ইরাকের পার্লামেন্ট ভবনে আবারও সদরপন্থী বিক্ষোভকারীরা

পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকতে ইটের তৈরি ব্যারিকেড ভাঙছেন বিক্ষোভকারীরা
ছবি: এএফপি

ইরাকের প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুক্তাদা আল-সদরের সমর্থকেরা আবারও দেশটির পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তাঁদের। এতে অন্তত ১২৫ জন আহত হয়েছে। এর আগে গত বুধবার শত শত বিক্ষোভকারী কঠোর নিরাপত্তাবলয় ভেঙে দেশটির পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়েন। এ ঘটনা ইরাকের স্থবিরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। খবর আল-জাজিরা।

মুক্তাদা আল-সদরের প্রতিপক্ষকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার বিরোধিতা করে তাঁর (সদর) সমর্থকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

ইরাকের পার্লামেন্ট ভবনটি রাজধানী বাগদাদের সুরক্ষিত গ্রিন জোনে অবস্থিত। গ্রিন জোনে ইরাক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। আছে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস।

আজ সদরের হাজারো সমর্থক মিছিল নিয়ে সড়কে নামেন। পার্লামেন্ট ভবনে ঢোকার আগে তাঁরা সড়কে থাকা ইটের বাধা পেরিয়ে গ্রিন জোনে প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁরা ‘সাইদ সদর, জনগণ আপনার সঙ্গে আছেন’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

ইরাকের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিক্ষোভের সময় সংঘর্ষে পুলিশসহ ১২৫ জন আহত হন।

সদরের সমর্থকেরা পুলিশের ওপর পাথর ছোড়ে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল ও স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

আবু ফোয়াদ নামে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা এমন একটি সরকার চাই, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত হবে না। এটাই জনগণের দাবি।’

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল-কাদিমির কার্যালয়ের গণমাধ্যম বিভাগ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

বাগদাদ থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক মাহমুদ আবদেলওয়াহেদ বলেন, গত বুধবার বিক্ষোভকারীদের পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকতে খুব একটা বাধা দেয়নি নিরাপত্তা বাহিনী।

সদর ও তাঁর সমর্থকেরা প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ আল-সুদানির বিরোধিতা করছেন। কারণ, তাঁদের মতে আল-সুদানি ইরানের ঘনিষ্ঠ।

আজ সদরের প্রতিপক্ষ মোহাম্মদ আল-সুদানিকে প্রধানমন্ত্রী পদে ঘোষণা করতে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুধবারের ঘটনার পরে এ অধিবেশন স্থগিত করা হয়।

আজকের ঘটনার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবদেলওয়াহেদ বলেন, আল-সদরের সমর্থকেরা আবারও একই ঘটনা ঘটিয়েছেন। কারণ, তাঁরা পার্লামেন্টকে বিশ্বাস করে না, ভোটের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া বিশ্বাস করে না। তাঁরা বলছেন, অধিবেশন স্থগিত হওয়ার অর্থ এই নয় যে, বন্ধ দরজার আড়ালে ভোট দেওয়া যাবে না।

গত অক্টোবরের সাধারণ নির্বাচনে অধিকাংশ আসন পায় সদরের রাজনৈতিক জোট। কিন্তু সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি তারা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয় সদরের জোট। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করার আগে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তখন আল-সদর পার্লামেন্ট থেকে তাঁর জোটকে প্রত্যাহার করে নেন এবং ঘোষণা করেন যে তিনি সরকার গঠনের আলোচনা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন।

ইরাকের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে চরম বিরোধ বিরাজ করছে। এ কারণে দেশটিতে ১০ মাসেও একটি নতুন সরকার গঠন করা যায়নি। ২০০৩ সালে তেলসমৃদ্ধ দেশটির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন। এরপর এই প্রথম দেশটিতে এত দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিরাজ করছে।

বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে যাওয়া আল-জাজিরার সাংবাদিক দরসা জাব্বারি বলেন, বিক্ষোভকারীরা পরিবর্তন দাবি করছেন। তাঁরা চান না আগের দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতায় থাকুক। তাঁরা চান না দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের কোনো হস্তক্ষেপ থাকুক।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া হায়দার আল-লামি বলেন, ‘আমরা এখানে বিপ্লবের জন্য এসেছি। আমরা দুর্নীতিবাজদের চাই না। আমরা চাই না তারা ক্ষমতায় ফিরে আসুক, যারা ২০০৩ সাল থেকে আমাদের ক্ষতিই করেছে।’