বন্দীদের পোশাকে কলার স্তূপে ‘নেতানিয়াহুকে বসিয়ে’ বিক্ষোভ

কারাবন্দীদের কমলা রঙের পোশাক পরে, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আদলে সেজে বিক্ষোভে অংশ নেন একজন। তেল আবিব, ইসরায়েল, ৩০ নভেম্বর ২০২৫ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

দুর্নীতিসহ তিন মামলার বিচার থেকে পুরোপুরি অব্যাহতি চেয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ক্ষমার আবেদনের পর তেল আবিবে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।

দীর্ঘদিন ধরে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া চলছে। তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতি, ঘুষ এবং আস্থাভঙ্গের অভিযোগে তিনটি মামলা রয়েছে। তবে তিনি বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন।

এর মধ্যে গতকাল রোববার ৭৬ বছর বয়সী নেতানিয়াহু বিচার কার্যক্রম থেকে পুরোপুরি অব্যাহতি চেয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমার আবেদন করার কথা জানান। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ছয় বছর ধরে বিচার চলছে। তা আরও অনেক বছর ধরে চলার সম্ভাবনা রয়েছে।’

আরও পড়ুন

এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘এই বিচার অব্যাহত থাকায় আমরা (ইসরায়েল) ভেতর থেকে ভেঙে পড়ছি, তীব্র বিভাজন তৈরি হচ্ছে, বিভেদের মাত্রা বাড়ছে।’

ক্ষমার আবেদন করলেও দোষ স্বীকার কিংবা অনুশোচনা—কোনোটাই করেননি নেতানিয়াহু। এতে ক্ষুব্ধ হন তাঁর দেশের অনেকে। খবরটি প্রকাশ্যে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তেল আবিবে গতকাল রাতে প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত বাসভবনের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।

একটি স্মরণসভায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (বাঁ থেকে দ্বিতীয়), তাঁর স্ত্রী সারা (সর্ববাঁয়ে), প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ এবং ফার্স্ট লেডি মিশেল হারজগ
ফাইল ছবি: এএফপি

কয়েকজন বিরোধী আইনপ্রণেতাও অধিকারকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দেন। তাঁরা নেতানিয়াহুর আবেদন বাতিল করে দিতে প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান।

কারাবন্দীদের কমলা রঙের পোশাক পরে, নেতানিয়াহুর আদলে সেজে বিক্ষোভে শামিল হন একজন। সেখানে কলার স্তূপের পেছনে অনেকে দাঁড়িয়ে ‘পারডন=ব্যানানা রিপাবলিক’ স্লোগান দেন। কলার স্তূপের মধ্যে ‘ক্ষমা’ লেখা প্ল্যাকার্ড ঝুলছিল। ব্যানানা রিপাবলিক বলতে এমন একটি দেশকে বোঝানো হয়, যেখানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকে। শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়। বিদেশি একচেটিয়া গোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে কোনো দেশকে শোষণ করে।

আরও পড়ুন

সরকারবিরোধী অধিকারকর্মী শিকমা ব্রেসলের বলেন, ‘তিনি (নেতানিয়াহু) কোনো ধরনের দায়দায়িত্ব না নিয়ে বরং মামলা থেকে পুরোপুরি অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন। তিনি দেশটাকে কীভাবে ছিন্নভিন্ন করেছেন, সেটার মূল্য না চুকিয়ে বিচার পুরোপুরি বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন।’

এদিকে প্রেসিডেন্ট হারজগের কার্যালয় এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর আবেদনকে ‘নজিরবিহীন’ বলে মন্তব্য করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই আবেদনের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। প্রাসঙ্গিক সব মতামত পাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট দায়িত্বশীলতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এ আবেদনের বিষয়ে বিবেচনা করবেন।’

নেতানিয়াহু ইসরায়েলের সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৬ সালে তিনি সর্বপ্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর তিন মেয়াদে তিনি ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ডানপন্থী লিকুদ পার্টির নেতা নেতানিয়াহু ২০২৬ সালের নির্বাচনেও লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন