‘র‌্যামপেজ’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল

ইসরায়েলি বাহিনী এ ধরনের কোনো জঙ্গিবিমান থেকে ইরানের আকাশ সীমার বাইরে থেকে ইস্পাহান শহরে পারমাণবিক স্থাপনার রাডার লক্ষ্য করে ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেফাইল ছবি: রয়টার্স

ইরানে হামলা চালাতে অত্যাধুনিক ‘র‌্যামপেজ (তাণ্ডব)’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। সংবাদমাধ্যমগুলোর একাধিক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে। গত শুক্রবারের এ হামলায় ব্যবহার করা আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রটি দৃশ্যত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফাঁকি দিতে সক্ষম।

বাংকারের মতো সুরক্ষিত স্থাপনায় হামলা চালাতে র‌্যামপেজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা হয়েছে। টাইমস অব ইসরায়েল–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন ৫০০ কেজি। ইসরায়েলভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম কান বলেছে, ছবি দেখে ক্ষেপণাস্ত্রটি শনাক্ত করা হয়েছে। হামলার ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির মাত্রার সঙ্গে এর মিল রয়েছে।

এর আগে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনার কাছে হামলা চালাতে ইসরায়েল উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফাঁকি দিতে সক্ষম।

দুজন পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেন, হিসাব-নিকাশ করে এ হামলা চালানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, ইরানকে এই বার্তা দেওয়া যে অশনাক্ত থেকেই ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারে ইসরায়েল এবং সেগুলোকে অচল করে দিতে পারে।

এখন পর্যন্ত এ হামলা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল। এ ছাড়া হামলার ঘটনাকে ইরানও তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না।

হামলায় ক্ষয়ক্ষতির ছবি প্রকাশ

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইস্পাহান শহরের একটি বিমানঘাঁটিতে ইসরায়েলের চালানো হামলায় সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি স্যাটেলাইটে ধরা পড়া কিছু দৃশ্যে দেখা গেছে। আজ রোববার সকাল পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ধারণ করা হয় এসব দৃশ্য।

বিবিসি ভেরিফাই দুটি দৃশ্য বিশ্লেষণ করেছে। তাতে দেখা যায়, হামলায় ইস্পাহানের ওই বিমানঘাঁটির একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় ইস্পাহান শহরের কাছে একটি পারমাণবিক স্থাপনার সুরক্ষায় নিয়োজিত রাডার-ব্যবস্থা লক্ষ্য করে ইসরায়েল ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় বলে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান।

মার্কিন ওই কর্মকর্তা এবিসি নিউজকে বলেন, শুক্রবার ভোরে ইরান সীমান্তের বাইরে থেকে ইসরায়েলি জঙ্গি বিমান তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।

এদিকে নাম প্রকাশ না করে ইরানের কর্মকর্তাদের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস–এর খবরে বলা হয়, বিমানঘাঁটিতে ওই হামলা ছাড়াও ইস্পাহানের প্রায় ৫০০ মাইল উত্তরে তাবরিজ এলাকা লক্ষ্য করেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তবে এ হামলা নস্যাৎ করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোর চারটার দিকে ইস্পাহানে বিকট শব্দে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় আকাশে দেখা দেয় আলোর ঝলকানি। এ ঘটনার পর রাজধানী তেহরানসহ ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের আকাশসীমা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এর আগে এ মাসের শুরুতে সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাসে ইসরায়েলের হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ কয়েকজন নিহত হন। জবাবে ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তবে ইরানের এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ৯৯ শতাংশই আকাশে ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক বাহিনী।