রক্তবর্ণ ইরানের হরমুজ দ্বীপের উপকূলের পানি, কারণ কী
অঝোরে বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টির পানি মাটিতে পড়ার পরপরই ধারণ করছে টকটকে লাল রং। এরপর সেই পানি গিয়ে মিশছে সাগরে। ফলে যত দূর চোখ যায়, সাগরের পানিও রক্তবর্ণের দেখা যাচ্ছে। বিচিত্র এ দৃশ্য ইরানের দক্ষিণে হরমুজ দ্বীপের। এ দ্বীপের অবস্থান পারস্য সাগরের হরমুজ প্রণালিতে।
পানি লাল বর্ণের হয়ে যাওয়াটা কি অলৌকিক কোনো ঘটনা? অবশ্যই নয়। বৃষ্টি হলেই হরমুজ দ্বীপে এমন ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়, যেমন দেখা গেছে গত মঙ্গলবার। আসলে এই রঙের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে দ্বীপটির ভূখণ্ডের, বিশেষ করে এর মাটির। স্থানীয় লোকজন এই মাটির নাম দিয়েছেন ‘গোলাক’।
হরমুজের মাটিতে লোহা বা আয়রন অক্সাইডের পরিমাণ অত্যধিক বেশি। বৃষ্টির পানি এই লোহার সঙ্গে মিশে লাল রং ধারণ করে। আরেকটু ব্যাখ্যা করে বললে, লোহা পানির সঙ্গে মেশার পর আলোর স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলো শোষণ করে নেয়। আর লাল রঙের দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলিত করে। ফলে আমরা পানি লাল দেখি।
হরমুজ দ্বীপটি ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে ৬৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে। এখানে বৃষ্টি সাধারণত বেশ কম হয়। শুধু শীতকাল ও বসন্তের শুরুতে বৃষ্টির দেখা মেলে। পর্যটকেরা অনেকেই এই বৃষ্টিকে ‘ব্লাড রেইন’ বা ‘রক্তবৃষ্টি’ বলে থাকেন। তবে বৃষ্টির পানি কিন্তু মাটিতে পড়ার আগপর্যন্ত স্বাভাবিক রঙেই থাকে।
হরমুজের মাটি শিল্পকারখানায় এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক কাজেও ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকের কারণে দ্বীপের মাটিতে লাল ছাড়াও হলুদ, কমলা ও বিভিন্ন রঙের ছাপ দেখা যায়। এর জন্য হরমুজের আরেকটি নাম রয়েছে—‘রংধনু দ্বীপ’। এই দ্বীপের সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে প্রতিবছর সেখানে ছুটে যান বহু পর্যটক।
মঙ্গলবারের ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় ভাইরাল হয়েছে। সেখানে নানা মন্তব্য করেছেন মানুষ। একজন লিখেছেন, ‘এমন রঙের কারণেই হয়তো লোহিত সাগর নামের ধারণাটা এসেছিল।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘আশা করি, কোনো বিরল খনিজের জন্য এমনটা হয়নি। না হয় আবার সুন্দর এই দ্বীপে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়ে যাবে।’