রাফা এখন ভুতুড়ে শহর

রাফা শহরের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। শহরটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলেও ট্যাংকের বহর নিয়ে ব্যাপক হামলা চালাতে দেখা গেছে। 

ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত দক্ষিণ গাজার রাফা শহরফাইল ছবি: এএফপি

গাজা উপত্যকার উত্তরে জাবালিয়া শহরের দিকে ট্যাংকবহর নিয়ে এগিয়ে চলেছেন ইসরায়েলি সেনারা। তাঁদের সুরক্ষা দিতে বিমান থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে। স্থলবাহিনীও বিভিন্ন লক্ষ্যে গোলা ছুড়ছে। গতকাল সোমবার এভাবেই জাবালিয়া শহরের ভেতরে ঢুকে হামলা করে ইসরায়েলি বাহিনী। স্থানীয় বাসিন্দা ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের গণমাধ্যম থেকে বলা হয়, জাবালিয়ায় হামলার পাশাপাশি গাজার দক্ষিণে রাফার উপকণ্ঠের কাছে মূল সড়ক পার হয়ে ইসরায়েলি ট্যাংকবহর ও সেনারা ঢুকে পড়েছেন। এদিকে ইসরায়েলি হামলার মুখে রাফার পূর্বাঞ্চল এখন ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। 

গাজায় যে আটটি শরণার্থীশিবির তৈরি করা হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড়টির অবস্থান জাবালিয়ায়। গতকাল ইসরায়েলি ট্যাংকবহর এ শিবিরের কেন্দ্রস্থলের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে। এ সময় ট্যাংক থেকে শিবিরের কেন্দ্রস্থল লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করা হয়। এ ছাড়া বিমান হামলায় অনেক ভবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

আরও পড়ুন

স্থানীয় বাসিন্দা ও চিকিৎসকেরা বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া রোববার দিবাগত রাতের হামলায় শরণার্থীশিবিরে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসকেরা বলেন, যেসব এলাকায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে উদ্ধারকাজ বা চিকিৎসার জন্য কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়নি। সেখানে ব্যাপক হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। সেখান থেকে হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। 

■ জাবালিয়ার রাস্তায় রাস্তায় ট্যাংক। লোকজন পালাচ্ছেন। 

■ রাফা শহরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছেন ইসরায়েলি সেনারা। 

■ রাফায় ব্যাপক বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। 

এদিকে মিসর সীমান্তের কাছে রাফার পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বোমা হামলা ও গোলাবর্ষণ শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বিমান হামলায় ইতিমধ্যে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, রাফা শহরের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। ফলে রাফার পূর্বাঞ্চল এখন ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। রাফার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলেও ইসরায়েলি সেনা ও ট্যাংকবহরকে ব্যাপক হামলা চালাতে দেখা গেছে। এর আগে গত সপ্তাহে ইসরায়েল রাফার বাসিন্দাদের শহরটি খালি করতে বলেছিল। ১৪ লাখ আশ্রয়হীন মানুষ এ শহরে ঠাঁই নিয়েছিলেন। ইসরায়েলের হিসাবে, এখান থেকে সাড়ে তিন লাখ ফিলিস্তিনি উপকূলের দিকে মানবিক আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে সরে গেছেন। 

আরও পড়ুন

হামাসচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার বলেছে, অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পতন থেকে কয়েক ঘণ্টা দূরে রয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী ক্রসিং ব্যবহার করে জ্বালানি চালান আসা বন্ধ করে দিয়েছে। 

ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জ্যাক লিউ গত রোববার বলেন, রাফায় ইসরায়েল যেভাবে অভিযান চালাচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এখনো গ্রহণযোগ্য। এর আগে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, রাফায় হামলা চালালে ইসরায়েলকে বোমা সরবরাহ করবে না যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেনের এ মন্তব্যের জবাবে লিউ রোববার বলেন, ‘আমি আশা করছি, আমাদের সত্যিকারের মতপার্থক্য থাকবে না।’ 

হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের সেনারা রাফা ও জাবালিয়ায় জবাব দিচ্ছেন। এদিকে ইসরায়েলে গতকাল একাধিকবার রকেট হামলার সাইরেন বাজানো হয়। গত শনিবার ইসরায়েল দাবি করেছিল, জাবালিয়ায় তারা হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এক মাস আগে তারা বলেছিল, জাবালিয়ায় হামাসের বিরুদ্ধে তারা জিতেছে। 

জাবালিয়ার বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সী সাঈদ বলেন, ইসরায়েলি সেনারা সবখানে বোমা মারছেন। স্কুলের কাছাকাছি সব বাড়ি তাঁরা ধ্বংস করে দিচ্ছেন। আবার এখানে যুদ্ধ শুরু হচ্ছে। ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান অভিযোগ করে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে না। গত রোববার তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব হামাস গ্রহণ করলেও তা মানতে ইসরায়েলকে যথেষ্ট চাপ দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। তুরস্কের পক্ষ থেকে দ্রুত গাজায় হামলা বন্ধ করতে ও যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া শর্তহীনভাবে ইসরায়েলকে পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থনের নিন্দাও করেন এরদোয়ান। 

তুরস্ক ইতিমধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করেছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার যে অভিযোগ এনেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, তাতে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছে দেশটি। এরদোয়ান গত রোববার ইস্তাম্বুলে ইসলামি বিশেষজ্ঞদের সামনে বলেন, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাস সম্মত হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকার যুদ্ধ বন্ধ করতে চায় না। নেতানিয়াহুর সরকার রাফায় নিরীহ মানুষদের ওপর হামলা চালাতে চায়। মিসরের পক্ষ থেকেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে আইসিজেতে সমর্থন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।