চতুর্থ দফায় ৩ ইসরায়েলি ও ১৮৩ ফিলিস্তিনি মুক্ত

ইসরায়েলের অফার কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দীদের নিয়ে ফেরা বাস রামাল্লায় পৌঁছালে সেখানকার লোকজন আনন্দে মাতেনছবি: রয়টার্স

পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরে গতকাল শনিবার সমবেত জনতার চোখে-মুখে ছিল খুশির ঝিলিক। ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী আজ চতুর্থ দফা বন্দিবিনিময়ে ১৮৩ ফিলিস্তিনি মুক্ত হয়ে গাজায় ফিরেছেন। এর আগে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের পক্ষ থেকে তিন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়।

হামাস ও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, মুক্তি পাওয়া তিন জিম্মি হলেন ইয়ারদেন বিবাস (৩৫), মার্কিন-ইসরায়েলি কিথ সিগেল (৬৫) ও ফরাসি-ইসরায়েলি অফার ক্যালদেরন (৫৪)। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার দিন এই তিনজন অন্যদের সঙ্গে জিম্মি হয়েছিলেন।

ইসরায়েলের অফার কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দীদের নিয়ে ফেরা বাস রামাল্লায় পৌঁছালে সেখানকার লোকজন আনন্দে মাতেন। পাশাপাশি তিনটি পৃথক বাসে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিরা দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে ফেরেন। এ সময় তাঁদের পরনে ধূসর পোশাক দেখা যায়। তাঁরা মুক্ত হয়ে ফেরায় হাজারো মানুষকে উল্লাস করতে দেখা যায়।

এর আগে খান ইউনিস ও গাজা থেকে তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করে হামাস। ইসরায়েল সামরিক বাহিনী তিন জিম্মিকে মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, তাঁরা সবাই ইসরায়েলে ফিরেছেন।

ইসরায়েলি প্রচার গোষ্ঠী হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম এই মুক্তিকে ‘অন্ধকারে আলোর রশ্মি’ বলে স্বাগত জানিয়েছে। ফরাসি-ইসরায়েলি জিম্মি ক্যালদেরনের চাচা শেমি এএফপিকে বলেছেন, ‘আমরা এই মুহূর্তটির জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম।’

দীর্ঘ ১৫ মাস হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ চলার পর তা বন্ধের চেষ্টায় গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো বন্দিবিনিময় করল দুই পক্ষ। এ সময়ের মধ্যে ১৮ জিম্মি ও কয়েক শ ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল মুক্তি পান ১৮৩ বন্দী। এর মধ্যে ৭২ জন ইসরায়েলের আদালতে সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। ১৪ জন ছিলেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আসামি। ১১১ জনকে বিচার ছাড়াই আটক রাখা হয়েছিল।

ইসরায়েলি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হ্যামোকডের তথ্য অনুযায়ী, গত মাস পর্যন্ত ইসরায়েলি কারাগারে ১০ হাজার ২২১ ফিলিস্তিনি বন্দী ছিলেন। যুদ্ধবিরতির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শর্তের মধ্যে আছে ৩৩ জন জিম্মি ও প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ গাজা থেকে উত্তরে নিজেদের বাড়িঘরে ফেরা ও বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় মানবিক ত্রাণ সরবরাহ বৃদ্ধির সুযোগ দেওয়া।

হামাসের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চম দফায় বন্দিবিনিময় আগামী শনিবার কার্যকর করা হবে।

রাফা সীমান্ত খোলা

বন্দিবিনিময়ের পর গাজার গুরুত্বপূর্ণ রাফা সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়েছে। এ সীমান্ত অতিক্রম করে আজ ৫০ জন ফিলিস্তিনি মিসরে চিকিৎসার জন্য গেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। গত বছরের মে মাসে এ সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল ইসরায়েল। মিসরের আল-কাহেরা নিউজের তথ্য অনুযায়ী, আজ সীমান্ত অতিক্রম করে শুরুতে এক শিশুকে প্রথমে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। গাজা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ জাকুত বলেন, তিনি আশা করছেন রাফা সীমান্ত খুলে দেওয়ার মানুষ আরও বেশি চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। তিনি বলেন, প্রায় ছয় হাজার রোগী স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুত। ১২ হাজার জনের জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় দফার যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু

গাজার যুদ্ধবিরতির প্রথম দফা ৪২ দিনের। এর মধ্যেই ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। অন্যদিকে কারাগারে থাকা ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ইসরায়েলের। যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আগামী সোমবার আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। ইসরায়েলের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। দ্বিতীয় দফার যুদ্ধবিরতিতে হামাসের কাছে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার ও যুদ্ধ স্থায়ী বন্ধের বিষয়টি আলোচনা হওয়ার কথা। যুদ্ধবিরতির বিষয়টি মধ্যস্থতা করছে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র।

হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু

হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আগামী মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন। গত সপ্তাহে ট্রাম্প গাজার ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে সরিয়ে নিয়ে গাজা উপত্যকা খালি করার কথা বলেন। এ জন্য গাজার বাসিন্দাদের আশ্রয় দিতে মিসর ও জর্ডানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান আরব মন্ত্রীদের

যেকোনো পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনিদের তাঁদের ভূমি থেকে স্থানান্তরের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন আরব মন্ত্রীরা। আজ কায়রোয় এক বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা ট্রাম্পের আহ্বানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তুলে ধরেন। কায়রোর ওই বৈঠকে মিসর, জর্ডান, সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষসহ আরব লিগের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলেন, এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিলে তা এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে ফেলবে, সংঘাত বাড়াবে এবং শান্তির সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করবে।