মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে

গাজায় স্থল অভিযানে ইসরায়েলি সেনারারয়টার্স ফাইল ছবি

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এতে নতুন মাত্রা যোগ হয় হিজবুল্লাহ ও হুতিদের মতো ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো জড়িয়ে পড়ায়।

সর্বশেষ ইসরায়েলের বিমান হামলায় সিরিয়ায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় এক সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা আরও প্রকট হয়েছে। সেদিকে এগোলে এ অঞ্চলে ভয়াবহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল নির্বিচার হামলা অব্যাহত রাখলে দেশটির লেবানন সীমান্তে সংঘাতে জড়ায় হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা। শুরুর দিকে পাল্টাপাল্টি হামলা সীমান্ত এলাকায় সীমিত ছিল। কিন্তু গত কয়েক দিন লেবাননের আরও ভেতরে হিজবুল্লাহর অবস্থানে হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরায়েলের লোহিত সাগর-তীরবর্তী বন্দরনগরী ইলাত লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়ে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। একই সঙ্গে লোহিত সাগর দিয়ে চলাচল করা ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জাহাজেও হামলা চালিয়ে আসছে তারা।

বেশ কয়েকটি ড্রোন হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের নৌবাহিনী ও যুদ্ধজাহাজগুলোকে লোহিত সাগরে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা ক্রমবর্ধমান হামলার ঝুঁকিতে আছেন। এ অঞ্চলের অবনতিশীল পরিস্থিতি হোয়াইট হাউসের অবকাশের এ সময়ে দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে।

# সাম্প্রতিক দিনগুলোয় হামলা ও উসকানির মাত্রা মারাত্মক গতিতে বেড়েছে।
# আঞ্চলিক যুদ্ধে ভয়াবহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ২০২৪ সালে পুনর্নির্বাচনের জন্য লড়তে হবে। নতুন বছর শুরুর সময়ে মার্কিন সেনাদের ওপর হামলার ঝুঁকি বাড়ছে। সেই সঙ্গে ভারত মহাসাগর থেকে লোহিত সাগর এবং ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও ইসরায়েল পর্যন্ত বিরাট এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এসব বিষয় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য নতুন বিদেশি সংকট হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

গাজায়া হামলার তীব্রতা কমানোর জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও গাজায় এই অভিযান কয়েক মাস ধরে চলবে বলে ইসরায়েলের পক্ষে থেকে বলা হচ্ছে। এতে যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি জড়িয়ে ফেলার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

আরও পড়ুন

একের পর এক বিপজ্জনক উসকানি
হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলা এবং গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলার পর আঞ্চলিক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার যে শঙ্কা ছিল, তাৎক্ষণিক সেটা দেখা যায়নি। যদিও সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনী ও লেবাননের হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের মধ্যে সীমিত আকারে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটছে। এখানেই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা সবচেয়ে বেশি ছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোয় হামলা ও উসকানির মাত্রা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে উত্তেজনা আরও বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গত মঙ্গলবার লোহিত সাগরের জলসীমায় হুতি গোষ্ঠীর ছোড়া বেশ কিছু ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে মার্কিন বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, বাণিজ্যিক জাহাজে হুতিদের হামলায় তথ্য দিয়ে সাহায্য করছেন ইরানের গোয়েন্দারা। তবে ইরান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

হামলার আতঙ্কে ইতিমধ্যে কিছু জাহাজ পথ পাল্টে স্বল্প খরচের সুয়েজ খাল ব্যবহারের পরিবর্তে আফ্রিকা ঘুরে চলাচল করছে। এতে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন

গত সোমবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) মেজর জেনারেল সাইয়েদ রাজি মৌসাভি নিহত হয়েছেন। অবশ্য হামলার বিষয়ে এখনো মুখ খোলেনি ইসরায়েল। আইআরজিসি হুমকি দিয়েছে, ‘এ অপরাধের জন্য ইসরায়েলি সরকারকে নিঃসন্দেহে মাশুল গুনতে হবে।’

এদিকে ইরাকের এরবিল বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের এক সেনা গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইরান-সমর্থিত কাতাইব হিজবুল্লাহ মিলিশিয়াদের অবস্থানে বিমান হামলা চালাতে স্থানীয় সময় সোমবার আদেশ দেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

ভূরাজনৈতিক এই অস্থিতিশীলতা এখন ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। গত শনিবার ভারত মহাসাগরে একটি রাসায়নিকবাহী জাহাজে ড্রোন হামলায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, ইরানি ড্রোন জাহাজটিতে আঘাত হানে। তবে এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে ইরান।

জ্বালানি ও পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার জন্য লোহিত সাগরের এ পথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ গুরুত্বের কারণে এ অঞ্চলে একটি বিস্তৃত সংঘাত বেদনাদায়ক অর্থনৈতিক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

এ সমুদ্রপথটি আগে ইয়েমেন ও সৌদি আরব আর পশ্চিমে ইরিত্রিয়া, সুদান ও মিসর ঘেঁষে এগিয়েছে। এই পথটি সিনাই উপদ্বীপের সুয়েজ খালের মাধ্যমে এশিয়া ও ইউরোপের দূরত্ব কমিয়েছে। এ পথে চলাচল বিঘ্নিত হলে বিশ্বব্যাপী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

আরও পড়ুন