গাজায় বিদেশি ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা 

■ নিহত ত্রাণকর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) হয়ে কাজ করছিলেন।

■ ইসরায়েলের হামলায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় আরও ৭১ জন নিহত। মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৯১৬। 

ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাহায্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের বিধ্বস্ত গাড়িটি পর্যবেক্ষণ করছেন জাতিসংঘের কর্মীরা। গতকাল গাজায়ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজায় আবারও ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে ছয় বিদেশিসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। নিহত ত্রাণকর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) পক্ষ থেকে গাজায় খাবার বিতরণ করছিলেন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ১৭৯ জন ত্রাণকর্মী নিহত হলেন।

গত সোমবার গাজা উপত্যকার দেইর আল-বালাহ এলাকায় এ হামলা চালানো হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার দ্বৈত নাগরিক এবং যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও পোল্যান্ডের নাগরিক রয়েছেন।

নিহত ৭ ত্রাণকর্মীর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার দ্বৈত নাগরিক এবং যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও পোল্যান্ডের নাগরিক রয়েছেন।

এদিকে ইসরায়েলের হামলায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭১ জন নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় ৩২ হাজার ৯১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৫ হাজার ৪৯৪ জন।

ডব্লিউসিকে গতকাল মঙ্গলবার ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দাতব্য সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের ‘কয়েকজন’ কর্মী নিহত হয়েছেন। কর্মীরা ঘোষিত ‘লড়াইমুক্ত এলাকায়’ ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছিলেন।

গাজায় এমন নির্বিচার হত্যা বন্ধ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলে নিজেদের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে ডব্লিউসিকে। সমুদ্রপথে আনা ২৪০ টন ত্রাণ বিতরণ না করেই তাদের জাহাজটি ফিরে যাচ্ছে।

দাতব্য সংগঠনটি বলেছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে চলাচল করা হলেও দেইর আল-বালাহ এলাকায় একটি গুদাম থেকে বের হওয়ার সময় এ হামলা চালানো হয়। গাজায় সমুদ্রপথে আনা ১০০ টনের বেশি মানবিক খাদ্যসহায়তা সেখানে রাখা হচ্ছিল।

ডব্লিউসিকের প্রতিষ্ঠাতা জোসে আন্দ্রেজ বলেন, এই ঘটনায় তাঁর হৃদয় ভেঙে গেছে। গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার কর্মকাণ্ড বন্ধ হওয়া দরকার। বেসামরিক নাগরিক ও সহায়তাকর্মীদের হত্যা বন্ধ করা দরকার। খাবারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা দরকার।

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন নিন্দা ও শোক জানিয়েছে। গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতিরও আহ্বান আহ্বান জানিয়েছে তারা।

নিহত অস্ট্রেলীয় ত্রাণকর্মী জোমি ফ্রাঙ্ককম বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। তিনি এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে এ ঘটনাকে ‘সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এই হত্যাকাণ্ডকে ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’ বলে বর্ণনা করেছেন। একই সঙ্গে ইসরায়েলকে এ ঘটনার তদন্ত ও ব্যাখ্যা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

নিজ দেশের ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক জানিয়েছে পোল্যান্ড। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, এ ঘটনায় ইসরায়েলি দূতাবাস, নিরাপত্তা বাহিনী এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

যত দ্রুত সম্ভব হামলার ঘটনাটি স্পষ্ট করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ত্রাণসহায়তা বিষয়ক কমিশনার জেনেজ লেনারসিকও হামলার নিন্দা এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।

ত্রাণকর্মীদের ওপর এ হামলা ‘অনিচ্ছাকৃত’ বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ইসরায়েলে বন্ধ হচ্ছে আল-জাজিরা

কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যম আল-জাজিরাসহ কয়েকটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সম্প্রচার বন্ধে সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে একটি আইন অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেট। ইতিমধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আল-জাজিরার আঞ্চলিক কার্যালয় বন্ধে তিনি ‘দ্রুত ব্যবস্থা’ নেবেন।

ফিলিস্তিনের গাজায় বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ ইসরায়েল নিষিদ্ধ করেছে। অবরুদ্ধ এ উপত্যকা থেকে হাতে গোনা যে কয়েকজন সাংবাদিক যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করতে পারছেন, আল-জাজিরার স্থানীয় কর্মীরা তাঁদের কয়েকজন।

নেতানিয়াহু এক্সে লিখেছেন, ইসরায়েল থেকে আল-জাজিরা আর তাদের সম্প্রচার চালাতে পারবে না। এই সম্প্রচার নেটওয়ার্ককে ‘সন্ত্রাসী চ্যানেল’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন তিনি।

এদিকে আল-জাজিরা এক বিবৃতিতে বলেছে, আল-জাজিরা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নেতানিয়াহু তাঁর চলমান আক্রমণকে কোনোভাবেই যৌক্তিক বলে বিশ্বের সামনে হাজির করতে পারবেন না। তবে যা পারবেন তা হলো, মিথ্যা তথ্য ও উসকানিমূলক বক্তব্য হাজির করতে।