‘আগে ভাইকে বাঁচান’

ছোট ভাই তারাজানের সঙ্গে আলমা জারোর
ছবি: বিবিসি

‘আমাকে নয়, আগে মা-বাবাকে সাহায্য করুন। দয়া করে ভাই তারাজানকে সাহায্য করুন, সে ১৮ মাস বয়সী শিশু। আমার ভাই-বোনকে দেখতে চাই।’ উদ্ধারকারীদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেছিল আলমা জারোর নামের ১২ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি কিশোরী। ইসরায়েলের বিমান হামলায় সে তার পুরো পরিবারকে হারিয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে কেবল সে-ই বেঁচে ফিরতে পেরেছে।

গাজা সিটিতে গত বছরের ২ ডিসেম্বর সকালে ওই ঘটনা ঘটে। বিমান হামলায় আলমাদের আশ্রয় নেওয়া পাঁচতলার ভবনটি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে যায়। হামলার তিন ঘণ্টার পর উদ্ধারকারীরা আলমার কাছে পৌঁছান। সে সময় আলমার বলতে থাকা ওই কথাগুলো একজন ফিলিস্তিনি উদ্ধারকারীর ভিডিও যন্ত্রে রেকর্ড হতে থাকে। সে ধ্বংসস্তূপের মাঝখানে একটু ফাঁকা জায়গায় আটকে ছিল। তার বড় ধরনের আঘাত লাগেনি।

ওই হামলায় বাবা মোহাম্মাদ (৩৫), মা নাইমা (৩৮), আরও দুই ভাই ঘানেম (১৪), কিনান (৬) ও বোন রিহাবকে (১১) হারায় আলমা। তিন মাস পেরোলেও তারাজান ছাড়া আজও কারও মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা যায়নি। আলমা বিবিসিকে বলেছে, এখন তার একটাই স্বপ্ন, মা-বাবা, ভাই-বোনের মরদেহ যথাযথভাবে দাফন করতে পারা।

সম্প্রতি বিবিসি আলমার সঙ্গে কথা বলে। এখন সে তার চাচা সামি ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণ গাজার রাফায় একটি শরণার্থী তাঁবুতে বসবাস করছে। আলমা জানায়, গুঁড়িয়ে দেওয়া ওই ভবনে ১৪০ জনের মতো ফিলিস্তিনি ছিলেন। তাঁরা সবাই ইসরায়েলের হামলা থেকে বাঁচতে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

আলমার দুঃখগাথা এখানেই শেষ নয়। সে জানায়, ইসরায়েলি হামলা থেকে নিরাপদ রাখতে তার বাবা-মা সন্তানদের নিয়ে দিগ্‌বিদিক ছুটেছিল। নিজেদের বাড়ি ছেড়ে প্রথমে যেখানে আশ্রয় নিয়েছিল, সেখানেও হামলা হয়। দ্বিতীয়বার যেখানে আশ্রয় নেয়, সেখানেও একই ঘটনা ঘটে। এরপর তৃতীয়বারের মতো সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল, যেখানে তাদের ইট-সুরকির সমাধি হয়।

আলমা জানায়, মা-বাবা, ভাই-বোনের কথা মনে করে সে আর সব সময় কাঁদে না। কারণ তার বিশ্বাস, ‘নিশ্চিতভাবে তাঁরা সবাই স্বর্গে সুখে আছেন।’