খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা ট্রাম্পের আটকানোর কথা জানিয়ে দেওয়ার মানে কী

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: রয়টার্স

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের আটকে দেওয়া নিয়ে যে খবর বের হয়েছে, তার নানা দিক বিশ্লেষণ করেছেন লেখক ও ইসরায়েলের সাবেক কূটনীতিক আলন পিঙ্কাস।

তেল আবিব থেকে আলন পিঙ্কাস আল-জাজিরাকে বলেন, নাম প্রকাশ না করা মার্কিন সূত্রের আলোকে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন অনেক প্রশ্ন সামনে এনেছে।

সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, প্রথম প্রশ্ন হলো, ইসরায়েল কেন যুক্তরাষ্ট্রকে এ কথা বলল? আর যুক্তরাষ্ট্রই-বা কেন এ কথা ফাঁস করল?

আলন পিঙ্কাস বলেন, এটা কি ইরানের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ভয় দেখানোর জন্য করা হয়েছে? এটা কি এ বিষয়টি বোঝানোর জন্য করা হয়েছে যে কোনো বিকল্পই বিবেচনার বাইরে নয়?

ইসরায়েলের সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, নাকি এটা কেবল এমন এক ব্যক্তির কাজ, যিনি বোঝাতে চেয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সংযম দেখাচ্ছে কিংবা ইসরায়েলকে সংযত থাকতে বলছে?

এসব প্রশ্ন সামনে এনে আলন পিঙ্কাস বলেন, ‘আমার মনে হয়, এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।’

আলন পিঙ্কাস বলেন, তবে এটি ইরানকে একপ্রকার বার্তা দেয় যে ইসরায়েল এমন একটি হত্যাকাণ্ড বিবেচনা করছে।

সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, ইসরায়েলে যেভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, তা হলো—এই সংবাদ ইঙ্গিত দেয়, ইসরায়েল সত্যিই এমন কিছু ভাবছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র বলেছে ‘এখন না’। অর্থাৎ ইরানের জন্য এটি একটি স্পষ্ট বার্তা যে বিষয়টি এখন ইসরায়েলের ভাবনায় রয়েছে।

গতকাল রোববার দুজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা কয়েক দিন আগে আটকে দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এ খবরটি এমন এক সময় সামনে এল, যখন ইরানে নজিরবিহীন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইরানও চালাচ্ছে পাল্টা হামলা।

আরও পড়ুন

ইরানে ইসরায়েলি হামলা শুরু হয় গত শুক্রবার ভোররাতে। হামলার প্রথম দিনই ইরানের সেনাপ্রধান, অভিজাত ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের প্রধানসহ অন্তত ২০ জন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। হামলায় খামেনির একজন উপদেষ্টাও নিহত হন। সবশেষ গতকাল ইরানের অভিজাত রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ও উপপ্রধান ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে ইরানের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবা সংস্থা এই তথ্য জানিয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘ইরানিরা কি এখন পর্যন্ত কোনো আমেরিকানকে হত্যা করেছে? না। যতক্ষণ না তারা তা করছে, ততক্ষণ আমরা রাজনৈতিক নেতৃত্বের পেছনে লাগার বিষয়ে, এমনকি আলাপও করছি না।’

খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত রোববার ফক্স নিউজকে বলেন, ‘কখনো আলাপই হয়নি, এমন অনেক বিষয় নিয়েও খবর প্রকাশ করা হয়েছে। আমি সে বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।’

আরও পড়ুন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি থামানোর লক্ষ্যে ইসরায়েল ব্যাপক হামলা শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখছেন।

একই কর্মকর্তারা বলেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল যে তারা ইরানের শীর্ষ নেতাকে হত্যার একটি সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প সেই পরিকল্পনা থেকে তাদের (ইসরায়েলি) সরে যেতে বলেন।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেননি যে ট্রাম্প নিজেই সেই বার্তাটি দিয়েছিলেন কি না। তবে ট্রাম্প নিয়মিতভাবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।

গতকাল রোববার ফক্স নিউজ চ্যানেলের ‘স্পেশাল রিপোর্ট উইথ ব্রেট বেয়ার’ অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কাছে খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক ভুয়া খবর ছড়িয়েছে এমন কথোপকথন নিয়ে, যা আদৌ হয়নি। আর আমি এসব নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’

আরও পড়ুন

চলমান সংঘাত বন্ধে ইরান ও ইসরায়েল একটি চুক্তিতে পৌঁছাবে বলে গতকাল রোববার আশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সংঘাত বন্ধ করতে বহু পক্ষের মধ্যে ফোনে কথা হচ্ছে, বৈঠক চলছে বলে জানান ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি নিজেই চুক্তিতে মধ্যস্থতা করবেন।

নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ইরান ও ইসরায়েলের একটি চুক্তিতে পৌঁছানো উচিত; দুই দেশ চুক্তি করবেও—যেমনটা আমি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে করিয়েছিলাম।’

এদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনা নাকচ করেছে ইরান। মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ কাতার ও ওমানকে ইরান জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলার মুখে তেহরান এখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় রাজি নয়। সংশ্লিষ্ট যোগাযোগ সম্পর্কে অবগত এক কর্মকর্তা গতকাল রোববার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানান সংশ্লিষ্ট যোগাযোগ সম্পর্কে অবগত এক কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উল্লিখিত কর্মকর্তা বলেছেন, কাতার ও ওমানের মধ্যস্থতাকারীদের ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েলের হামলার জবাব পুরোপুরি না দেওয়া পর্যন্ত তারা কোনো ধরনের আন্তরিক আলোচনায় যাবে না।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন