ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলায় ছয় শিশু নিহত

গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের বাহিনী। উদ্ধারকর্মী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেনছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গতকাল শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় ছয় ফিলিস্তিনি শিশুসহ অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। খবর আল–জাজিরা

গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া শহরে একটি শরণার্থীশিবিরে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে হামাস। এই হামলার জন্য ইসরায়েলি সেনাদের দায়ী করছে তারা। তবে জাবালিয়ায় হামলা চালিয়ে শিশুসহ বেসামরিক মানুষজনকে হত্যার ঘটনা অস্বীকার করেছে ইসলায়েল। দেশটির দাবি, ওই এলাকায় হামলা চালানো হয়নি। বরং ফিলিস্তিনি জিহাদিরা রকেট হামলা চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আর এতে প্রাণহানি হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে দুই দিনের সংঘর্ষে ২০৩ জন আহত হয়েছেন।

গাজার আশপাশের এলাকায় গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে খানিকটা শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। গত শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় ইসলামিক জিহাদের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার নিহত হওয়ার পর সেখানে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।
ইসরায়েলি অভিযানে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন উম ওয়ালিদ নামের ৭৩ বছর বয়সী এক নারী। তিনি তাঁর ছেলের বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বেইত হানুন শরণার্থীশিবিরে একটি গাড়িতে হামলায় তিনি মারা যান।

ইসরায়েলি হামলার জবাবে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ৪০০টিরও বেশি রকেট ছুড়েছে। যদিও এগুলোর বেশির ভাগই ঠেকিয়ে দেয় ইসরায়েল। এসব রকেট হামলায় গুরুতর কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।

প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি সংকীর্ণ উপকূলীয় গাজা উপত্যকায় বসবাস করেন। ইসরায়েল এবং মিসর ওই এলাকার ভেতরে এবং বাইরে মানুষ ও পণ্যের চলাচল কঠোরভাবে নজরদারি করে এবং নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে নৌযান চলাচলের ওপর অবরোধ আরোপ করেছে।

ইসরায়েল গত শুক্রবার হামলা শুরুর আগমুহূর্তে গাজায় পরিকল্পিতভাবে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে ওই অঞ্চলের একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। প্রতিদিন প্রায় চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা জানিয়েছে, এমন পরিস্থিতি চললে কয়েক দিনের মধ্যে হাসপাতালগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মেদহাত আব্বাস বলেন, ‘(ইসরায়েলিরা) বেসামরিক লোকদের ওপর আক্রমণ করছে, তারা বিভিন্ন স্থাপনার চত্বর, আবাসিক এলাকায় হামলা চালাচ্ছে।’

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজায় দুই দিন ধরে চলমান ইসরায়েলি হামলায় উদ্বাস্তু হয়েছে অন্তত ৪০টি ফিলিস্তিনি পরিবার। এ ছাড়া স্থানীয় ৬৫০টির বেশি আবাসন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ১১টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের আবাসন মন্ত্রণালয়।

এদিকে বিমান হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমনে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনির মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে মিসর। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ জন্য দুই পক্ষের সঙ্গেই নিবিড় যোগাযোগ রাখছে কায়রো। বিবৃতিতে বিস্তারিত আর কিছু বলা হয়নি।