সিরিয়ার শারার সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার শর্ত
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাসহ সিরিয়াকে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব প্রস্তাবের পক্ষে সম্মতির ইঙ্গিত পাওয়ার পরই সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে ওয়াশিংটন।
শুধু তা–ই নয়, এখনো নিজেদের সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গেও বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের মতে, ‘সিরিয়াকে মহান হওয়ার জন্য আরেকটি সুযোগ’ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আল-শারার সঙ্গে বৈঠকের কথা ট্রাম্প নিজেই নিশ্চিত করেন। এটি গত ২৫ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে প্রথম বৈঠক। বৈঠকে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও লিংকে যোগ দিয়েছিলেন সিরিয়ার প্রভাবশালী প্রতিবেশী তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
রিয়াদে বুধবার সকালে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটন সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা করছে, যাতে দেশটি ‘মহান হওয়ার আরেকটি সুযোগ’ পায়। সিরিয়ার ওপর থেকে ‘সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া একটি সম্মানের ব্যাপার’ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, রিয়াদে বৈঠকে ট্রাম্প সিরিয়ার সামনে পাঁচটি প্রস্তাব হাজির করেছেন। এর মধ্যে আব্রাহাম চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাও রয়েছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাঁরই মধ্যস্থতায় ঐতিহাসিক আব্রাহাম চুক্তিতে সই করে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর মধ্য দিয়ে দেশ দুটি ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।
এখন ট্রাম্পের আশা, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার আরও কয়েকটি দেশ আব্রাহাম চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করবে।
ট্রাম্প বৈঠকে সিরিয়ার কাছে আরও প্রস্তাব রাখেন, দেশটিকে সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতে হবে। এর অংশ হিসেবে ‘ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী’দের সিরিয়া থেকে বিতাড়িত করতে হবে। উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় থাকা আইএসের বন্দিশিবিরগুলোর দায়িত্ব নিতে হবে।
জিসিসি সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে চাই। তবে শর্ত হলো, তেহরানকে “সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন, রক্তাক্ত ছায়া যুদ্ধ এবং স্থায়ী ও যাচাইযোগ্য উপায়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা বন্ধ” করতে হবে।’
ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও শারার সঙ্গে সাক্ষাতের ঘোষণার পর সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের রাস্তায় দেশটির সাধারণ মানুষকে উল্লাস করতে দেখা যায়। তাঁরা এটিকে ‘সিরিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তন’ হিসেবে দেখছেন।
প্রসঙ্গত, আল-শারা একসময় আল-কায়েদার কমান্ডার ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসীর তালিকায় এখনো তাঁর নাম রয়েছে।
এর আগে রিয়াদে এক ভাষণে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ‘আমি সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেব, যাতে তারা আরেকবার মহান হওয়ার সুযোগ পায়।’
দ্য টাইমসের খবরে প্রথম দাবি করা হয়েছিল, সৌদি আরব সফরে শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ট্রাম্প। কিন্তু হোয়াইট হাউস এ দাবি অস্বীকার করে। তবে মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, তিনি সিরিয়ার নেতাকে ‘হ্যালো বলতে’ রাজি আছেন।
ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পর পর দামেস্কে উল্লাস শুরু হয়। নেচে-গেয়ে, ফাঁকা গুলি ছুড়ে উদ্যাপন করা হয়। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। কারণ, ১৪ বছর দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়া এখন ‘স্থিতিশীলতা, আত্মনির্ভরতা ও প্রকৃত পুনর্গঠনের’ দিকে এগোচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী উড়োজাহাজ এয়ার ফোর্স ওয়ানে ট্রাম্প সাংবাদিকদের কাছে শারাকে একজন ‘তরুণ ও আকর্ষণীয়’ নেতা হিসেবে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘তাঁর (শারার) হাতে সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে’।
ট্রাম্প আরও বলেন, সৌদি যুবরাজ ও এরদোয়ান তাঁকে সিরিয়ার ওপর থেকে বাণিজ্যিক ও ব্যাংকিং খাতের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে উৎসাহিত করেছেন।
সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণায় পর নিজেদের পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে ‘বন্ধু ট্রাম্পকে’ ধন্যবাদ দেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এরই মধ্যে সিরিয়ার ওপর থেকে বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এখন ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দেশটির জন্য আরও সুযোগের দরজা খুলে দেবে। শারাকে শক্তিশালী করবে।