টনি ব্লেয়ার কি গাজায় অন্তর্বর্তী প্রশাসনের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে সেখানে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন পরিচালনার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। এমনটা জানতে পেরেছে বিবিসি।
২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাজ্যকে জড়িয়েছিলেন টনি ব্লেয়ার। তিনি গাজায় যুদ্ধ বন্ধে এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে করছেন বলে জানা গেছে।
চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘে ট্রাম্প ও আরব নেতাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় তাঁরা একটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবের মূল বিষয় হলো—যুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গাজার দায়িত্ব নেবে। প্রশাসনকে জাতিসংঘ সমর্থন দেবে এবং আরব দেশগুলো সহায়তা করবে। গাজার দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার আগপর্যন্ত এ প্রশাসন কার্যকর থাকবে।
এক প্রস্তাবে টনি ব্লেয়ারকে গাজার অন্তর্বর্তী প্রশাসনের দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এ প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে টনি ব্লেয়ারের কার্যালয় বলেছে, তিনি এমন কোনো পদক্ষেপ সমর্থন করবেন না, যা গাজার মানুষকে তাদের জমি বা বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করবে।
গত আগস্টে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নেন টনি ব্লেয়ার। যুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে গাজা কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ জানান, ওই বৈঠককে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনার’ কথা বলা হলেও সুনির্দিষ্ট কিছু জানানো হয়নি।
টনি ব্লেয়ার ২০০৭ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও জাতিসংঘের পক্ষে মধ্যপ্রাচ্য দূত হিসেবে কাজ করেছিলেন। তাঁর কাজের মূল লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের জন্য উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করা।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে টনি ব্লেয়ার ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। আন্তর্জাতিক মহলে ওই সিদ্ধান্তের ব্যাপক সমালোচনা হয় এবং পরবর্তী সময়ে যুদ্ধসংক্রান্ত সরকারি তদন্তে বলা হয়, তিনি তৎকালীন গোয়েন্দা তথ্যের ভুল ও অসম্পূর্ণতার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, বিশেষ করে ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির বিষয়ে নিশ্চিত না হয়েই।
গাজার অন্তর্বর্তী প্রশাসন নিয়ে আলোচনায় ব্লেয়ারের সম্পৃক্ততার খবর এমন এক সময়ে সামনে এল, যখন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন, তিনি দুই রাষ্ট্রভিত্তিক শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ভবিষ্যতে গাজার শাসনব্যবস্থায় হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না এবং সংগঠনটিকে নিরস্ত্র হতে হবে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। পরে ফ্রান্স, ডেনমার্কসহ আরও কয়েকটি দেশ স্বীকৃতি দেয়। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে এটিকে হামাসকে পুরস্কৃত করার শামিল বলে অভিহিত করেছে।
যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, এই কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের অর্থ হলো, হামাসের কোনো ভবিষ্যৎ নেই এবং সরকার বা নিরাপত্তা কাঠামোয় তাদের কোনো জায়গা হবে না।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে বন্দী করে গাজায় নেওয়া হয়। সেদিন থেকে গাজায় নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৬৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী। জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন বলেছে, ইসরায়েল গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। যদিও ইসরায়েল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।