সাদ্দামের ফাঁসি কার্যকরের পর ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির কাছে মরদেহ ফেলে রাখা হয়

ইরাকের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর তাঁর মরদেহ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের কাছে ফেলে রাখা হয়েছিল। আরবি গণমাধ্যম আশার্ক আল-আওসাতকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করেছেন ইরাকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল-খাদিমি।

গত রোববার দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে আল–খাদিমি বলেন, ২০০৬ সালে রাজধানী বাগদাদে সাদ্দাম হোসেনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরপর মরদেহটি তাঁর বাসভবন ও প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকির বাসভবনের মাঝখানে ফেলে রাখা হয়েছিল। তাঁদের বাসভবন দুটি বাগদাদের সুরক্ষিত ‘গ্রিন জোন’ এলাকায় অবস্থিত।

২০২০ সালের মে থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ইরাকের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আল-খাদিমি। এর আগে তিনি ইরাকের গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের পরিচালক ছিলেন। সাদ্দাম সরকারের বিরোধী হিসেবেও পরিচিতি ছিল তাঁর।

আল–খাদিমির ভাষ্যমতে, সাদ্দামের মরদেহ এভাবে ফেলে রাখার বিষয়টি একেবারেই সমর্থন করেননি তিনি। সে সময় মরদেহের পাশে একদল নিরাপত্তারক্ষীকে দেখতে পান। সাদ্দামের মরদেহের প্রতি সম্মান দেখাতে সেটি থেকে তাঁদের দূরে সরে যেতেও বলেন তিনি।  

সাদ্দাম হোসেনের জন্ম ইরানের আল–নাদা গোত্রে। সাক্ষাৎকারে আল–খাদিমি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আল-মালিকি নির্দেশ দিয়েছিলেন, সাদ্দামের মরদেহ যেন এই গোত্রের যেকোনো একজন নেতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী, মরদেহটি গ্রিন জোন এলাকায় যেখানে ফেলে রাখা হয়েছিল, সেখান থেকে পরে নিয়ে যাওয়া হয়।

এরপর সাদ্দামকে তিকরিত শহরে দাফন করা হয়েছিল বলে জানান ইরাকের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১২ সালের পর ইরাকের এই এলাকাটি সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দখলে চলে যায়। তখন কবর থেকে সাদ্দামের মরদেহ তুলে গোপন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তাঁর কবর কোথায়, তা কেউ জানে না।

আল-খাদিমির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আদালতে সাদ্দামের বিচার চলাকালে তাঁকে প্রথম দেখেছিলেন তিনি। এই বিচার ছিল ‘ইরাকের ইতিহাসে খুবই জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়’। এরপর সাদ্দামের মৃত্যুর পর তাঁকে দ্বিতীয় ও শেষবার দেখেছিলেন তিনি।

২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর অভিযানে সাদ্দাম সরকারের পতন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ছিল, সাদ্দামের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে। এ ছাড়া সন্ত্রাসী সংগঠন আল–কায়েদার সঙ্গেও সখ্য রয়েছে তাঁর। তবে এসব দাবি কখনোই প্রমাণ করতে পারেনি মার্কিন সরকার।

সাদ্দামের পতনের পর তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সে সময় সাদ্দামের মৃত্যু পরোয়ানা স্বাক্ষর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী আল–মালিকি। তিনি ২০০৬ সালের মে থেকে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইরাকের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তবে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানি নীতিগতভাবে সাদ্দামের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করেন।