লেবাননে ইসরায়েলি হামলা, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনা

  • পশ্চিম তীরে গুলিতে নিহত হয়েছেন দুই ইসরায়েলি নারী।

  • পাল্টাপাল্টি হুমকি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ও হামাসপ্রধানের।

পবিত্র আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিদের ওপর ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ। গতকাল শুক্রবার জেরুজালেমে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে
ছবি : এএফপি

পবিত্র রমজান মাসে মুসলিমদের প্রথম কিবলা পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের নির্যাতনের প্রতিবাদে ইসরায়েলে রকেট ছুড়েছেন ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। এ ছাড়াও পশ্চিম তীরে গুলিতে নিহত হয়েছেন দুই ইসরায়েলি নারী। জবাবে লেবানন ও গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

গতকাল শুক্রবার ভোরের আগে লেবানন ও গাজায় বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা বলছে, এ দুটি ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলে কয়েক ডজন রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। জবাবে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ৩৪ দিনের ধ্বংসাত্মক লড়াইয়ের পর এই প্রথম লেবানন থেকে ইসরায়েলে এত বেশি রকেট নিক্ষেপ করা হয়। একই সঙ্গে ২০২২ সালের এপ্রিলের পর এই প্রথম লেবাননে কোনো ধরনের হামলা চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তেলআবিব।

মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাস ও ইহুদিদের পাসওভার উদ্‌যাপন ঘিরে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। দুই পক্ষকেই সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

যেভাবে সংঘাতের শুরু

গত মঙ্গলবার রাতে পবিত্র আল-আকসা মসজিদে অভিযান চালায় ইসরায়েলি পুলিশ। তারা মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায়। এতে ১২ জন মুসল্লি আহত হন। মসজিদ থেকে প্রায় ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিনও মসজিদ প্রাঙ্গণে অভিযান চালায় ইসরায়েলি পুলিশ। অভিযানের সময় তারা মুসল্লিদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। অভিযানকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষ হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, নামাজ আদায়ের জন্য আসা ফিলিস্তিনিদের জোর করে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছে ইসরায়েলের সশস্ত্র পুলিশ। সব৴শেষ দফার এই অভিযানের ঘটনায় ছয়জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট।

বৃহস্পতিবার ভোরে ফজরের নামাজের জন্য মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করতে চাইলে ইসরায়েলি পুলিশ বাধা দেয়। বাধার মুখে শত শত মুসল্লি মসজিদের আশপাশে ফজরের নামাজ আদায় করেন। পরে সকালের দিকে ইসরায়েলি পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় বেশ কিছু ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী আল-আকসা মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে বৃহস্পতিবার ভোরে বেশ কয়েকটি রকেট ছোড়া হয়। একই দিন লেবাননের ভূখণ্ড থেকে ৩০টির বেশি রকেট ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। লেবাননের সেনাবাহিনী বলেছে, সীমান্তবর্তী জলপাই বাগান থেকে ছোড়া একাধিক রকেট নিষ্ক্রিয় করেছে তারা। গতকাল শুক্রবার জেরুজালেমে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন মুসল্লিরা।

দুই ইসরায়েলি নিহত

এদিকে গতকাল দখলকৃত পশ্চিম তীরে একটি গাড়িতে গুলির ঘটনায় দুই ইসরায়েলি নারী নিহত হয়েছেন। আরও এক নারী গুরুতর আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও চিকিৎসকেরা এসব কথা জানান। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, জর্ডান ভ্যালির উত্তরাংশে হামরা জংশনে এক হামলাকারী এ গুলি চালান। নিহত নারীদের পরিচয় তাৎক্ষণিক প্রকাশ করা হয়নি।

জরুরি সেবা সংস্থা মেগান ডেভিড অ্যাডম ২০ বছর বয়সী দুই নারী নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া ৪০ বছর বয়সী এক নারীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানানো হয়েছে। গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণের কয়েক ঘণ্টা পর এই গুলির ঘটনা ঘটে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, এ ঘটনায় হামলাকারীকে ধরতে ওই এলাকার সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

পাল্টাপাল্টি হুমকি

রকেট হামলার ঘটনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের শত্রুদের ওপর হামলা চালিয়ে যাব। যেকোনো ধরনের আগ্রাসনের জন্য তাঁদের মূল্য চোকাতে হবে।’ পাল্টা হুমকি দিয়েছেন হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়াও। তিনি বলেন, পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে তাঁরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। বৃহস্পতিবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বসে এসব কথা বলেন হানিয়া।

সীমান্তে বাহিনী মোতায়েন

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মসজিদে পুলিশি অভিযানকে ঘিরে ছড়িয়ে পড়া সংঘাতের মধ্যে গতকাল লেবানন ও গাজা উপত্যকার সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ইসরায়েল।

তবে এ মুহহূর্তে কোনো পক্ষই চাইছে না এ সংঘাত আরও বিস্তৃত হোক। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মুহূর্তে কোনো পক্ষই চাইছে উত্তেজনা বাড়ুক। শান্ত থাকার জবাব শান্ত থেকেই দেওয়া হবে; এই পর্যায়ে আমি এটাই মনে করছি, অন্তত সামনের কয়েক ঘণ্টার জন্য।’