ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহত ২৪ হাজার ছাড়াল

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেছেন, গাজার বাসিন্দারা এখন ‘নরকে বসবাস করছেন’।

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ফিলিস্তিনের গাজার বেশির ভাগ বাড়িঘর ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে গেছে। ইসরায়েল থেকেই চোখে পড়ে তাদের এ ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ছবি: রয়টার্স

নতুন বছরে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার তীব্রতা বেড়েছে। অবরুদ্ধ এ উপত্যকায় দেশটির নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে গতকাল সোমবার জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহত ফিলিস্তিনিদের প্রায় সাড়ে ১০ হাজারই শিশু।

রোববার গাজায় ইসরায়েলি হামলার ১০০ দিন পূর্ণ হয়। এদিন রাতে দুটি হাসপাতাল, একটি বালিকা বিদ্যালয় এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে গাজার তথ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই গাজার হাসপাতালগুলোতে বারবার হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এতে সেখানকার বেশির ভাগ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ১৩২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৫২ জন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘হতাহত ব্যক্তিদের কয়েকজন এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে ও সড়কে পড়ে আছে। অব্যাহত হামলার কারণে অ্যাম্বুলেন্স ও উদ্ধারকর্মীরা তাঁদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।’

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর এ নিয়ে গাজায় ২৪ হাজার ১০০ জন নিহত হলেন। নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ১০ হাজার ৪ শতাধিক শিশু রয়েছে, যা অবরুদ্ধ এ উপত্যকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ। আহত হয়েছেন ৬০ হাজার ৮৩৪ জন। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন ৮ হাজারের বেশি।

৮৫ শতাংশ বাসিন্দাই বাস্তুচ্যুত

ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকার বেশির ভাগই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, এ যুদ্ধ সেখানকার ২৪ লাখ মানুষের জন্য মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজার মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গাদাগাদি করে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা এসব মানুষকে খাবার, পানি, জ্বালানি ও স্বাস্থ্যসেবা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

মিসর সীমান্তবর্তী গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা রাফায় আশ্রয় নিয়েছেন উত্তর গাজার বাসিন্দা মোহাম্মদ কাহিল। তিনি বলেন, ‘এখানে খাবার-পানি নেই। নেই ঘর গরম রাখার ব্যবস্থাও। তীব্র শীত আমাদের কাবু করে ফেলেছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, গাজার বাসিন্দারা এখন ‘নরকে বসবাস করছেন’। অবরুদ্ধ এ উপত্যকায় অত্যাসন্ন দুর্ভিক্ষ নিয়ে এর আগে জাতিসংঘের দেওয়া হুঁশিয়ারিই তাঁর বক্তব্যে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে ডব্লিউএইচওর পাশাপাশি বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) ও ইউনিসেফ বলেছে, গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ ঠিক রাখতে মৌলিক পদক্ষেপে একটি পরিবর্তন আনা জরুরিভাবে প্রয়োজন। নিরাপদ ও দ্রুততার সঙ্গে ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিতে সীমান্তপথ খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো।

সংঘাত বাড়ছে পশ্চিম তীরেও

গাজার পাশাপাশি দখলকৃত পশ্চিম তীরেও অভিযান জোরদার করেছে ইসরায়েল। সেখানে পৃথক তিনটি ঘটনায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরও রয়েছে। গত রোববার এসব ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের সূত্র থেকে এএফপি এ তথ্য জানতে পেরেছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে সহিংসতা বাড়তে দেখা গেছে। তখন থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযান ও ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় কমপক্ষে ৩৪৩ জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর পশ্চিম তীরে ৫২০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে।

এ ছাড়া লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তেও প্রাণঘাতী সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে এক ইসরায়েলি সেনা ও তাঁর মা নিহত হয়েছেন।

শান্তি সম্মেলনের প্রস্তাব চীনের

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত অবসানে দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধান বাস্তবায়নে দিনক্ষণ ঠিক করতে একটি চূড়ান্ত শান্তি সম্মেলনের আহ্বান জানিয়েছে চীন। দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই এ আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বেইজিংয়ে গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ রূপকল্প অর্জনে দেশটির প্রস্তাবিত সম্মেলন থেকে অবশ্যই ‘বাধ্যবাধকতাসহ’ কার্যকর ফল আসতে হবে।

মাও নিং বলেন, ‘সম্মেলন কবে এবং কোথায় অনুষ্ঠিত হবে, সব পক্ষ মিলে আলোচনার মাধ্যমে তা ঠিক করা উচিত বলে আমি মনে করি। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ভূমিকাকেও স্বাগত জানায় চীন।’