গাজায় ইসরায়েলের নৃশংসতা তদন্তে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে গাজা সরকারের গণমাধ্যম দপ্তর। একই সঙ্গে নৃশংসতার জন্য ইসরায়েলি নেতাদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। গত শুক্রবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গণমাধ্যম দপ্তরের প্রধান ইসমাইল আল-থাওয়াবতা এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যুদ্ধ শেষে গাজা পুনর্গঠনের নিশ্চয়তার বিষয়টি।
বিবৃতিতে আল-থাওয়াবতা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ এবং সব আন্তর্জাতিক আইনগত প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে ইসরায়েলি নেতাদের শাস্তি প্রদান করার আহ্বান জানাই। এ ছাড়া তাদের কোনো আইনগত বা রাজনৈতিক কোনোরূপ দায়মুক্তি যেন না দেওয়া হয়।’
বিবৃতিতে আল-থাওয়াবতা আরও বলেন, ‘আমরা আহ্বান জানাই একটি আন্তর্জাতিক, স্বাধীন কমিশন গঠনের জন্য, যা যুদ্ধাপরাধ ও জাতিগত নিধনের বিষয়টি তদন্ত করবে এবং সব বাস্তুচ্যুতকে প্রত্যাবর্তন ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করবে।’
গত বছর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। অভিযোগের মধ্যে ছিল যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ক্ষুধাকে ব্যবহার করার বিষয়টিও। কিন্তু নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট এখনো মুক্ত অবস্থায় আছেন। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ গাজায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সত্ত্বেও ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
ইসরায়েল তার সামরিক অভিযানে গাজার অধিকাংশ অঞ্চলকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, যা শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জাতিগত নিধন হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
শুক্রবার মধ্য গাজার নুসেইরাত এলাকা থেকে আল–জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানান, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি পায়ে হেঁটে উত্তর গাজায় নিজেদের ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। এই ফিলিস্তিনিদের বেশির ভাগকেই বোমাবর্ষণের মধ্যে ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য করা হয়েছিল। এখন তাঁরা হাসিমুখে ফিরে যাচ্ছেন, আনন্দ নিয়ে ঘরে ফিরছেন। কিন্তু তাঁরা জানেন, ঘরে ফিরে কিছুই আর খুঁজে পাবেন না—গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনী যেভাবে পুরো আবাসিক এলাকাগুলো উড়িয়ে দিয়েছে ও ধ্বংস করেছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার আগে ইসরায়েল গাজা শহরে স্থল অভিযান চালাচ্ছিল, যার লক্ষ্য ছিল নগর এলাকার অবশিষ্ট অংশ সম্পূর্ণ সমতল করে দেওয়া। গাজাজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ফলে এখন সেখানে নির্মাণসামগ্রী, যন্ত্রপাতি এবং অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য তীব্র প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
এ বছরের শুরুতে ৬০ দিনের এক যুদ্ধবিরতির সময়ও ইসরায়েল গাজায় পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রবেশে বাধা দিয়েছিল, এরপর মার্চ মাসে একতরফাভাবে যুদ্ধ আবার শুরু করে।
এদিকে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হামাস সব ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তি দিতে যাচ্ছে। তবে কিছু ফিলিস্তিনি মানবাধিকারকর্মী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, গাজায় বাড়িঘরের ঘাটতিকে ইসরায়েল হয়তো বাসিন্দাদের ওই অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করার জন্য অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
আল-থাওয়াবতা বলেন, ‘গাজা পূর্ণাঙ্গ পুনর্গঠনের জন্য একটি জরুরি পরিকল্পনার দাবি জানাচ্ছি, যা আরব ও আন্তর্জাতিক অর্থায়নে হবে এবং একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পদ সরাসরি নাগরিকদের কাছে পৌঁছাবে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ করার বিষয়টি বাস্তব হতে হবে, শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নয়।
আল-থাওয়াবতা আরও বলেন, ‘অবরোধ শেষ করতে হবে, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে এবং আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে হবে।’