ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর ইরান-সৌদি আরবের বৈঠক

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি (বাঁয়ে) ও সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি আরবের জেদ্দায়, ৮ জুলাই ২০২৫ছবি: রয়টার্স

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি গতকাল মঙ্গলবার জেদ্দায় সৌদি আরবের কার্যত নেতা (ডি ফ্যাক্টো) যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির দুই সপ্তাহের মাথায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।

আজ বুধবার ভোরে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে এই কথা জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বৈঠকে বলেন, তাঁরা আশা করেন, এই যুদ্ধবিরতি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখবে। তিনি কূটনৈতিক উপায়ে আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির পক্ষে রিয়াদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মাসে ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করায় রিয়াদকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আরাগচি। একই সঙ্গে তিনি সৌদি নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

গত মাসে ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলাকে ‘আগ্রাসন’ ও ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে মন্তব্য করেছিল সৌদি আরব। একই সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছিল দেশটি।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাকাই বলেন, আব্বাস আরাগচি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ ফয়সাল বিন ফারহান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী যুবরাজ খালেদ বিন সালমানের সঙ্গে ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’ করেছেন। আলোচনায় তাঁরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আঞ্চলিক উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেছেন।

ইসরায়েল গত ১৩ জুন ইরানের ওপর নজিরবিহীন বোমা হামলা শুরু করে। এতে সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা ছাড়াও আবাসিক এলাকাও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। হামলায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বেসামরিক মানুষ হতাহতের শিকার হন। এটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

তেহরানের তথ্যমতে, ইসরায়েলের হামলায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের বেশ কিছু উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীরাও রয়েছেন।

জবাবে ইরানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিকে ইসরায়েলে হামলা চালায়। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ইরানের হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র গত এপ্রিল থেকে ইরানের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে আসছিল। কিন্তু ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ইরানে হামলা চালায়। এতে দেশটির কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা নিশানা করা হয়।

এর পর থেকে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার আলোচনা স্থগিত হয়ে আছে। তবে ২৪ জুন থেকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে নতুন করে পরমাণু আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরান ও সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই আঞ্চলিক সংঘাতে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে। এই দুই শক্তির মধ্যে বিরোধের প্রধান দুটি ক্ষেত্র সিরিয়া ও ইয়েমেন।

দুই দেশ ২০১৬ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় দেশ দুটি সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে।

তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা মোহাম্মদ বিন সালমানের একটি বিশেষ কূটনৈতিক সাফল্য। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি আঞ্চলিক কূটনীতিতে তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ ও সমঝোতামূলক অবস্থানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।