গাজায় ইসরায়েলের হামলায় মৃত্যু ২৬ হাজার ছাড়াল

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের আদেশের জন্য আদালতের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। আদালতের আদেশের পর ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীরা পরস্পরকে আলিঙ্গন করেন। গতকাল নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরেছবি : রয়টার্স

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহত এই ফিলিস্তিনিদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। গতকাল শুক্রবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে গাজায় ১১২ দিন ধরে নির্বিচার হামলা চালিয়ে আসা ইসরায়েল মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আরও অস্ত্রসহায়তা চেয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানায়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ১৮৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩৭৭ জন। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ২৬ হাজার ৮৩-তে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ৬৪ হাজার ৪৮৭ জন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, বহু মানুষ এখনো বাড়িঘর ও বিভিন্ন স্থাপনার ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছেন। তাঁদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না উদ্ধারকারীরা।

ত্রাণ নিতে এসে নিহত ২০

গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খান ইউনিস ঘেরাও করে নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক নাগরিক আটকা পড়েছেন। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

গাজা নগরীর উপকণ্ঠের আরও উত্তরে ত্রাণের জন্য অপেক্ষমাণ লোকজনের ওপর গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ২০ জন নিহত ও ১৫০ জন আহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

আহত একজনের চাচা আবু আতা বাসাল বলেন, মানুষের হাতে কোনো খাবার নেই। তাঁরা খাবার ও আটার জন্য যাচ্ছিলেন। হঠাৎ কয়েকটি ট্যাংক এসে লোকজনের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। এতে অনেকের দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

উত্তর গাজার আল-শিফা হাসপাতালের মেঝেতে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন এএফপির একজন সাংবাদিক। এ ধরনের হামলা ‘ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিযোগ করেছে হামাস। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি বলেছে, ট্যাংকের গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

গাজা নগরীর উত্তরে এ হামলার আগের দিন খান ইউনিসে জাতিসংঘের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১৩ জন নিহত হন। জাতিসংঘ এ কথা জানিয়েছে। এ ঘটনার পর ‘আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে’ ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স। আর যুক্তরাষ্ট্র আশ্রয়কেন্দ্রে হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

এমন সময় গাজার বেসামরিক লোকজনের ওপর এ ধরনের নির্বিচার হামলার ঘটনা ঘটছে, যখন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) ওপর নজর বিশ্ববাসীর। গাজায় ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগে আইসিজেতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ মামলায় আরও কয়েকটি দেশ সমর্থন দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অস্ত্র চায় ইসরায়েল

গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে ইসরায়েলকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। পেন্টাগনের কাছ থেকে আরও যুদ্ধবিমান, হামলায় ব্যবহারের উপযোগী হেলিকপ্টার ও গোলাবারুদ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

এরই অংশ হিসেবে ওয়াশিংটন সফর সম্পন্ন করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইয়াল জামির। সফরকালে গাজা যুদ্ধের জন্য আরও গোলাবারুদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি কয়েক স্কোয়াড্রন সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান ও হামলায় ব্যবহার উপযোগী হেলিকপ্টার কেনার বিষয়ে আলোচনা করেছেন তিনি।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম ২৫টি এফ-৩৫আই যুদ্ধবিমানের নতুন এক স্কোয়াড্রন, ২৫টি এফ-১৫আইএ যুদ্ধবিমানের নতুন এক স্কোয়াড্রন এবং ১২টি অ্যাপাচি হেলিকপ্টারের নতুন এক স্কোয়াড্রন কেনার পরিকল্পনা রয়েছে তেল আবিবের।

চ্যানেল-১২-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যেই এ অস্ত্র কেনার চূড়ান্ত চুক্তি সই হয়ে গেছে।