হামাসকে আংশিক নির্মূলের দাবি

উত্তর গাজায় হামাসের সামরিক কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে দেওয়ার দাবি করে ইসরায়েল বলেছে, এবার মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় নজর তাদের।

ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন এএফপি ও আল-জাজিরার দুই সাংবাদিক। হামলার পর সাংবাদিকেরা যে গাড়িটিতে করে যাচ্ছিলেন, তা পরীক্ষা করে দেখছেন উদ্ধারকর্মীরা। গতকাল দক্ষিণ গাজার রাফায়ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা চতুর্থ মাসে গড়িয়েছে। এ সময় উপত্যকাটির শাসকগোষ্ঠী হামাসের সামরিক কাঠামো আংশিক ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল বাহিনী।

একই সঙ্গে হামাসকে পুরোপুরি নির্মূলে গাজাজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এতে প্রতিদিনই উপত্যকাটিতে বাড়ছে লাশের সারি।

গত শনিবার ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, উত্তর গাজায় হামাসের সামরিক কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে দিয়েছে তারা। এবার মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় একই লক্ষ্য পূরণে নজর দেবে ইসরায়েলের সেনারা।

ইসরায়েল ও জর্ডান সীমান্ত অঞ্চলে উত্তেজনা যেন ছড়িয়ে না পড়ে, তা আমরা নিশ্চিত করতে চাই।
ইসরায়েল ও জর্ডান সীমান্ত অঞ্চলে উত্তেজনা যেন ছড়িয়ে না পড়ে, তা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইসরায়েলের এমন দাবির মধ্যে শনিবার রাতে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। বোমার আঘাতে হতাহতের ভিড় দেখা গেছে স্থানীয় হাসপাতালগুলোয়। খান ইউনিসের ইউরোপিয়ান হাসপাতাল থেকে মোহামেদ আওয়াদ নামের একজন সাংবাদিক বলেন, ‘আমার ভাই, ভাবি, তাঁর সন্তানেরা ও আত্মীয়স্বজন—সব মিলিয়ে বোমার আঘাতে ২০ জনের বেশি মারা গেছেন।’

গাজার দক্ষিণে মিসর সীমান্তবর্তী রাফা এলাকায়ও শনিবার বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মুখে প্রাণ বাঁচাতে এ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে গাজার লাখ লাখ মানুষ।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। সেদিন থেকেই গাজায় অব্যাহত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এখন পর্যন্ত হামলায় উপত্যকাটিতে ২২ হাজার ৮৩৫ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৯ হাজার ৬০০ শিশু রয়েছে। এ সময়ে ইসরায়েলের হামলায় আহত হয়েছেন ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ।

এদিকে শনিবার রাতে দখল করা পশ্চিম তীরের জেনিন এলাকায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীরে হামলায় ৩২৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হলো।

দুই সাংবাদিক নিহত

গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল রোববার জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বিমান হামলায় দুই সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন এএফপির সাংবাদিক মুস্তফা থুরিয়া ও আল–জাজিরার সাংবাদিক হামজা ওয়ায়েল দাহদুহ। হামলার সময় তাঁরা একটি গাড়িতে ছিলেন।

হামজার বাবা ওয়ায়েল আল–দাহদুহ গাজায় আল–জাজিরার ব্যুরোপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি এক হামলায় তিনিও আহত হয়েছিলেন। এর আগে ইসরায়েলের পৃথক হামলায় নিহত হয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান।

সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর গাজা সংঘাত শুরুর পর থেকে গত বছরেই উপত্যকাটিতে ৭৭ জন সংবাদকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৭০ জন ফিলিস্তিন, চারজন ইসরায়েল ও তিনজন লেবাননের বাসিন্দা।

ব্লিঙ্কেন–বোরেলের তৎপরতা

গাজার সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এবং উপত্যকাটিতে মানবিক সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে তৎপরতা চালাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল।

ব্লিঙ্কেন বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য সফরে রয়েছেন। গতকাল তিনি জর্ডানে অবস্থান করছিলেন। এর আগে গ্রিসে যাত্রাবিরতিতে সংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলোর একটি হলো ইসরায়েল ও জর্ডান সীমান্ত। এ অঞ্চলে কোনো উত্তেজনা যেন ছড়িয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্ভাব্য সবকিছু করতে চাই।’

জর্ডানে দেশটির বাদশাহ আবদুল্লাহের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ব্লিঙ্কেনের গতকালই কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার কথা ছিল। মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে তিনি ইসরায়েল ও পশ্চিম তীরও পরিদর্শন করবেন।

এদিকে শনিবার জোসেপ বোরেল লেবাননের রাজধানী বৈরুত সফরে যান বলে জানিয়েছে ইইউ সূত্র।

ইসরায়েলে বিক্ষোভ

এদিকে শনিবার ইসরায়েলের তেল আবিব ও জেরুজালেমে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগ, গাজায় জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তি এবং সংঘাত বন্ধের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।