গাজা এখন ‘মর্ত্যের নরক’

ফিলিস্তিনের গাজার বর্তমান পরিস্থিতিকে নরকের সঙ্গে তুলনা করেছেন জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। হামলার পর ধ্বংসযজ্ঞ দেখছেন ফিলিস্তিনিরা। গতকাল ভোরে রাফাহ এলাকায়ছবি: এএফপি

ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় দৃশ্যত গুঁড়িয়ে গেছে ফিলিস্তিনের গাজার উত্তরাঞ্চল। তখন সেখানকার বাসিন্দাদের দক্ষিণ গাজায় সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজায় উপর্যুপরি হামলা চালায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও ট্যাংক। গাজার পরিস্থিতিকে নরকের সঙ্গে তুলনা করেছেন জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা।

গত সপ্তাহে দক্ষিণ গাজার প্রধান শহর খান ইউনিসে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। নগরীর কেন্দ্রস্থল লক্ষ্য করে ইসরায়েলি ট্যাংক গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

এক বাসিন্দা জানান, গতকাল সকালে হামাস নেতা ইয়াহিয়া আল-সিনওয়ারের বাড়ির সড়কে ট্যাংক চলাচল করতে দেখা গেছে। বয়োবৃদ্ধ বাসিন্দা তাওফিক আবু ব্রেইকা বলেন, কোনো ধরনের পূর্বসতর্কতা ছাড়াই খান ইউনিসের আবাসিক এলাকাগুলোতে গতকাল নতুন করে হামলা চালানো হয়। এতে বহু ভবন ধসে পড়েছে। অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

ব্রেইকা রয়টার্সকে বলেন, ‘বিশ্বে বিবেকবোধ হারিয়ে গেছে। কোনো ধরনের মানবিকতা কিংবা নীতি-নৈতিকতাবোধ অবশিষ্ট নেই।’ তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে তৃতীয় মাসে আমরা মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের সম্মুখীন। এটা জাতিগত নিধন। গাজা উপত্যকাকে ধ্বংস করা এবং গোটা জনগোষ্ঠীকে বাস্তুচ্যুত করাই (ইসরায়েলের) উদ্দেশ্য।’

আগের দিন রাতে আরও দক্ষিণে মিসর সীমান্তবর্তী রাফাহ এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিশুসহ ২২ জন নিহত হন বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পরে সেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে আরও দুটি মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে আল-জাজিরা।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এতে ১ হাজার ১৫০ জনের মতো নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। এ ছাড়া ২৪০ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে আসেন ফিলিস্তিনি যোদ্ধার।

জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ১৮ হাজার ৪১২ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার।

গাজা ‘মর্ত্যের নরক’

ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজায় ত্রাণকাজ পরিচালনাও সম্ভব হচ্ছে না। সেখানকার পরিস্থিতিকে নরকের সঙ্গে তুলনা করেছেন ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক জাতিসংঘের কমিশনার জেনারেল ফিলিপ্পে লাজ্জারিনি। তিনি বলেন, গাজা এখন ‘মর্ত্যের নরক’।

এমন সময় লাজ্জারিনি এমন মন্তব্য করলেন, যখন গাজা নগরীর কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে অবরুদ্ধ করে রাখা ও হামলা চালিয়ে আসার পর দখলদার বাহিনী কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অভিযান শুরু করেছে। স্বাস্থ্যকর্মীসহ পুরুষদের হাসপাতাল চত্বরে ঘিরে রেখেছে সেনারা।’

এর আগে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সমন্বয় দপ্তর (এসিএইচএ) জানিয়েছিল, হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে হামলায় দুই মা নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত প্রায় তিন হাজার মানুষ সেখানে আটকা পড়েছেন। সেখানে খাবার, পানি ও বিদ্যুতের চরম সংকট ।

এদিকে মেডিকেল এইড ফর প্যালেস্টিনিয়ানস নামের একটি সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেলানি ওয়ার্ড বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছি, যা গাজায় কাজ করে আমাদের এমন কেউ আগে কখনো দেখেনি।’ মেলানি বলেন, এমনকি ত্রাণ এসে পৌঁছালেও সেগুলো লোকজনের মধ্যে বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটি

গাজায় অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবের ওপর গতকাল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটি হওয়ার কথা। ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অবশ্য সাধারণ পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাব মানা বাধ্যতামূলক নয়। যদিও এর রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। বিষয়টি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে।

গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে গত শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। প্রস্তাবটিতে ভেটো দেয় নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র। এতে গাজায় রক্তপাত থামানোর প্রয়াস ব্যর্থ হয়।