গাজার ‘হলুদ রেখা’ থেকে সরবে না সেনা, এটিই নতুন সীমান্ত: ইসরায়েলি বাহিনীর প্রধান
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে উপত্যকাটিতে নির্দিষ্ট সীমারেখা বরাবর সেনা সদস্যের সরিয়ে নিয়েছিল ইসরায়েল। ওই সীমারেখাকে বলা হয় ‘ইয়েলো লাইন’ বা ‘হলুদ রেখা’। এখন ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, যুদ্ধবিরতির পরের ধাপগুলোয় ওই সীমারেখা থেকে আর পিছিয়ে যাবে না তারা। এটিই হবে গাজা ও ইসরায়েলের ‘নতুন সীমান্ত’।
সম্প্রতি গাজায় মোতায়েন করা ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধান ইয়াল জামির। হলুদ রেখা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের আর পিছিয়ে না নেওয়ার অর্থ হলো, গাজার অর্ধেকের বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণে থাকবে ইসরায়েলের। এর মধ্যে গাজার অনেক কৃষিজমি ও মিসরের সঙ্গে উপত্যকাটির রাফার সীমান্ত ক্রসিং রয়েছে।
ইয়াল জামির ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন উত্তর গাজায়। সেখানে তিনি বলেন, ‘হলুদ রেখা হবে (ইসরায়েলের) নতুন সীমান্ত। এটি আমাদের সম্মুখ প্রতিরক্ষা রেখা হিসেবে কাজ করবে। এই রেখা বরাবর আমাদের অভিযান কার্যক্রম চলবে। গাজার বড় অংশে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা এই প্রতিরক্ষা রেখা থেকে সরব না।’
যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরোধী
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে টানা দুই বছর গাজায় নির্বিচার হামলা চালায় ইসরায়েল। এ সময় উত্তর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের চলে যেতে বাধ্য করা হয়। গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরুর পর ইসরায়েলি সেনারা হলুদ রেখা বরাবর সরে যায়। এরপরও গাজার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে এখন উপত্যকাটির উপকূল বরাবর সংকীর্ণ এলাকায় থাকতে হচ্ছে।
ইসরায়েলের নতুন সীমান্ত নিয়ে ইয়াল জামির যে মন্তব্য করেছেন, তা অক্টোবরে সই হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরোধী। ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজা দখল বা নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে, তাতেও গাজা থেকে ধাপে ধাপে সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সামরিক বাহিনীর প্রধানের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে গার্ডিয়ান–এর কাছে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল সরকার। তবে ইসরায়েলি বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী’ গাজায় সেনা মোতায়েন রয়েছে আর হামাসই যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে। যদিও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ৩৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলই।
ইসরায়েলের হাতে সাংবাদিক হত্যা
সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২৯ ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এ বছর সারা বিশ্বে ৬৭ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সে হিসাবে ইসরায়েলের হাতেই হত্যার শিকার হয়েছেন প্রায় অর্ধেক সাংবাদিক।
আরএসএফের এক প্রতিবেদনে আজ মঙ্গলবার বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা সংঘাত শুরুর পর থেকে প্রায় ২২০ সাংবাদিক ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তিন বছর ধরে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় হত্যাকারীতে পরিণত হয়েছে ইসরায়েল।