ইসরায়েলই জিতবে বলে দাবি করলেন নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুফাইল ছবি: এএফপি

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল রোববার আবারও যুদ্ধে জয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বলেছেন, গত বছর ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পরের এক বছরে তাঁর দেশের সেনাবাহিনীর ‘অবস্থান সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে’।

গাজা থেকে হামাসের ওই হামলার পর দুটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েল।
গতকাল রোববার নেতানিয়াহু সৈন্যদের (উজ্জীবিত করতে গিয়ে) বলেছেন, ইসরায়েলই ‘জিতবে’। ইসরায়েল এখন গাজা উপত্যকা ও লেবাননে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ও ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেন, এক বছর পর, ‘আমরা হামাসের সামরিক শাখাকে পরাজিত করেছি।’

গত বছর অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পরই ‘(হামাস) জঙ্গিদের গুঁড়িয়ে দেওয়া...এবং ধ্বংস করে দেওয়ার’ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন নেতানিয়াহু। গাজাজুড়ে ইসরায়েলি সেনারা হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অনেক এলাকায় ইসরায়েলি সেনারা অভিযান শেষে করে ফিরে যাওয়ার পর হামাসকে আবার সংগঠিত হতে দেখা যাচ্ছে।

এদিকে গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে ইসরায়েলকে উত্তর সীমান্তের দিকে মনোযোগ দিতে হচ্ছে। উত্তরের প্রতিবেশী লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রবল সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল।

ইরান–সমর্থিত হিজবুল্লাহ গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই হামাসকে সমর্থন দেয়। এক বছর ধরে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের সেনাদের মধ্যে নিয়মিত সীমান্তের এপার-ওপারে গোলা বিনিময় চলছে।

লেবানন সীমান্তের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নেতানিয়াহু সেখানে গিয়েছিলেন বলে তাঁর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে। সেখানে নেতানিয়াহু বলেন, ‘এক বছর আগে, আমরা ভয়ংকর একটি ধাক্কা খেয়েছিলাম। গত ১২ মাসে আমরা আমাদের অবস্থানকে সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলেছি।’

অন্যদিকে হামাস গতকাল তাদের ৭ অক্টোবরের হামলাকে ‘গৌরবের’ বলে বর্ণনা করেছে। বলেছে, ওই হামলার মধ্যমে ফিলিস্তিনিরা ‘তাদের প্রতিরোধের নতুন ইতিহাস লিখছে’।

গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। বহু মানুষকে হত্যা করে, জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় আরও বেশ কয়েকজনকে। এই এক বছরে গাজায় ধরে নিয়ে যাওয়া কয়েকজন ইসরায়েলি জিম্মি প্রাণ হারিয়েছেন।

এই এক বছরে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহত মানুষের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিহত ব্যক্তিদের এই সংখ্যা জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ এ সংখ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য বলেছে।

ইসরায়েলের হামলায় গাজার অধিকাংশ মানুষই এখন বাস্তুচ্যুত। প্রাণ বাঁচাতে একাধিকবার তাদের গাজার এক মাথা থেকে অন্য মাথায় ছুটে বেড়াতে হচ্ছে। উপত্যকার বেশির ভাগ বাড়িঘর ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।

এ বছর সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে লেবাননে তীব্র সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। ইরানের সঙ্গে দেশটির যুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

এ নিয়ে টেলিফোনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে আলাপকালে নেতানিয়াহু বলেন, লেবাননে ইসরায়েল যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা ‘পুরো অঞ্চলে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও শান্তি আনতে সহায়তা করবে’।

নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দুই নেতার ফোনালাপের বিষয়ে জানানো হয়।

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি একটি যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েল সরকারকে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এএফপির হিসাব অনুযায়ী, লেবাননে গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ইসরায়েলের হামলায় ১ হাজার ১১০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

লেবাননের শিক্ষা মহাপরিচালক ইমাদ আছকার গতকাল জানিয়েছেন, লেবাননের সাড়ে ১২ লাখ স্কুলশিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ইসরায়েলের হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে।