২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

উত্তর গাজা বিচ্ছিন্নের পরিকল্পনা

ফাইল ছবি: রয়টার্স

জিম্মিদের মুক্ত করতে ফিলিস্তিনের গাজার প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে চাপে রাখার নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে ইসরায়েল। পরিকল্পনা অনুযায়ী উত্তর গাজাকে অবরুদ্ধ করা হচ্ছে। সেখানকার সব বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে হামাস যোদ্ধাদের ক্ষুধায় রেখে জিম্মি মুক্তিতে সিনওয়ারকে চাপ দিতে চায় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার।

এরই অংশ হিসেবে উত্তর গাজায় বড় পরিসরে স্থল অভিযান চালানো হচ্ছে। সেখানকার নতুন নতুন এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে খাদ্য সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

কয়েক সপ্তাহ আগে নেতানিয়াহু ওই এলাকাকে অবরুদ্ধ করে হামাস যোদ্ধাদের না খাইয়ে রাখা এবং জিম্মি মুক্তিতে চাপ দিতে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণের কথা ভাবছেন—এমন খবরের মধ্যেই এ অভিযান শুরু হয়েছে।

১ অক্টোবর থেকে গাজায় কোনো ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে গত শুক্রবার জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। এতে অবরুদ্ধ এই উপত্যকার ১০ লাখ মানুষ ক্ষুধার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

উত্তর গাজার জাবালিয়ায় হামাস যোদ্ধাদের উপস্থিতি ও তাঁদের অবকাঠামোর বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর গত সপ্তাহে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ওই এলাকায় হামাস নতুন করে হামলা চালানোর সামর্থ্য অর্জনের চেষ্টা করছে বলেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়; কিন্তু বাস্তবে নতুন করে যে স্থল অভিযান চালানো হচ্ছে, তা শুধু জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরেই সীমাবদ্ধ নেই।

‘দ্য জেনারেলস প্ল্যান’

উত্তর গাজাকে এভাবে অবরুদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জিওরা আইলান্দ। অবশ্য চারটি সূত্র সিএনএনকে বলেছে, আইলান্দের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেনি নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা। তবে আইলান্দের প্রস্তাবের সঙ্গে নেতানিয়াহুর কর্মকাণ্ডের মিল রয়েছে।

নীতিনির্ধারণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হলেও ইসরায়েলি সরকার ও ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে জানাশোনা আছে, এমন একজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, হুবহু না হলেও ‘আইলান্দের প্রস্তাবের একটি সংস্করণ’ গ্রহণ করেছে মন্ত্রিসভা, যা ‘দ্য জেনারেলস প্ল্যান’ নামে পরিচিত।

আইলান্দ সিএনএনকে বলেছেন, এই দাবি পুরোপুরি সত্য। তবে তিনি বলেন, তাঁর দেওয়া প্রস্তাব এবং বর্তমানে প্রকৃত অর্থে মাঠে যেটা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।

এমন সময় উত্তর গাজায় এ অভিযান চালানো হচ্ছে, যখন গাজা যুদ্ধ নতুন মাত্রায় শুরু করতে কয়েকটি পরিকল্পনা বিবেচনা করছে ইসরায়েল সরকার।

আইলান্দের গত মাসে দেওয়া প্রস্তাবে গাজা নগরীসহ উত্তর গাজার সব বাসিন্দাকে ওই এলাকা ছাড়তে বাধ্য করার কথা বলা হয়। এরপর সেখানে সব ধরনের সরবরাহব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ারও প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি বলেন, এর উদ্দেশ্য হলো, যুদ্ধকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়া এবং হামাস নেতা সিনওয়ারের সব হিসাবনিকাশ ওলটপালট করে দেওয়া।

এদিকে উত্তর গাজার বাসিন্দারা বলছেন, বেইত হানুন, জাবালিয়া ও বেইত লাহিয়াকে গাজা নগরী থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে যাওয়া-আসা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় আরও ৫২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২৮ জন। এ নিয়ে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৪২ হাজার ২২৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৮ হাজার ৪৬৪ জন।

শান্তিরক্ষী বাহিনীর ফটক ভাঙল ইসরায়েলি ট্যাংক

লেবাননে থাকা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে ইসরায়েল। গতকাল ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো শান্তিরক্ষীদের অবস্থানগুলোর মধ্যে ঢুকে পড়েছে। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী (ইউনিফিল) বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনীর দুটি ট্যাংক তাদের অবস্থান এলাকা রামিয়ার দুটি ফটক ভেঙে ফেলেছে। জোরপূর্বক তাদের অবস্থানে ঢুকে আলো বন্ধ করতে আদেশ করেছে। এর দুই ঘণ্টা পর কাছাকাছি অবস্থানে গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে। দক্ষিণ লেবাননে মোতায়েন করা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে নিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আহ্বানের পর এমন ঘটনা ঘটল। এর আগে সম্প্রতি ইসরায়েলের গোলাবর্ষণে পাঁচজন শান্তিরক্ষী আহত হন।

ইসরায়েলে সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধীব্যবস্থা (থাড) ও তা চালাতে সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছিল। পেন্টাগনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।