গাজায় পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কটাক্ষ, কড়া জবাব নেতানিয়াহুর

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টফাইল ছবি: রয়টার্স

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধপরবর্তী পরিকল্পনা প্রশ্নে ইসরায়েল সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে হতাশ দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। বুধবার এ নিয়ে তিনি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের প্রতি খোলামেলা হতাশা জানিয়েছেন। এর কড়া জবাব দিয়েছেন নেতানিয়াহু।

এদিকে গতকাল বুধবার নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, রাফায় কোনো মানবিক বিপর্যয় নেই। নেতানিয়াহু এমন সময় কথাটি বললেন যখন রাফায় সামরিক অভিযান জোরদার করা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলকে সতর্ক করে যাচ্ছে। এএফপির খবরে এ তথ্য জানা যায়।

বিবিসির খবরে জানা যায়, গ্যালান্ট চান, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যেন প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন যে গাজায় সামরিক শাসন জারির কোনো পরিকল্পনা তাঁর দেশের নেই।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, গত অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু হওয়ার পরপরই তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মন্ত্রিপরিষদে একটি যুদ্ধ পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিল। সেখানে শত্রুভাবাপন্ন নয় এমন একটি একটি স্থানীয় বিকল্প ফিলিস্তিনি শাসকগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে তাতে সাড়া পাওয়া যায়নি।

‘অক্টোবর থেকে আমি মন্ত্রিপরিষদে এ নিয়ে অনবরত বলে যাচ্ছি। কোনো জবাব পাইনি।’ বলেন গ্যালান্ট।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কঠোর ভাষায় জবাব দিয়েছেন। বলেছেন, তিনি ‘ফাতাস্থানের সঙ্গে হামাস্তানের বিনিময়’ করতে প্রস্তুত নন। ফিলিস্তিনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন হামাস ও ফাতাহকে ইঙ্গিত করেছেন তিনি।

নেতানিয়াহু আরও সতর্ক করেছেন, সিদ্ধান্তহীনতার কারণে ভবিষ্যতে গাজার প্রশ্নে হাতে শুধু দুটি উপায় থাকবে; হামাসের শাসন প্রতিষ্ঠা নয়তো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর শাসন প্রতিষ্ঠা।

এর আগে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, গাজা উপত্যকায় যত দিন হামাস টিকে আছে, তত দিন সেখানকার ভবিষ্যৎ সরকার নিয়ে আলোচনা করাটা কেবলই ‘ফাঁকা বুলি’।

গ্যালান্ট মনে করেন, গাজায় হামাসের শাসন শেষ হওয়ার পর ফিলিস্তিনের এমন কোনো কর্তৃপক্ষকে গাজার নিয়ন্ত্রণে বসাতে হবে, যারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবে। তিনি বলেছেন, এসব প্রস্তাব নিয়ে কখনো আলোচনা হয়নি। এর বিকল্প হিসেবে কোনো কিছু উপস্থাপনও করা হয়নি।

গ্যালান্টের মতে, গাজায় ইসরায়েলি সামরিক শাসন কিংবা বেসামরিক শাসন কোনোটাই প্রতিষ্ঠা করা ঠিক হবে না। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা তৈরিতে ব্যর্থতা ইসরায়েলকে ‘বিপদের দিকে’ ঠেলে দিচ্ছে।

গ্যালান্ট বলেন, ‘আমি আবারও বলছি গাজায় ইসরায়েলি সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমি রাজি হব না। গাজায় বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করাটাও ইসরায়েয়েলে উচিত হবে না। আমি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। তাঁকে ঘোষণা করতে হবে যে ইসরায়েল গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ বেসামরিকদের হাতে দেবে না, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করবে না এবং গাজা উপত্যকায় হামাসের বিকল্প শাসকের বিষয়টি অবিলম্বে উত্থাপন করতে হবে।’

নেতানিয়াহুর সঙ্গে অতীতে দ্বিমত পোষণকারী ইসরায়েলের যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রিপরিষদের আরেক সদস্য বেনি গান্টজও অবশ্য গ্যালান্টের বক্তব্যের সঙ্গে একমত। গান্টজ বলেন, ‘গ্যালান্ট সত্য কথা বলেছেন।

যেকোনো ভাবেই হোক দেশের স্বার্থে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্বটুকু দেশের নেতারই।’

এদিকে এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার নেতানিয়াহু দাবি করেছেন রাফাতে কোনো মানবিক বিপর্যয় নেই। নেতানিয়াহু এমন সময় কথাটি বললেন যখন রাফায় সামরিক অভিযান জোরদার করা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলকে সতর্ক করে যাচ্ছে।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমাদের দায়িত্বশীল প্রচেষ্টার ফল পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত রাফার যুদ্ধাঞ্চলগুলো থেকে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যে মানবিক বিপর্যয়ের কথা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবে ঘটেনি এবং ঘটবেও না।’

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনডব্লিউআরএ) প্রতিবেদনে বলা হয়, রাফায় সামরিক অভিযান জোরদার হওয়ার পর ছয় লাখ মানুষ এলাকা ছেড়েছে।

হামাস বলেছে, গাজায় যুদ্ধপরবর্তী সরকার নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্যোগে তারা অংশ নেবে।