সৌদি আরবের স্কুলের পাঠ্যবই থেকে উধাও ফিলিস্তিনের মানচিত্র

করোনাকালে সৌদি আরবের একটি স্কুলে পাঠদানের দৃশ্য। ২৯ আগস্ট, ২০২১ফাইল ছবি: রয়টার্স

সৌদি আরবের স্কুলের নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ের মানচিত্রে ফিলিস্তিনের অংশটি নামহীন রাখা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতি আগের পাঠ্যবইয়ের বৈরীভাবাপন্ন ভাষাও পরিবর্তন করা হয়েছে। ইসরায়েলভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক আইএমপিএসিটি-সে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

আইএমপিএসিটি-সে-এর প্রতিবেদনে সৌদি আরবের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ‘সামাজিক ও জাতীয় অধ্যয়ন’ পাঠ্যবইয়ের একটি মাত্রচিত্রের কিছু ছবি ছাপানো হয়েছে। এই মানচিত্রে সৌদি আরব ও তার পার্শ্ববর্তী দেশের পরিচয় আছে। কিন্তু ফিলিস্তিন ভূখণ্ড নামহীন রাখা হয়েছে। কিন্তু দেশটির ২০২২ সালের পাঠ্যবইয়ে ফিলিস্তিনের নাম ছিল।

আইএমপিএসিটি-সে স্কুলের পাঠ্যবই বিশ্লেষণ করে থাকে। ইসরায়েল ও যুক্তরাজ্যে থিঙ্কট্যাংকটির কার্যালয় রয়েছে। থিঙ্কট্যাংকটি ইতিপূর্বে বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত হয়েছে।

আইএমপিএসিটি-সে বলছে, সৌদি আরবের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন পাঠ্যবইয়ে আগের শিক্ষাবর্ষের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। এমনকি পরিভাষাও পরিবর্তন করা হয়েছে।

যেসব শব্দ ইসরায়েলের জন্য ‘বৈরীভাবাপন্ন’ বলে মনে করা হতো, পাঠ্যবই থেকে সেই সব শব্দ মুছে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, ‘শত্রু’ ও ‘জায়নিস্ট শত্রুর’ মতো পরিভাষাগুলো পাঠ্যবই থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া পাঠ্যবইয়ের যেসব অংশে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে হুঁশিয়ারি ছিল এবং ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূখণ্ড থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ইসরায়েলি কার্যক্রমের কথা উল্লেখ ছিল, তা-ও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু কোন কোন শ্রেণির সামাজিক ও জাতীয় অধ্যয়ন পাঠ্যবইয়ে সৌদি আরব সংশোধন করেছে, তা স্পষ্ট করে দ্য নিউ আরবের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

সৌদি আরবের উল্লিখিত পাঠ্যবইয়ে পূর্ব জেরুজালেমকে ‘অধিকৃত’ এবং ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ফিলিস্তিনিরা পুরো জেরুজালেমকেই নিজেদের রাজধানী হিসেবে দেখতে চায়।

সৌদির আগের স্কুল পাঠ্যবইয়ে জায়নবাদকে ‘বর্ণবাদী ইউরোপীয় আন্দোলন’ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও বর্তমানে তেমনটি উল্লেখ নেই। এর পাশাপাশি পাঠ্যবইয়ে ইসরায়েল নিয়ে সমালোচনামূলক ভাষাও সংশোধন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আগের শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ের ২১টি ইসরায়েলবিরোধী শব্দ ও পরিভাষা নতুন পাঠ্যবই থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রিয়াদ ও তেল-আবিবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সৌদির পাঠ্যবইয়ে এসব সংশোধন আনা হয়েছে।

গত মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তারা সৌদি আরবের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। আশা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি করলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সম্মত হবে সৌদি আরব।

রিয়াদ ইতিপূর্বে বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না। কিন্তু ইসরায়েলর বর্তমান অতি ডানপন্থী সরকার রিয়াদের এই দাবি এখন পর্যন্ত মানতে সম্মত হয়নি।