সৌদি ও ইরানের সম্পর্ক আরও গভীর হবে

ইরান-সৌদি আরব দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের চলমান প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন দুই নেতা।

  • চলতি মাসের শুরুতে চীনের মধ্যস্থতায় এক চুক্তিতে পৌঁছায় ইরান ও সৌদি আরব।

  • সুন্নি সৌদির সঙ্গে শিয়া ইরানের সম্পর্কোন্নয়নের প্রক্রিয়ায় সমর্থন রয়েছে যুবরাজ বিন সালমানের।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। এ সময় ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের চলমান প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন দুই নেতা। এই কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করেছে চীন।

গতকাল মঙ্গলবার চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি সৌদি যুবরাজের সঙ্গে সি চিন পিংয়ের ফোনে কথা বলার খবর প্রচার করেছে। বলা হয়েছে, ইরান-সৌদি সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার গুরুত্বসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই নেতার কথা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং মধ্যপ্রাচ্যের উন্নয়নে একে অপরকে সমর্থন দেওয়ার কথা ফোনালাপে সৌদি যুবরাজ বিন সালমানকে জানিয়েছেন সি চিন পিং।

চলতি মাসের শুরুর দিকে বেইজিংয়ে চীনের মধ্যস্থতায় এক চুক্তিতে পৌঁছায় ইরান ও সৌদি আরব। সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অঙ্গীকার করে দুই দেশ। এক চুক্তির মধ্য দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উষ্ণতা ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানায় মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে চির বৈরী এই দুই দেশ। কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে ঐকমত্যে পৌঁছায় দেশ দুটি। ১০ মার্চ ইরান ও সৌদি আরবের প্রতিনিধিদল বেইজিংয়ে বৈঠকে মিলিত হয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে।

বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রমাণ মেলে ইরান ও সৌদি আরবের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের এই উদ্যোগে। ওই সময় সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এসপিএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সুন্নি সৌদি আরবের সঙ্গে শিয়া ইরানের সম্পর্কোন্নয়নের প্রক্রিয়ায় সমর্থন রয়েছে যুবরাজ বিন সালমানের।

২০১৬ সালে শিয়া সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব। এ ঘটনার প্রতিবাদে তেহরানে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে হামলা চালান ইরানের বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা। এর জেরে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করে সৌদি আরব। এখন সমঝোতা অনুযায়ী, আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশ দুটি আবার দূতাবাস ও কনস্যুলেট চালু করবে। এ ছাড়া ২০ বছরের বেশি আগে দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি তারা বাস্তবায়িত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া পবিত্র রমজান মাস শেষ হওয়ার আগেই সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা করেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান। সম্পর্কোন্নয়নের অংশ হিসেবে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানের কাছ থেকে রিয়াদ সফরের আমন্ত্রণ পেয়েছেন।

সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়বে

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে আলোচনায় সি বলেন, দুই দেশ তাদের নিজ নিজ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে পরস্পরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করবে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য আরও বেশি অবদান রাখবে। দুই নেতা সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রধান বাণিজ্য অংশীদার চীনের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সৌদি আরব এবং অন্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো এ অঞ্চলে তাঁদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থের দিকে নজর রেখে অংশীদারদের বৈচিত্র্য আনতে চায় দেশগুলো।

গত বছরের ডিসেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারসহ উপসাগরীয় সহযোগিতা জোট জিসিসির সব দেশের নেতারা প্রেসিডেন্ট সির সঙ্গে বৈঠকের জন্য রিয়াদে আসেন। বিবিসির খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট সির সফরের ঠিক আগে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতি জারি করে বলেন, চীন রাষ্ট্র সৃষ্টির পর এই প্রথম আরব বিশ্বের সঙ্গে তারা এতটা ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।