২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্রদের স্নায়ুচাপ আরও বাড়ল

শনিবার ভোররাতে ইরানে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান। ছবিটি প্রকাশ করেছে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)ছবি : দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলা হতে পারে—মধ্যপ্রাচ্যে এ কথা সবার জানা ছিল; কিন্তু কারও কারও ধারণা ছিল, এত শিগগির হয়তো হামলা হবে না। মধ্যেপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সরকারের ভাবনা ছিল আগামী ৫ নভেম্বরের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল অপেক্ষা করবে। কিন্তু গত শুক্রবার রাতেই ইরানের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা করেছে ইসরায়েল।

মধ্যপ্রাচ্য ঘিরে চলমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের উপসাগরীয় অঞ্চলের আরব মিত্রদের স্নায়ুচাপে পড়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ হলো ইসরায়েলের হামলার যথাযথ জবাব দেওয়ার কথা বলেছে ইরান। তেহরানের পক্ষ থেকে এ হামলার জবাব কীভাবে দেওয়া হবে তা  দেখার জন্য অপেক্ষা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো।

উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এসব ঘাঁটির অবস্থান পারস্য উপসাগরের উভয় পাশেই। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর বাহরাইন বন্দরের কাছে কৌশলগত অবস্থানে মোতায়েন রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, ইরানে হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে তারা যোগ দেয়নি। তবে ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে থাড নামের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি ১০০ জনের বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ইরানের সম্ভাব্য পাল্টা হামলা থেকে ইসরায়েলকে সুরক্ষা দিতে যুক্তরাষ্ট্রে এ ব্যবস্থা করেছে।

এদিকে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো এ সংঘাত থেকে দূরে থাকতে চায়। তারা ইরানকে সম্প্রতি জানিয়েছে, তাদের আকাশপথ ব্যবহার করে ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলা চালাতে অনুমতি দেবে না।

এ ধরনের সংঘাতে জড়ানোর স্মৃতি এখনো সৌদি আরবের তরতাজা। ২০১৯ সালে ইরাকে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী  সৌদি আরবের জ্বালানি শোধনাগারগুলোতে ড্রোন হামলা এদিকে ইরানের হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে এর নিন্দা জানানো হয়েছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, মিসর ও ওমান এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এ ছাড়া উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়েও সতর্ক করেছে দেশগুলো। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আত্মরক্ষার জন্য এ হামলা করেছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পাল্টা হামলা না করতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

হামলার সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নির্বাচনী প্রচারে টেক্সাসে ছিলেন। বিবিসি বলছে, ইরানে ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে তাঁদের ব্রিফ করা হয়েছে। বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএসকে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইরানের ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার বিষয়টি জানেন। এ–সংক্রান্ত ঘটনাবলিতে তিনি গভীরভাবে নজর রাখছেন।

ইসরায়েলের হামলায় নতুন উদ্বেগ

আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের ভেতর ইসরায়েলের হামলা নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া হামলার পর যুদ্ধ আরও বেড়ে যাওয়ার উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো আবাস আসলানি বলেন, ইরানে ইসরায়েলের হামলা নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। কারণ, এই প্রথমবারের মতো ইরানে সরাসরি হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসরায়েল। যদিও ইরান হামলার প্রভাবকে ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। ইসরায়েল তার অর্জনকে অতিরঞ্জিত করে বলছে।

তেহরান থেকে আবাস আসলানি আরও বলেন, এটা ইঙ্গিত করছে যে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে (মধ্যপ্রাচ্যে) আরেকটি সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়াতে ইসরায়েলকে বিরত থাকতে বলছে। তেহরানের প্রাথমিক মূল্যায়ন ও প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে, ভয়াবহ ও গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। যেমন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো হামলা। ইরান যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে।

পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে ইরানকে পাল্টা হামলার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তবে আসলানি বলেছেন, ইরানের কাছ থেকে একধরনের প্রতিক্রিয়া আসতেই পারে।