ব্লিঙ্কেনের সফরে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের ইঙ্গিত নেই
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো মধ্যপ্রাচ্য সফর করলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। সফরের শেষ দিন বৃহস্পতিবার মিসরে পৌঁছান তিনি। তবে তাঁর এ সফরে এখন পর্যন্ত গাজায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলা বন্ধের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
সমালোচকেরা বলছেন, ব্লিঙ্কেনের এ সফর অনেকটাই ‘মুখ রক্ষার’। পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁর এ সফর ‘কূটনৈতিক তৎপরতা’ নাকি নিছকই ‘ভাবমূর্তি রক্ষার চেষ্টা’র অংশ!
৫ জানুয়ারি তুরস্কে পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে এ সফর শুরু করেন ব্লিঙ্কেন। এরপর তিনি একে একে গ্রিস, জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন, ইসরায়েল ও পশ্চিম তীর সফর করেন। গতকাল তিনি মিসরে পৌঁছান।
গাজায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তাই ব্লিঙ্কেনের এ সফরে সবার নজর ছিল ইসরায়েলের প্রতি দেশটির অব্যাহত সমর্থনের ওপর।
গত মঙ্গলবার তেল আবিবে সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন আবারও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তবে তিনি বলেন, গাজায় বেসামরিক লোকজনের হতাহতের সংখ্যা ‘অনেক বেশি’। ব্লিঙ্কেন আরও বলেন, ‘আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব, এই যুদ্ধের অবসান হোক।’
তবে বিশ্লেষকেরা বলেন, ব্লিঙ্কেনের এই সফর ‘মুখ রক্ষার’। ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাও (ডন)-এর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন গবেষণার পরিচালক মাইকেল শেফার ওমের-ম্যান বলেন, যুদ্ধের তিন মাস হয়ে গেলেও এর সমাপ্তি এখনো অধরা। তিনি বলেন, এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা নেই।’
এমন সময় ব্লিঙ্কেন মিসর পৌঁছেছেন, যখন গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় নিয়ে নতুন করে আলোচনা চলছে। বন্দী বিনিময়ের শর্ত হিসেবে গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তবে হামলায় কয়েক দিনের বিরতি দিতে রাজি হলেও স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধে সম্মত হয়নি ইসরায়েল।
এক দিনে ১১২ জন নিহত
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল হালনাগাদ তথ্যে জানিয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ১১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৯৪ জন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর গাজায় ২৩ হাজার ৪৬৯ জন নিহত হলেন আর আহত হয়েছেন ৫৯ হাজার ৬০৪ জন।
এ ছাড়া নিখোঁজ প্রায় সাত হাজার মানুষ। তাঁরা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁদের মরদেহ বাড়িঘর ও বিভিন্ন স্থাপনার ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। প্রথম দিনের শুনানিতে মামলার পক্ষে যুক্তি–তর্ক উপস্থাপন করা হয়। আজ শুক্রবার ইসরায়েলের মৌখিক বক্তব্য শুনবেন আদালত।
গত ডিসেম্বর মাসে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), মালয়েশিয়া, তুরস্ক, জর্ডান ও বলিভিয়া মামলাটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এ ছাড়া আরব লিগ, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, নামিবিয়া, মালদ্বীপ ও পাকিস্তান এ উদ্যোগের প্রতি সংহতি জানিয়েছে।