কাতারে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বিমান হামলা

একাধিক স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। হামলার কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের হামলার পর একটি ভবন থেকে ধোয়া উঠতে দেখা যাচ্ছে। কাতারের রাজধানী দোহায়, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ছবি: রয়টার্স

কাতারের রাজধানী দোহায় আজ মঙ্গলবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। কাতার এ হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ ও ‘আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। হামলার কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েল। এতে কেউ নিহত হয়নি বলে জানিয়েছে হামাস।

হামাসের দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, হামলার সময় ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের তরফে প্রস্তাব করা সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে হামাসের নির্বাসিত গাজাপ্রধান ও শীর্ষ আলোচক খালিদ আল-হাইয়্যা উপস্থিত ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দোহায় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। শহরের লেগতিফিয়া পেট্রলস্টেশন থেকে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। পেট্রলস্টেশনের কাছেই একটি ছোট আবাসিক মহল্লা রয়েছে, সেখানেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে কাতারের আমিরের গার্ড এই মহল্লা ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিয়ে আসছিল। বিস্ফোরণের প্রায় এক ঘণ্টা পর অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্তত ১৫টি পুলিশ ও সরকারি গাড়ি বিস্ফোরণস্থলের চারপাশের সড়কে জড়ো হয়েছিল। তবে গতকাল ঠিক কোন সময়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মিডলইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত ১২টি বিমান হামলা চালানো হয়েছে। হামলার পর দোহার কাতারা ডিস্ট্রিক্ট থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে।

গতকাল স্থানীয় সময় বিকেল পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ফিলিস্তিনের গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীর ছাড়া অন্তত পাঁচটি আরব দেশে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশগুলো হলো লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন ও কাতার। যুদ্ধ শুরুর পর কাতার ও তিউনিসিয়া ছাড়া বাকি দেশগুলোতে প্রায় নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যেও দুই দফা পাল্টাপাল্টি হামলা হয়েছে।

কিন্তু কাতারে গতকালের ইসরায়েলের হামলাকে নজিরবিহীন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কারণ, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের (জিসিসি) কোনো দেশে হামলা চালায়নি। জিসিসিভুক্ত দেশগুলো হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কাতার, কুয়েত, বাহরাইন ও ওমান। দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে ইসরায়েলের পরীক্ষিত মিত্র।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিমানঘাঁটি কাতারে অবস্থিত। আল উদেইদ নামের এই বিমানঘাঁটিতে আট হাজারের বেশি মার্কিন সেনাসদস্য ও কর্মকর্তা রয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে এটাই যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের আঞ্চলিক প্রধান কার্যালয়। গতকালের হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছিল কি না, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানালেও বিভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে।

হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে দোহায় আবাসিক ভবনে হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবন দেখা যাচ্ছে। কাতারের দোহায়, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবি: রয়টার্স

হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, হামলার আগে তাদের জানানো হয়েছিল। ইসরায়েলের সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ১২-ও একই ধরনের খবর প্রকাশ করেছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমরা স্বাধীনভাবে কাতারে হামলা চালিয়েছি। আমি এই হামলার নির্দেশ দিয়েছি। গতকাল দুপুরে এই হামলা চালানো হয়েছে।’

ইসরায়েলের হামলাকে কাতারের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতার জঘন্য লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সৌদি আরব, কুয়েত, জর্ডান, মিসর, ইরান, তুরস্ক, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) এবং মালদ্বীপসহ আরও কিছু দেশ কাতারে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলের প্রায় দুই বছরের যুদ্ধে ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের প্রায় ৮৩ শতাংশ সাধারণ মানুষ। উপত্যকাটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তা সত্ত্বেও উপত্যকার গাজা নগরী সম্পূর্ণ দখল করতে সম্প্রতি নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। নির্মম এই যুদ্ধ বন্ধে শুরু থেকে মিসরের পাশাপাশি কাতারও মধ্যস্থতা করে আসছিল।

ফিলিস্তিনের অন্যান্য নেতার মতো হামাসের শীর্ষ নেতাদেরও দীর্ঘদিন ধরে নিশানা করে হত্যা করে আসছিল ইসরায়েল। এ পরিস্থিতিতে ২০০৭ সাল থেকে কাতারের দোহায় নিজেদের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সদর দপ্তর সরিয়ে নিয়েছিল হামাস। সেখানেই তাদের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা থাকতেন। গোষ্ঠীটির শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়াও দীর্ঘদিন সেখানে ছিলেন। তাঁকে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই ইরানের রাজধানী তেহরানে গুপ্তহত্যা চালিয়ে হত্যা করে ইসরায়েল।