হামাসের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা প্রস্তাবে সায় নেই সব সদস্যদেশের

জাতিসংঘ সদর দপ্তর। নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি ভিত্তিতে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিল। তবে যৌথ বিবৃতি দেওয়ার জন্য তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।

গত শনিবার ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের লড়াই শুরুর পর এ পর্যন্ত ১ হাজার ১০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। হামাসের যোদ্ধারা রকেট হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছেন। জবাবে গাজায় নির্বিচার বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে স্থল ও নৌপথে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। ইতিমধ্যে গতকাল রোববার তারা ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র গতকাল ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে হামাসের বিরুদ্ধে কড়া নিন্দার প্রস্তাব তুলেছে। তবে এতে সর্বসম্মতভাবে সায় দেয়নি সদস্যদেশগুলো।

জ্যেষ্ঠ মার্কিন কূটনীতিক রবার্ট উড সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বেশির ভাগ সদস্যদেশ হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তবে অবশ্যই সব দেশ নয়।’

রাশিয়ার কথা উল্লেখ করে উড বলেন, ‘আমি কিছু না বললেও কারা নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ছিল না, সেসব দেশের একটি কে হতে পারে, আপনারা মনে হয় বুঝতেই পারছেন।’

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক প্রায় ৯০ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। সেখানে জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক শান্তিদূত টর উইনেসল্যান্ডের ব্রিফ শোনেন সদস্যদেশের প্রতিনিধিরা।

কূটনীতিকেরা বলছেন, বৈঠকে উপস্থিত রুশ প্রতিনিধিরা হামাসের নিন্দা জানানোর চেয়ে বিষয়টিকে আরও বিস্তৃত পরিসরে দেখার কথা বলেন।

ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিবৃতি দরকার

জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেভেনজিয়া বলেন, ‘আমার বার্তা হচ্ছে, অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। এ জন্য অস্ত্রবিরতি কার্যকর ও অর্থবহ আলোচনা দরকার। নিরাপত্তা পরিষদও কথাটি দশকের পর দশক ধরে বলে আসছে।’
রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আংশিকভাবে এটিই হচ্ছে অমীমাংসিত ইস্যু।’

২০২০ সালের চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা আরব বিশ্বের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি বৈঠকে বলেন, এ সংকট নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আরও বৈঠক হবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত লানা জাকি নুসাইবেহ বলেন, ‘আমি মনে করি, সবাই আজ বুঝতে পেরেছেন, ফিলিস্তিনি-ইসরায়েল পরিস্থিতি গভীরভাবে উদ্বেগজনক।’

লানা জাকি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের অনেক সদস্য বিশ্বাস করেন, চূড়ান্তভাবে এই সংঘাত নিরসনের একমাত্র পথ হচ্ছে দুই রাষ্ট্রব্যবস্থা।

শান্তির পথ

ইসরায়েল বা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রতিনিধিরা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। তবে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর কূটনীতিকদের প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের দখলদারি অবসানের ওপর আলোচনায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানান।

রিয়াদ মনসুর বলেন, ‘দুঃখজনক সত্য হচ্ছে, কিছু গণমাধ্যম আর রাজনীতিবিদ কোনো ইসরায়েলি নিহত হলে সরব হয়ে ওঠেন। ইসরায়েলকে এখন তার ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠতে দেওয়ার সময় নয়। এখন ইসরায়েলকে তার বর্তমান চিন্তাধারা থেকে বের হয়ে আসতে বলার সময়। তাদের এখন শান্তির পথ তৈরি করতে বলতে হবে, যেখানে কোনো ফিলিস্তিনি বা কোনো ইসরায়েলির এভাবে মৃত্যু হবে না।’

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠককে সামনে রেখে ফিলিস্তিনের তিনটি মানবাধিকার সংগঠন এক খোলাচিঠিতে বলেছে, জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয়তা এই সহিংসতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে এবং এ জন্য এর সদস্যদেশগুলোকে ‘দুষ্কর্মের সহযোগী’ হিসেবে স্মরণ করা হবে।

বৈঠককে সামনে রেখে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলিদের গ্রাফিক ছবি দেখান।

গিলাদ বলেন, ‘আমরা চাই না আলোচনা বন্ধ হয়ে যাক। আমরা চাই, আলোচনা হোক। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহাবস্থানের জন্য আমরা সম্ভাব্য সবকিছু করব।’