গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড ‘যুদ্ধাপরাধের কাছাকাছি’ বলে মনে করেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওলমার্ট

ইসরায়েলি হামলায় নিহত ব্যক্তিদের জন্য শোক প্রকাশ করছেন কয়েকজন ফিলিস্তিনি। গাজা উপত্যকার দক্ষিণে খান ইউনিসে, ২১ মে ২০২৫ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট গাজায় তাঁর দেশের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যার অভিযোগ তুলেছেন। ইসরায়েলি বাহিনীর যুদ্ধ পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে তীব্র সমালোচনার পরপ্রেক্ষিতে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।

মঙ্গলবার বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট বলেন, ‘ইসরায়েল গাজায় যা করছে, তা যুদ্ধাপরাধের খুব কাছাকাছি।’ ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘এই যুদ্ধের স্পষ্ট চিত্রটা এমন যে হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছেন, পাশাপাশি বহু ইসরায়েলি সেনাও মারা যাচ্ছেন। সবদিক থেকেই এটা জঘন্য ও ঘৃণিত।’

এহুদ ওলমার্ট বলেন, ‘এই যুদ্ধের স্পষ্ট কোনো লক্ষ্য নেই এবং এটি এমন কোনো অর্জনের সম্ভাবনাও দেখাচ্ছে না, যা জিম্মিদের জীবন রক্ষা করতে পারে...আমরা হামাসের খুনিদের বিরুদ্ধে লড়ছি, নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নয় এবং এটি স্পষ্ট হওয়া উচিত।’

ওলমার্টের মন্তব্যে ইসরায়েলের একাধিক রাজনীতিক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ওলমার্টের লজ্জা পাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির শিক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ কিশ।

আরও পড়ুন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইয়োয়াভ কিশ লিখেছেন, ‘যখন আইডিএফের (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা সেনাবাহিনী)  সেনারা আমাদের ধ্বংস করে দিতে চাওয়া নৃশংস সন্ত্রাসের সঙ্গে জীবন বাজি রেখে লড়ছেন, তখন তিনি (ওলমার্ট) উসকানি দিচ্ছেন এবং তাঁদের পিঠে ছুরি মারছেন।’

সামাজিক সমতাবিষয়ক মন্ত্রী মাই গোলান সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাবে লিখেছেন, ‘এ যুদ্ধের একমাত্র অপরাধ হলো আপনি (আইডিএফের) যোদ্ধাদের মুখে থুতু ছিটাচ্ছে। অথচ তাঁরা আধুনিক যুগের নাৎসি শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আর হ্যাঁ, গাজায় নিরীহ মানুষ আছে, যার সঠিক সংখ্যা ৫৮।’ ৫৮ দ্বারা তিনি এখনো গাজায় থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের কথা বুঝিয়েছেন।

ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ওলমার্টকে অভিযুক্ত করে লিকুদ পার্টির এমপি নিসিম ভাতুরি বলেন, ‘তিনি একজন দুর্নীতিগ্রস্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী, যিনি (ইসরায়েল) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে রয়েছেন। তিনি আত্মঘৃণায় ভুগছেন এবং এখন হামাসের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছেন।’

গত সপ্তাহে বিবিসিকে দেওয়া আরেকটি সাক্ষাৎকারে ওলমার্ট বলেছিলেন, গাজা উপত্যকার ওপর ইসরায়েলের সম্পূর্ণ অবরোধ যুদ্ধাপরাধ বা গণহত্যা কি না, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। তবে তখন তিনি ইসরায়েলের অবরোধকে ‘সম্পূর্ণ অসহনীয়, অগ্রহণযোগ্য এবং ক্ষমার অযোগ্য’ হিসেবে নিন্দা করেছিলেন। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখে আমরা হয়তো এরই মধ্যে যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত বলে বিবেচিত হচ্ছি।’

ওলমার্ট গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘যুদ্ধাপরাধের খুব কাছাকাছি’ মন্তব্য করার আগের দিন সোমবার যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডাসহ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে। দেশগুলো ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, গাজায় হামলা ও অবরোধ বন্ধ করা না হলে তারা ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নিতে বাধ্য হবে। এদিকে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের একটি প্যানেল জানিয়েছে, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় প্রায় পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি মানুষ চরম খাদ্যসংকটে ভুগছেন।

বুধবার পর্যন্ত অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার কোনো ফিলিস্তিনির কাছে কোনো ধরনের মানবিক সহায়তা পৌঁছায়নি। তবে ইসরায়েলের দাবি, উপত্যকাটিতে ত্রাণবাহী কিছু ট্রাক প্রবেশ করেছে। ২ মার্চ থেকে গাজার ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে খাবার থেকে শুরু করে চিকিৎসা বা নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো সামগ্রীই  প্রবেশ করতে পারছে না।