যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

বিধ্বস্ত ভবনের মধ্যবর্তী একটি সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন কয়েকজন ফিলিস্তিনি। গাজা উপত্যকার গাজা নগরীতে, ১৬ অক্টোবর ২০২৫ছবি: রয়টার্স

রাফা ক্রসিং আবার খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিরা এটা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ত্রাণ পরিবহনে ক্রসিংটি ব্যবহার করা যাবে না।

তবে মিসর সীমান্তবর্তী এ ক্রসিং কবে খুলে দেওয়া হবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি ইসরায়েল। অন্যদিকে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে ইসরায়েল ও হামাস।

হামাসের হাতে এখনো ইসরায়েলের কয়েকজন জিম্মির মরদেহ রয়ে গেছে। এটা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন বাড়ছে।

তা ছাড়া হামাস ও গাজার অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র সমর্পণ এবং গাজার নতুন সরকার কাদের নিয়ে গঠিত হবে, তা নিয়েও মতবিরোধ রয়ে গেছে। এসব টানাপোড়েন ও মতবিরোধ নিয়ে যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদ্রোসিয়ান আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছি এবং চুক্তির বাধ্যবাধকতা মেনে চলছি। হামাসের হাতে এখনো ১৯ জিম্মির মরদেহ রয়েছে। দেরি না করে সেগুলো হস্তান্তর করতে হবে।’

গত সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত হামাস ইসরায়েলের কাছে ১০ জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে। ইসরায়েলের দাবি, হস্তান্তর করা মরদেহগুলোর মধ্যে একটি জিম্মির নয়। তবে হামাস বলেছে, এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা সব জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির সামরিক শাখা বলেছে, অন্য জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তর করার জন্য ভারী যন্ত্রপাতি দরকার। কারণ, সেগুলো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। মরদেহগুলো উদ্ধারের জন্য খননের সরঞ্জাম দরকার।

আজ হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা দাবি করেন, গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েল গাজায় অন্তত ২৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতিমূলক কর্মকাণ্ডের একটি তালিকা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

হামাসের এই নেতা বলেন, দখলদার রাষ্ট্র (ইসরায়েল) মাঠপর্যায়ে চুক্তি লঙ্ঘনের মাধ্যমে তা দুর্বল করে দেওয়ার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।

হামাসের এই অভিযোগ নিয়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। এর আগে তারা জানিয়েছিল, যুদ্ধবিরতির আলোকে ইসরায়েলের সেনারা যেখানে অবস্থান নিয়েছে, সেখানে না যেতে সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল। কিছু ফিলিস্তিনি তা উপেক্ষা করেছেন। তাই ইসরায়েলের সেনারা ‘হুমকি মোকাবিলায় গুলি চালিয়েছেন’।

ইসরায়েল জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী ধাপে হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। কিন্তু হামাস এখন পর্যন্ত এ শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

যেসব স্থান থেকে ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করেছে, শহরের সেসব স্থানে নিরাপত্তা জোরদারের নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে হামাস। ক্ষমতা সংহত করতে তারা বিরোধীদের হত্যা করছে এবং বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে সংঘাতে জড়াচ্ছে।

সোমবার ইসরায়েলের জীবিত সর্বশেষ ২০ জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল।

গাজার বিধ্বস্ত এলাকার একটি দৃশ্য। গাজা নগরীতে, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
ছবি: রয়টার্স

আজ বিকেলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দুই বছরের সংঘাতে নিহত ৩০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ হস্তান্তর করেছে ইসরায়েল। এতে সোমবার থেকে মোট ১২০ ফিলিস্তিনির মরদেহ হস্তান্তর করল দেশটি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার ভিত্তিতে গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। এখন যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্ব চলছে।

২০ দফার একটি প্রস্তাব হলো, যুদ্ধ–পরবর্তী গাজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক ‘স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠাকারী বাহিনী’ গঠন করা হবে। আরেকটি প্রস্তাব ছিল, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন আবার শান্তি আলোচনা শুরু করবে, যাতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায়। কিন্তু ইসরায়েল এখন পর্যন্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী।

আজ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ মুস্তাফা বলেন, ‘গাজার নিরাপত্তা, লজিসটিকস, অর্থনীতি ও শাসনসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’

মুহাম্মদ মুস্তাফা আরও বলেন, গাজার পুনর্গঠন নিয়ে মিসরে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কীভাবে তহবিল সংগ্রহ করা হবে, এই তহবিল কাদের হাতে যাবে এবং তা কীভাবে বণ্টন করা হবে—এসব বিষয় সম্মেলনে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

গাজা শাসন নিয়ে ২০০৭ সালে হামাস ও পশ্চিমাদের সমর্থনপুষ্ট ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য গৃহযুদ্ধ হয়েছিল। এর পর থেকে গাজার শাসনভার হামাসের হাতে রয়েছে।