসে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে এখনো ইসরায়েলের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে তারা। এ ছাড়া তারা ইসরায়েলে সঙ্গে একটি বিস্তৃত চুক্তিতে যেতে চায়। এই চুক্তির মাধ্যমে গাজায় সংঘাত শেষ হবে। এ সময় সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। বিনিময়ে সমঝোতার ভিত্তিতে ইসরায়েলকে নির্দিষ্টসংখ্যক ফিলিস্তিনি জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে গাজা থেকে দখলদার বাহিনীর সব সদস্যকে সরিয়ে নিতে হবে, উপত্যকাটিতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রবেশের জন্য সীমান্ত ক্রসিং খুলে দিতে হবে এবং গাজা পুনর্গঠনপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
হামাসের এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়। কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলা এখনই শেষ হবে, যদি পাঁচটি শর্ত মেনে নেওয়া হয়। সেগুলো হলো: একসঙ্গে সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে; হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে, গাজাকে অস্ত্রমুক্ত করতে হবে; উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে এবং এমন একটি বিকল্প বেসামরিক প্রশাসনের হাতে গাজার শাসনভার তুলে দিতে হবে, যারা সন্ত্রাস ছড়াবে না এবং ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না।
ইসরায়েলের শর্ত মেনে নেওয়া ছাড়া গাজা হামলা বন্ধের আর কোনো পথ খোলা নেই বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজও। তিনি বলেছেন, হামাস যদি সব জিম্মিকে মুক্তি না দেয় এবং অস্ত্র ত্যাগ না করে, তাহলে গাজা নগরীর অবস্থা হবে উপত্যকাটির রাফা ও বেইত হানুন এলাকার মতো। গত মাসে গাজা নগরীর নিয়ন্ত্রণ নিতে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল।
হামাসের নতুন প্রস্তাব নিয়ে নেতানিয়াহু ও কাৎজের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ। তিনি বলেছেন, সরকার যখন হামাসের শর্তগুলো মেনে নিচ্ছে না, তখন অবশ্যই তাদের আলোচনার টেবিলে ফেরা উচিত এবং একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করা উচিত। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা জিম্মিদের ঘরে ফেরানোর চেষ্টা করছেন না।’
‘সামরিক শাসন ছাড়া উপায় নেই’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে দেশটিতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। ইসরায়েল থেকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় প্রায় আড়াই শ জনকে। সেদিন থেকেই গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে প্রায় ২৩ মাসে উপত্যকাটিতে নিহত হয়েছেন ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ।
এই সময়ের মধ্যে মাত্র দুবার হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। এর মধ্যে একবার সাত দিনের, আরেকবার প্রায় দুই মাসের। শেষের যুদ্ধবিরতি নিজেই ভেঙেছিল ইসরায়েল। তার পর থেকে নতুন করে সংঘাত বন্ধের বিষয়ে গড়িমসি করছে ইসরায়েল সরকার। সংঘাত বন্ধ তো দূরের কথা, উপত্যকাটির উত্তরে গাজা নগরীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল বাহিনী।
গাজা নগরী দখল নিয়ে সম্প্রতি ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান এয়াল জামিরের বেশ কয়েক দফায় বচসা হয়েছে। জামির বারবার বলে আসছেন, গাজা নগরীর দখল জিম্মিদের জীবন নিয়ে হুমকি সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে সেনাসদস্যদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে এমন কথা মানতে নারাজ নেতানিয়াহু ও তাঁর মন্ত্রীরা।
এরই মধ্যে বুধবার ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম চ্যানেলে ১২-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এয়াল জামির বলেছেন, ইসরায়েল যদি গাজা নগরী দখলের পরিকল্পনায় এগিয়ে যায়, তাহলে নভেম্বর থেকে উপত্যকাটিতে সামরিক শাসন জারি করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।