আবারও ইসরায়েলের নিরাপত্তায় জোর যুক্তরাষ্ট্রের

ইসরায়েলের দখল করা ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড নিয়ে আজ বুধবার তৃতীয় দিনের শুনানিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের বিচারকেরা। দ্য হেগ, নেদারল্যান্ডস, ২১ ফেব্রুয়ারিছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) শুনানিতে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ফিলিস্তিনের দখল করা ভূখণ্ড ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ইসরায়েলের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

আজ বুধবার শুনানিতে বেশির ভাগ দেশের প্রতিনিধিরা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারত্ব অবসানের দাবি জানালেও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আদালতে যুক্তি তুলে ধরে।

ইসরায়েলের দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড নিয়ে আইসিজেতে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো শুনানি হয়েছে। গতকালের শুনানিতে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ ১০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

শুনানিতে অংশ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আইন উপদেষ্টা রিচার্ড ভিসেক বলেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে সরে যেতে দেশটিকে আইনিভাবে সরে যেতে বাধ্য করা উচিত হবে না।

গত ৭৫ বছর বিভিন্ন ফোরামে যুক্তরাষ্ট্রের বাধা, ভেটো ও তাদের ক্ষমতার দাপটের মুখে পড়তে হয়েছে ফিলিস্তিনকে।
রিয়াদ আল–মালিকি, ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রিচার্ড ভিসেক বলেন, আদালতের এই সিদ্ধান্তে আসা উচিত হবে না যে দখল করা ভূখণ্ড থেকে অবিলম্বে ও শর্তহীনভাবে ইসরায়েলকে সরে যেতে হবে। এসব ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের সরে যেতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ইসরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দেশটির প্রতিনিধির এমন বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল–মালিকি বলেন, ‘আমি আরও বেশি কিছু আশা করেছিলাম; কিন্ত নতুন কিছু শুনতে পেলাম না।’

আল-মালিকি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর ধরে বলে আসছে যে আদালতে নয়, অন্য কোনো ফোরামে ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কিন্ত গত ৭৫ বছর অন্য ফোরামে চেষ্টা চালাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাধা, ভেটো ও তাদের ক্ষমতার দাপটের মুখে পড়তে হয়েছে ফিলিস্তিনকে। কোথাও কিছু না হওয়ার কারণে ফিলিস্তিন দ্বারস্থ হয়েছে আইসিজের।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আহ্বানে দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নির্দেশনা ও মতামত দিতে এ শুনানি চলছে। গত সোমবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে শুরু হওয়া এ শুনানিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে অর্ধশতাধিক দেশ ও তিনটি সংস্থা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। এর সঙ্গে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার অভিযোগে আইসিজেতে করা দক্ষিণ আফ্রিকার মামলার যোগসূত্র নেই।

কিছু দেশের প্রশ্রয়ে দায়মুক্ত ইসরায়েল

আজকের শুনানিতে রাশিয়ার পক্ষে অংশ নেন নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ভ্লাদিমির তারাব্রিন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের দখলদারত্ব যে বেআইনি সে বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদও একমত হয়েছে। অব্যাহত এই ইসরায়েলি দখলদারত্ব ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের পথে বাধা।

ভ্লাদিমির তারাব্রিন বলেন, রাশিয়া মনে করে ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ ক্ষেত্রে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরুর পরিস্থিতি যাতে তৈরি হয়, সেই নির্দেশনা দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে রাশিয়া।

ফ্রান্সের প্রতিনিধি দিয়েগো কোলা বলেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন দেশ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার একমাত্র সমাধান হলো পৃথক রাষ্ট্র গঠন। এ লক্ষ্যে দুই পক্ষের মধ্যে আবারও শান্তি আলোচনা শুরুর আহ্বান জানাচ্ছে ফ্রান্স।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আইন উপদেষ্টা রিচার্ড ভিসেক। দ্য হেগ, নেদারল্যান্ডস, ২১ ফেব্রুয়ারি
ছবি: রয়টার্স

মিসরের প্রতিনিধি হিসেবে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন উপদেষ্টা জেসমিন মুসা বলেন, ইসরায়েল দিনের পর দিন যে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে চলেছে, তা ফিলিস্তিনিদের নিজের ভূখণ্ড থেকে উৎখাত করার এক বড় পরিকল্পনার অংশ। সরল চোখেও বোঝা যায় এটা অবৈধ ও বেআইনি। এই দখলদারত্ব যুগের পর যুগ চলতে পারে না।

জেসমিন মুসা বলেন, এটা দুঃখজনক যে কিছু দেশ চায় না আদালত তার আইনি অবস্থান থেকে এ বিষয়ে মতামত দিক। আন্তর্জাতিক বিচার ও আইনের শাসনের ক্ষেত্রে এসব দেশ কতটা শ্রদ্ধাশীল এতে করে সেই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত লানা নুসেইবা। তিনি বলেন, দখলকৃত ভূখণ্ডে অবৈধভাবে গড়ে তোলা বসতি অবশ্যই ভেঙে ফেলতে হবে ইসরায়েলকে। আর অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা যে সহিংসতা চালাচ্ছে, তা বন্ধ করতে হবে।

আরও পড়ুন

কিউবার পক্ষে দেশটির কূটনীতিক আনায়ানসি রদ্রিগেজ আদালতকে বলেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান নিপীড়ন থামানোর পরিবর্তে কিছু দেশ এ অপরাধে ইসরায়েলকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করলেও ইসরায়েলকে কোনো জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। একটি জাতিকে এভাবে পুরোপুরি নির্মূল করে দেওয়ার আগে এই আদালত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নিতে হবে।

আজকের শুনানিতে গাম্বিয়া, কলম্বিয়া, গায়ানা ও হাঙ্গেরির প্রতিনিধিরা নিজ নিজ দেশের পক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন। কাল বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনের শুনানিতে অংশ নেবেন চীন, ইরান, ইরাক, জাপান, মালয়েশিয়াসহ ১১ দেশের প্রতিনিধিরা।

আরও পড়ুন