আরব বিশ্বের সবচেয়ে ধনী পরিবার কারা, তাদের সম্পদের পরিমাণ কত

ইউএইর প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানিফাইল ছবি: রয়টার্স

ইতিহাসের সবচেয়ে বিত্তশালী পরিবারগুলোর অনেকেরই আবাসস্থল হচ্ছে আরব বিশ্ব। বিশাল সম্পদ, রাজকীয় জীবনধারা এবং গভীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত এসব পরিবার বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ক্ষমতা ও প্রভাবের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

তবে এসব পরিবারের এই বিপুল সম্পদ কেবল আধুনিক তেল ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল নয়। বরং এর মূলে রয়েছে শত বছরের বাণিজ্য, উদ্যোক্তা মনোভাব এবং উদ্ভাবন—যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে।

ব্লুমবার্গের ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ২৫টি ধনী পরিবার গত বছরের তুলনায় সম্মিলিতভাবে ৩৫ হাজার ৮০৭ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি সম্পদের মালিক হয়েছে। বর্তমানে তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে। শেয়ার বাজারের চাঙাভাব এবং বিভিন্ন পণ্যের (যেমন ধাতু ও পোষা প্রাণীর খাবার) চাহিদা বৃদ্ধির কারণে তাদের এই সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই প্রতিবেদনে আরব বিশ্বের প্রভাবশালী তিনটি পরিবারের কথা তুলে ধরা হলো—

১. আল-নাহিয়ান পরিবার (সংযুক্ত আরব আমিরাত)

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সাতটি আমিরাতের অন্যতম আবুধাবির শাসক পরিবার ‘আল নাহিয়ান’ বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী পরিবার। তাদের নিট সম্পদের পরিমাণ ৩৩ হাজার ৫০৯ কোটি ডলার।

আবুধাবির শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান বর্তমানে ইউএইর প্রেসিডেন্ট।

তেলের খনি আবিষ্কারের মাধ্যমে অর্থনীতি বদলে যাওয়ার কয়েক দশক আগে থেকেই এই পরিবার এই অঞ্চল শাসন করে আসছে।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শেখ তাহনুন ব্যক্তিগত এবং রাষ্ট্রীয় মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলারের সম্পদ তদারকি করেন। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছেন।

২. আল-সৌদ পরিবার (সৌদি আরব)

সৌদি আরবের শাসক ‘আল-সৌদ’ পরিবার ব্লুমবার্গের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তাদের আনুমানিক নিট সম্পদের পরিমাণ ২১ হাজার ৩০৬ কোটি ডলার।

৯৩ বছর ধরে সৌদি আরবে রাজত্ব করা এই রাজবংশের সম্পদের প্রধান উৎস হলো দেশটির বিশাল তেলের মজুত।

আল-সৌদি পরিবারে প্রায় ১৫ হাজার সদস্য রয়েছেন। তাঁদের প্রভাবাধীন মোট সম্পদের পরিমাণ আসলে আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়।

রাজপরিবারের সদস্যরা সরকারি চুক্তি, জমির ব্যবসা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘সৌদি আরামকো’-কে বিভিন্ন সেবা দেওয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে থাকেন।

সৌদি আরবের সরকারি বিনিয়োগ তহবিল (পিআইএফ) বর্তমানে প্রায় এক লাখ কোটি ডলারের সম্পদ পরিচালনা করছে। এ ছাড়া যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারের বেশি বলে জানা গেছে।

৩. আল-থানি পরিবার (কাতার)

ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে কাতার শাসন করে আসা ‘আল থানি’ পরিবার ব্লুমবার্গের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে। তাদের নিট সম্পদের পরিমাণ ১৯ হাজার ৯৫ বিলিয়ন ডলার।

১৯৪০ সালের দিকে তেল আবিষ্কৃত হলেও কাতারের বিশাল গ্যাস মজুতের সঠিক ব্যবহারই তাদের অর্থনীতিকে বদলে দিয়েছে। এটাই দেশটির রাজপরিবারকে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কাতারে নিয়ে এসেছে।

আল-থানি পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদে আছেন এবং হোটেল, বিমা ও নির্মাণ খাতে তাদের বিশাল ব্যবসা রয়েছে।

এ ছাড়া বিদেশেও আল-থানি পরিবারের প্রচুর মূল্যবান সম্পদ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে লন্ডনের মেফেয়ারে বিলাসবহুল সম্পত্তি, ঘোড়দৌড়ের খামার, বেসরকারি খাতের ব্যাংক এবং বিখ্যাত ফ্যাশন হাউস ‘ভ্যালেন্টিনো’ অন্যতম।