ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ কাল। এই নির্বাচন মূলত রক্ষণশীল বনাম সংস্কারপন্থীর তকমা পেয়েছে। দ্বিতীয় দফা ভোট গ্রহণের আগে গতকাল বুধবার দুই প্রার্থী সাইদ জালিলি ও মাসুদ পেজেশকিয়ান তেহরানে ব্যাপক প্রচার চালান।
গত মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হওয়ার পর দেশটিতে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৮ জুন প্রথম দফার নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফার ভোট হচ্ছে। প্রথম দফার ভোটে ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন সংস্কারপন্থী প্রার্থী পেজেশকিয়ান।
বুধবার তেহরানের গ্র্যান্ড মোসাল্লা মসজিদে সর্বশেষ প্রচার চালান সাইদ জালিলি। তাঁর পক্ষে দেশটির সব রক্ষণশীল প্রার্থী সমর্থন দিয়েছেন। প্রচারের সময় জালিলির হাজারো সমর্থক ‘ইরানের সবাই বলছে জালিলি’ স্লোগান দেন। জালিলি তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলেছেন, তিনি নির্বাচনে জিতলে দেশের সক্ষমতা বাড়বে এবং উন্নতি করবে। তাঁর পক্ষ থেকে প্রয়াত রক্ষণশীল নেতা রাইসির পোস্টার দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো হচ্ছে। তাতে লেখা হয়েছে, সুযোগের বিশ্বে ইরান সামনে এগিয়ে যাবে।
অন্যদিকে তেহরানের এক স্টেডিয়ামে পেজেশকিয়ান তাঁর সর্বশেষ জনসভা করেন। তিনি ঐক্য ও সংহতির ডাক দেন। তাঁর সমর্থকেরা দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট খাতামির নামে স্লোগান দেন। সাবেক সংস্কারপন্থী মোহাম্মদ খাতামি এবারের নির্বাচনে পেজেশকিয়ানকে সমর্থন দিয়েছেন।
ইরানের ৬ কোটি ১০ লাখ ভোটারের মধ্যে প্রথম দফা নির্বাচনে মাত্র ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। দেশটিতে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এটাই সবচেয়ে কম ভোট পড়ার হার।
ইরানের দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে ভোটারদের মধ্যে বিভক্তি দেখা গেছে। তবে দেশটির রক্ষণশীলেরা জালিলিকে সমর্থন দিচ্ছেন। মরিয়ম নাউরি নামের ৪০ বছর বয়সী এক নারী বলেন, দেশের নিরাপত্তার জন্য জালিলিই সবচেয়ে ভালো হবে। নাম প্রকাশ না করে ৩৯ বছর বয়সী আরেক নারী বলেন, জালিলি সৎ ব্যক্তি। তিনি রাইসির পথ অনুসরণ করবেন।
জালিলি মূলত কট্টর পশ্চিমাবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তিনি ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক চুক্তির বিরোধী ছিলেন।
অন্যদিকে পেজেশকিয়ান ইসরায়েল ছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁকে দেশটির মধ্যপন্থী নেতা হাসান রুহানিও সমর্থন দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সক্ষমতা অনুযায়ী অন্তর্দ্বন্দ্ব দূর করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
পেজেশকিয়ানের জনসভায় রঙিন হিজাবসহ নানা বয়সী নারী সমর্থকদের উপস্থিতি দেখা যায়। দেশটিতে হিজাব নীতি পালন না করায় ২০২২ সালে পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর পর বড় ধরনের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। এর পর থেকে নারীরা হিজাব নীতি নিয়ে সোচ্চার। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কঠোর নিয়ম প্রবর্তন করা হয়েছে। বিমা কোম্পানিতে কাজ করা ৪৫ বছর বয়সী সাদেগ আজহারি বলেন, ‘পেজেশকিয়ান জিতলে আমি মনে করি মানুষের ভবিষ্যতের জন্য আশা থাকবে।’