জ্বলন্ত তাঁবু দেখিয়ে শিশুটি বলেছিল, ‘বাবা ভেতরে আছে’

শিশু হামাদের চাওয়া—যুদ্ধ বন্ধ হোক, যেন সবাই নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারেছবি: ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট

গাজা উপত্যকার রাফা শহরের শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি হামলার পর আগুনে পুড়ছিল সেখানকার বেশ কিছু তাঁবু। এমনই একটি তাঁবুর ভেতর পুড়ছিলেন ফিলিস্তিনি শিশু ওমর হামাদের বাবা। ৯ বছর বয়সী এই শিশু অসহায়ভাবে তাঁবুর সামনে দাঁড়িয়ে আহাজারি করছিল। সম্প্রতি গাজা উপত্যকার এক আলোকচিত্রী তাঁর ক্যামেরায় ভিডিও চিত্রটি ধারণ করেন।

ওই ভিডিওতে শিশুটিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার বাবা শেষ হয়ে গেল...আমি কোথায় যাব?’ তখন ওই আলোকচিত্রী শিশুটির কাছে জানতে চান ‘তোমার বাবা কোথায়?’ শিশুটি তখন আঙুলের ইশারায় জ্বলন্ত তাঁবুটি দেখিয়ে বলে, ‘বাবা ভেতরে আছেন।’

২৬ মে রাফায় ওই আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলি বোমা হামলায় বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হন। বোমা হামলার পর আশ্রয়কেন্দ্রের তাঁবুগুলোতে আগুন ধরে যায়। সেদিন ওমর হামাদের মতোই স্বজনহারা হতে হয় আরও অনেককে।
শিশু হামাদের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে আল–জাজিরা।

আল–জাজিরাকে শিশুটি জানায়, শিবিরে ইসরায়েলি হামলার সময় হামাদের বাবা তাঁর বন্ধুর তাঁবুতে ছিলেন। ইসরায়েলি বোমা হামলার পর সে তাঁবুতে আগুন ধরে যায়। সেখানে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই মারা গেছেন।

হামাদও বাবার সঙ্গে বাবার বন্ধুর তাঁবুতে ছিল। বাবা তাকে নিজেদের তাঁবুতে চলে যেতে বলেছিলেন। শিশু হামাদ যখন তাদের তাঁবুর দিকে যাচ্ছিল, তখনই বাবার বন্ধুর তাঁবুতে ইসরায়েলি বোমা পড়ে এবং আগুন ধরে যায়।

আল–জাজিরাকে ঘটনা বর্ণনা করে হামাদ বলে, ‘আমি পাগলের মতো দৌড়াচ্ছিলাম আর চিৎকার করে বলছিলাম ‘আমার বাবা কোথায়?’ তাঁবুতে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁকে বের করে আনা যাচ্ছিল না। তাঁকে বের না করে আনা পর্যন্ত সবাই বালতিতে করে তাঁবুর দিকে পানি ছুড়ছিল।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, বেশ কয়েকজন এত বেশি দগ্ধ হয়েছেন যে তাঁদের বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। হামাদের বাবাকেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসাকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে হামাদের বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। এ জন্য বাবার সঙ্গে শেষ সময়টুকুতে দেখা করার সুযোগ পায়নি হামাদ।

আরও পড়ুন

আল–জাজিরাকে শিশুটি বলে, ‘তাঁরা তাঁকে নিয়ে গেল। আর আমি কান্না করছিলাম আর পেছন পেছন দৌড়াচ্ছিলাম। তাঁরা আমাকে তাঁর সঙ্গে যেতে দেননি। আমি একা বসেছিলাম আর ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’    

শিশু ওমর হামাদ বলে, কোনো দিন বাবাকে হারিয়ে ফেলতে হবে, তা সে কখনো কল্পনাও করেনি। সে সব সময় বাবার সঙ্গী হয়ে থাকত। বাবা যেখানে যেতেন, তাকে নিয়ে যেতেন। বাবা তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময়ও তাকে নিয়ে যেতেন।

হামাদের মতো গাজা উপত্যকার অনেক শিশুই প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে। ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর সেখানকার কমপক্ষে ২৫ হাজার শিশু অনাথ হয়েছে।

শিশু হামাদের চাওয়া, যুদ্ধ বন্ধ হোক। যেন সবাই নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারে। সবাই যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে।